For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

আউটসোর্সিংয়ে মাধ্যমে রেলে লোকবল নিয়োগ

লোকসান হবে বছরে ২৫ কোটি টাকা, অনভিজ্ঞতায় হুমকির মুখে পড়বে রেল

Published : Monday, 26 December, 2022 at 6:26 PM Count : 445

রেলওয়ের নিয়োগকৃত প্রায় আট হাজার অস্থায়ী কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এতে করে ওই কর্মচারী ও তাদের পরিবারের মাঝে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। চাকরি হারানোর শঙ্কায় এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন এসব শ্রমিকরা।

যাদের মধ্যে কেউ পয়েন্টসম্যান, কেউ খালাসি, কেউ গেটকিপার, কেউ ওয়েম্যান, কেউ সিগন্যাল খালাসি, কেউ পোর্টার পদে কর্মরত আছেন। এসব কর্মচারীরা সর্বনিম্ন তিন থেকে শুরু করে কেউ কেউ ২০ বছর ধরে রেলওয়েতে অস্থায়ী ভাবে কর্মরত আছেন।

ফলে বছরের পর বছর চাকরি করে তারা এখন দক্ষ শ্রমিকে পরিণত হয়েছে। কিন্তু তাদেরকেই বাদ দিয়ে নতুন করে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ঠিকাদার নিযুক্ত করে লোকবল সরবরাহের পায়তারা করছে রেল মন্ত্রণালয়। আর এটি হলে পুরো রেল সেবা ও রেল যাত্রীদের জীবনই হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের খামখেয়ালিপনা সিদ্ধান্তের কারণে সে পথেই হাঁটতে যাচ্ছে রেল মন্ত্রণালয়।

এদিকে, আউটসোসিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ দেয়া হলে বছরে অন্তত ২৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে বলেও মনে করছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা। এমনিতেই লোকসানে ধুঁকছে রেল। এর ওপর দক্ষ জনবল বাদ দিয়ে আউটসোসিংয়ের মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ দিতে গিয়ে ব্যয় আরও বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধুমাত্র রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলেই রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার অস্থায়ী কর্মচারী। তাদের মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরের আওতায় রয়েছেন দুই হাজার ৫০৮ জন, সৈয়দপুর কারখানার আওতায় রয়েছেন ৫০০ জন, পাকশি বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশল দপ্তরের আওতায় আছেন ২০৩ জন, বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলের (সিএন্ডডব্লিউ) আওতায় রয়েছেন ২১৩ জন।

এর বাইরে সিভিল বিভাগের আওতায় রয়েছেন আরও প্রায় দেড় হাজার কর্মচারী। আর পূর্বাঞ্চলে রয়েছেন আরও প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মচারী। এসব কর্মচারীদের পেছনে প্রতি মাসে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয় হয় রেলওয়ের। কর্মচারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এ টাকা প্রদান করা হয়। সেই হিসেবে বছরে প্রায় ১৪৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়।

আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে এই আট হাজার লোকবল ঠিকাদারের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হলে সেখানে ব্যয় বাড়বে অন্তত ২০ ভাগ। ঠিকাদারের লাভ, ভ্যাট-ট্যাক্সসহ আনুসঙ্গিক খরচে যাবে সেই টাকা। এতে বছরে অন্তত ২৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে সরকারের।

রাজশাহীর অস্থায়ী কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিঠুন হোসেন বলেন, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে জনবল সরবরাহ করা হলে ঠিকাদাররা তাদের ইচ্ছেমতো জনবল নিয়োগ দেবেন। তারা যেসব জনবল নিয়োগ দেবেন, তাদের দিয়েই কাজ করাতে হবে রেলকে। এতে করে চরম হুমকির মুখে পড়বে পুরো রেল বিভাগ। বাড়বে দুর্ঘটনা। যাত্রীদের জীবনও পড়বে হুমকির মুখে। কারণ, নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মচারীরা রেলওয়ের সিগন্যাল বুঝবেন না, পয়েন্টসম্যানরা কাজ পারবেন না। এতে করেই ট্রেন দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের চাকরি স্থায়ীকরণসহ ছাটাই না করতে আন্দোলন চালিয়ে গেছি। কিন্তু সরকারের টনক নড়েনি। টনক নড়বে, তখন যখন রেল একের পর এক অদক্ষ জনবলের কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়বে। আবার অতিরিক্ত টাকাও ব্যয় হবে।

