For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

ফুটবলের কল্যাণে বাংলাদেশ-আর্জেন্টিনার সম্পর্কে গভীরতা

Published : Sunday, 25 December, 2022 at 9:50 AM Count : 347

এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সমর্থকদের ভালবাসা হৃদয় ছুঁয়েছে আর্জেন্টিনার মানুষের। খেলার ভালবাসা এখন রূপ নিচ্ছে নতুন কূটনৈতিক সম্পর্কে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন বার্তার জবাব দিয়েছেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট। আগামী মার্চে বাংলাদেশে সফরে আসতে পারেন আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এমনকি বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার দূতাবাস খোলার বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে। দুই দেশের সম্পর্ক এখন গভীর হচ্ছে। এতে বাংলাদেশ কতটা লাভবান হবে? বাংলাদেশের ফুটবলেরই বা কতটা কাজে আসবে এই সম্পর্ক?

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে সবকিছু চূড়ান্ত না হলে এখনই এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া কঠিন। তবে দুই দেশের  বাণিজ্যে এর প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি পর্যটন, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও এই সম্পর্ককে কাজে লাগানো যেতে পারে।

বাণিজ্যে সম্ভাবনা
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে আর্জেন্টিনায় ৬৮ লাখ ৫৪ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তবে বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয় তার ৮৮ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক। অন্যদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরে আর্জেন্টিনা ৯০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশে। মূলত সয়াবিন তেল, ভুট্টা ও তুলা বেশি আমদানি করে বাংলাদেশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আইসিটি পণ্য আর ই কমার্সের জন্যও আর্জেন্টিনা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে পারে। ইউরেনিয়ামসহ নানা ধরনের খনিজ আছে দেশটিতে যা বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। গত জুলাইতে ঢাকায় আসা আর্জেন্টাইন সরকারি প্রতিনিধি দলটি তাদের দেশ থেকে তুলা, গুঁড়ো দুধ ও রসুন আমদানির প্রস্তাব দিয়েছিলো বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের কাছে। আবার বাংলাদেশ থেকে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ঔষধ, প্লাস্টিক পণ্য, সিরামিক ও তৈরি পোশাক আমদানির জন্য আর্জেন্টিনার প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে আর্জেন্টিনা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আর্জেন্টিনা তো আর্থিকভাবে অতটা স্বচ্ছল না। তাদের মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। তবে হ্যাঁ, আমাদের দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানির সম্পর্ক আছে। সেটা বাড়ানো যেতে পারে। সেটাও যে খুব বেশি কিছু হবে আমার সেটা মনে হয় না। সব মিলিয়ে কারও সঙ্গে সম্পর্ক হলে সেটা তো খারাপ না।’

ফুটবলের উন্নতিতে কী কাজে আসবে?
আর্জেন্টিনা ও বাংলাদেশের ফুটবলের ব্যবধান যোজন যোজন। একটি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দল অন্যটি র্যাং কিংয়ে শেষের দিকে। আর্জেন্টিনার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন কি ফুটবলে কাজে লাগানো যায়? জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘পুরো বিষয়টি তো এখন মিডিয়ায় আলোচনা হচ্ছে। মূলত আলোচনার টেবিলে না বসলে কোনো কিছুই পরিস্কার করে বলা যাবে না। তবে এটুকু বলা যায়, ওখানে তো ক্লাবগুলোর উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। তারা স্বাধীন। সরকার চাইলে কী হবে জানি না, তবে কোনো ক্লাব যদি চায় আমাদের কোন ক্লাবের সঙ্গে কাজ করতে পারে। আসলে কী হবে এখনই বলা যাচ্ছে না।’

১৯৮৬ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল মাদরেকা কাপ। সেখানে আর্জেন্টিনা ফুটবল দল বাংলাদেশ ফুটবল দলের মুখোমুখি হয়েছিল। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কয়েকজন খেলোয়াড় ওই ম্যাচে অংশ নিয়েছিলেন। ম্যাচটিতে ৫-২ গোলে হেরে যায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পক্ষে গোল দুইটি করেছিলেন আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু ও শেখ মোহাম্মদ আসলাম। আর্জেন্টিনার সঙ্গে সম্পর্কে ফুটবলের কতটা লাভ হবে জানতে চাইলে শেখ মোহাম্মদ আসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা যদি ওদের সঙ্গে সম্পর্কটা করতে পারি সেটা ফুটবলে কাজে লাগবে। ওদের কোন একাডেমিতে যদি বাংলাদেশের তরুণ ফুটবলাদের পাঠানো যায় বা একাডেমি থেকে প্রশিক্ষক বাংলাদেশে আসেন সেটা অবশ্যই বাংলাদেশের কাজে আসবে। পাশাপাশি তরুণ ফুটবলার হান্ট প্রক্রিয়ায়ও আর্জেন্টিনার প্রশিক্ষকদের আমরা চাইলে কাজে লাগাতে পারি।’

