বড়দিনসহ টানা সরকারি ছুটিতে পর্যটকদের পদচারনায় মুখর
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। টানা তিনদিনের সরকারি ছুটিকে কাজে লাগিয়ে হাজার হাজার পর্যটক কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে এসেছেন। পর্যটকদের আনন্দ নিরাপদ করতে মাঠে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ বিভাগ।
পর্যটন পুলিশ, হোটল মোটেল ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানান, ২৩ ডিসেম্বর সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আগমন ঘটে বিভিন্ন ধর্ম ও পেশার ভ্রমণ পিপাসু মানুষের। পদ্মা সেতুর সুবিধা নিয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে মানুষ এখানে চলে এসেছেন। তারা জানান, কেউ কেউ সাঁতার কেটে, ঘোড়ায় চড়ে সময় কাটাচ্ছেন। আবার অনেকে সৈকতে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে নাচে গানে মেতে উঠেছেন, কেউবা খেলা করছেন সৈকতের বালু নিয়ে। সৈকতের বেঞ্চিতে বসে কেউ কেই উপভোগ করছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ দৃশ্য।
সাপ্তাহিক ছুটি ও বড় দিন সহ সরকারী তিন দিনের ছুটিতে পর্যটন নগরী কুয়াকাটায় আগমন ঘটেছে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের। এবার সমুদ্র সৈকতের জিরো পয়েন্টই নয় এখন পর্যটকদের সরব উপস্থিতি শুটকী পল্লী, লেম্বুর চর, তিন নদীর মোহনা, ঝাউবন, লাল কাঁকড়া, গঙ্গামতি, রাখাইন মার্কেট, রাখাইন তাঁত পল্লী, চর বিজয় ও কুয়াকাটার কুয়াসহ সকল পর্যটন স্পট গুলোতে। এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ, মার্কেটসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকল ব্যবসায়ীরা। পর্যটকের এমন ভীড়ে কুয়াকাটার হোটেল ও রিসোর্টে বুকিং ছিলো শতভাগ। আর এ কারনে প্রানচাঞ্চল্য হয়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। হাসি ফুটেছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের মুখে।
সৈকত সংলগ্ন ঝিনুক ব্যবসায়ী শিমুল (৪০) জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই পর্যটকের আনাগোনা বেড়েছে। তবে আজ পর্যটকে পরিপূর্ন কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। তাদের বিকিকিনি আগের তুলনায় অনেকগুন বেড়েছে বলে দাবী তার।
সৈকতের বিক্রেতা ইদ্রিস (৪৫) জানান, বড় দিনের ছুটিতে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেশি। বিক্রিও করেছি অনেক ভালো। এভাবে থাকলে আমরা পিছনের লোকসান পুষিয়ে উঠতে পারবো।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক দম্পতি সিমা আক্তার (২৮) ও ফারুক (৩৬) জানান, কুয়াকাটার প্রকৃতির সঙ্গে আমরা মিশে গেছি। বেশ আনন্দ উপভোগ করছি। তবে হোটেলের ভাড়াটা একটু বেশি মনে হয়েছে। যে হোটেলের রুম অন্য সময় আড়াই হাজারে পাওয়া যায়, সেই রুম এখন চার হাজার টাকায় নিতে হয়েছে।
ভোলা থেকে আসা পর্যটক নিলয় (২৪) জানান, তারা ১০ বন্ধু মিলে কুয়াকাটায় এসেছেন। সৈকতে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে আনন্দ করেছেন। সময়টা বেশ ভালই কাটিয়েছেন। কিন্তু খাবারের দাম এখানে বেশী বলে অভিযোগ তার।
পটুয়াখালী জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ মজিবুর রহমান জানান, আগে বুকিং না দেয়ায় কুয়াকাটায় গিয়ে কোন হোটেলে রুম পাননি তিনি। পরে স্থানীয় একটি বাড়িতে থেকেছেন তিনিসহ তার সফর সঙ্গীরা।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওয়ানার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব শরীফ জানান, বড়দিনসহ সরকারি তিন দিনের ছুটিতে কুয়াকাটায় লক্ষাধিক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। হোটেলে সিট না পেয়ে অনেক পর্যটককে গাড়ীতে, সৈকতে রাত কাটাতে হয়েছে। থার্টি ফাস্ট পর্যন্ত পর্যটকের এমন ভীড় থাকবে বলেও আশা করেন তিনি।
কুয়াকাটা ট্যুরিষ্ট পুলিশ জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আযাদ জানান, বড় দিন সহ সরকারী ৩ দিনের ছুটি উপলক্ষে কুয়াকাটায় ব্যাপক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় বিভিন্ন পর্যটন স্পটে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যাতে কোন পর্যটক কুয়াকাটায় বেড়াতে এসে হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে ট্যুরিষ্ট পুলিশ সজাগ রয়েছে। ট্যুরিষ্ট পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশ ও নৌ-পুলিশও পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
পিএম/এসআর