হাসান নামের আরেক কর্মচারী বলেন, আমি প্রায় তিন বছর ধরে কাজ করছি। পয়েন্টম্যান হিসেবে আমার কাজ শিখতেই লেগেছে প্রায় দুই বছর। এখন শুনছি অন্যদের মতো আমাকেও বাদ দেওয়া হবে। কিন্তু নতুন লোক এসে আমার এই কাজ কিভাবে করে দেবেন। তাকে তো শিখতেই অন্তত দুই বছর কাটাতে হবে। আবার চাকরি হারিয়ে আমি এখন সংসার চালাবো কিভাবে?

আরেক কর্মচারী নাজমুল হোসেন বলেন, রেলওয়ের প্রতিটি কাজই দক্ষতার সঙ্গে করতে হয়। সেখানে নতুন লোক এসে কি কাজ করবে? আবার ঠিকাদার তাদের পছন্দমতো লোক নিয়োগ দেবে। যাদের নিয়োগ দেবে, তাদের নিকট থেকে না কি এক-দুই লাখ টাকা করে নেবেন ঠিকাদারের লোকজন। আমরা এতো টাকা কোথায় পাব? আর এতো টাকা ঘুষ দিয়ে ৫২০ টাকা মজুরীর চাকরি করে লাভ কি হবে? সেই চাকরিরও তো কোন ভবিষ্যৎ নেই। সরকারি চাকরিবিধী মতে, তিন বছর অতিবাহিত হলে অস্থায়ী চাকরিজীবিদের স্থায়ীকরণ করা হয়, কিন্তু আমাদের স্থায়ীকরণ তো দূরের কথা এখন ছাঁটাই করা হচ্ছে কোন কারণ ছাড়াই।

রাজশাহী রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আক্তার আলী বলেন, রেল একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। এখানে অভিজ্ঞদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজে লাগানো হয়। এখন যারা অস্থায়ী কর্মচারী আছেন, তাদের সবাই সর্বনিন্ম তিন বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। অনেকের ১০-২০ বছরেরও অভিজ্ঞতা আছে রেলওয়ের কাজে। রেলওয়ে একটি কারিগরী প্রতিষ্ঠান। এখানে দক্ষতা না থাকলে কোন কর্মচারী কাজে অংশ নিতে পারে না। কিন্তু এসব কর্মচারীদের বাদ দিয়ে যখন আউটসোর্সিংয়ের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অদক্ষ লোকবল নিয়োগ দেবে, তখন হুমকীর মুখে পড়বে দেশের পুরো রেল সেবা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সুষ্ঠু ভাবে ট্রেন পরিচালনায় দায় হয়ে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী দেখা যাবে- আউটসোসিংয়ের কাজ পাওয়া ঠিকাদার লোকবল নিয়োগ করতে গিয়েও বাণিজ্য শুরু করবেন। তাতে যারা এখন কর্মরত আছেন, অনেকেই টাকার অভাবে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবেন না। এতে করে বাদ পড়বেন অনেকেই। আবার এ ঠিকাদার নিয়োগ দিতে গিয়েও বাণিজ্য শুরু করবেন। এতে দুর্নীতিও বাড়বে। কিন্তু এখন যেভাবে অস্থায়ী কর্মচারী আছেন, তাদের রেলওয়ে বেতন দিয়ে গেলে কোন ধরনের দুর্নীতির আর সুযোগ থাকবে না বা নেই।

জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসিম কুমার তালুকদার বলেন, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ দেয়া হলে ব্যয় বাড়বে অন্তত ১৫ ভাগ। এর বাইরেও নানা খরচ যুক্ত হবে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের কারণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেই পথেই হাঁটছেন। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।

-আরএইচ/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,