ঢাকায় চালু হবে আর্জেন্টিনার দূতাবাস
আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও উপাসনা মন্ত্রী সান্তিয়াগো আন্দ্রেস ক্যাফিয়েরো আগামী মার্চে বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস খোলার সিদ্ধান্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের সময় নেওয়া হবে। দুই দেশের মধ্যে একটি ভালো সম্পর্ক আছে। আমি আশা করি, এই সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হবে।’ অন্যদিকে, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক চিঠিতেও জানিয়েছেন তার দেশ আগামী বছর পুনরায় ঢাকায় কূটনৈতিক মিশন স্থাপনে কাজ করছে।

স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে দূতাবাস খুলেছিল আর্জেন্টিনা। ১৯৭৮ সালে সেটি গুটিয়ে নেয়ার পর দেশটি ঢাকায় মিশন খোলার আর উদ্যোগ নেয়নি।

অন্যদিকে ব্রাজিলে বাংলাদেশের দূতাবাস থাকলেও আর্জেন্টিনায় কোনো দূতাবাস খোলেনি বাংলাদেশ। এবারের বিশ্বকাপের সময় আর্জেন্টিনাকে ঘিরে বাংলাদেশের উন্মাদনার খবর ব্যাপক প্রচার পেয়েছে দেশটিতে। এর মধ্যেই দেশটি বাংলাদেশে দূতাবাস খোলার একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছে যাকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

দুই দেশের সরকার প্রধানের শুভেচ্ছা বিনিময়
২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করায় আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১৯ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন বার্তা পাঠান তিনি। বার্তায় শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ এবং আমার পক্ষ থেকে, আর্জেন্টিনার ফুটবলের দুর্দান্ত জয়ে আপনাকে ও আর্জেন্টিনা প্রজাতন্ত্রের বন্ধুত্বপূর্ণ জনগণকে এবং ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপজয়ী দলকে আন্তরিক অভিনন্দন। এ অভিনন্দন জানাতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আপনার জাতীয় ফুটবল দলের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নশীপ জয়ের স্বতঃস্ফূর্ত উদযাপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ তাদের প্রশংসা ও ভালোবাসার পরিচয় দিয়েছে।’

এদিকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন পাওয়ার পর বাংলাদেশের জনগণকে এক টুইট বার্তায় ধন্যবাদ জানান আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ। নিজ দেশ ও বাংলাদেশের পতাকা, ভালোবাসা, হাত মেলানোর চিহ্নসহ টুইট করেন তিনি। মেসিদের প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘ধন্যবাদ শেখ হাসিনা এবং পুরো বাংলাদেশের জনগণকে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা যে বন্ধন এবং পারস্পরিক স্নেহ দেখেছি, তা বর্ণনাতীত। আজ দুই দেশের পতাকা এখানেও (আর্জেন্টিনায়) উড়ছে। আসুন এ বন্ধন আরও গভীর ও দৃঢ় করি।’

বাংলাদেশ এবং আর্জেন্টিনার মধ্যে ভৌগলিক দূরত্ব ১৭ হাজার ৫০ কিলোমিটারের। কিন্তু ফুটবলের কল্যাণে সেই দূরত্ব অনেকটাই কমে এসেছে। বাংলাদেশের সমর্থকরা যেভাবে আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করছে, একইভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সমর্থনে ফেসবুকে গ্রুপ খুলেছে আর্জেন্টাইনরা। তারাও উদযাপন করছেন বাংলাদেশের জয়। বাংলাদেশের খেলার সময় কোন গানগুলো বাজানো হয় বা শোনা হয়, আর্জেন্টাইন সমর্থকরা সেসব জানতে চাচ্ছেন। অনেক আর্জেন্টাইন নিজের হাতেই বাংলাদেশের পতাকার ট্যাটু এঁকেছেন। আর সেই ট্যাটু দেখিয়ে মেসির জন্ম নেয়া বাড়ির সামনে গিয়ে ছবিও তুলেছেন। আর্জেন্টিনার অনেক বাড়িতে এখন উড়ে বাংলাদেশের পতাকা।

১৯৮৬ সাল থেকেই বাংলাদেশের ফুটবলের সমর্থকরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল দলকে সমর্থন করে আসছে। এরপর যতগুলো বিশ্বকাপ হয়েছে সবগুলোতেই দেশের সমর্থকরা এই দুই দলকে সমর্থন করে গেছেন। এবারের উন্মাদনার মতো অন্য বিশ্বকাপগুলোতেও উন্মাদনা ছিল। তবে এবারের বিশ্বকাপ খেলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি জায়গায় বড় পর্দায় দেখার আয়োজন করে মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নগদ। সেখানে হাজার হাজার সমর্থক এক সঙ্গে খেলা দেখেছেন। 

নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা মহসিন হলের মাঠে, টিএসসি, ডাচের পেছনেসহ চার জায়গায় জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখার ব্যবস্থা করি। শিক্ষার্থীরা সবাই একসঙ্গে খেলা দেখার সুযোগ পাওয়ায় সমর্থনের বিষয়টি সামনে এসেছে। এতদিন একসঙ্গে এত সমর্থককে দেখা যায়নি। ফলে বিষয়টি বিশ্ববাসীর নজরে আসে। আমাদের এই আয়োজন যে এতদূর যাবে আমাদেরও ধারণা ছিল না।’  সূত্র: ডয়েচে ভেলে।

এনএন

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,