নদীতে যত্রতত্র ড্রেজিং, হুমকির মুখে ইলিশের প্রজনন
Published : Wednesday, 12 October, 2022 at 10:18 PM Count : 315
পটুয়াখালীর দশমিনায় তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরঙ্গ নদীর বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে ইলিশের অভয়াশ্রম ও মা ইলিশের প্রজননস্থল। এসব নদীতে যত্রতত্র ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করায় ইলিশের অবাধ বিচরণ ব্যাহত হওয়াসহ নষ্ট হচ্ছে মা ইলিশের প্রজনন পরিবেশ। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরঙ্গ নদীর বেশ কিছু স্থানে ১৫-২০টি ড্রেজার ও ৫০-৬০টি বাল্কহেড দিয়ে চলছে অবাধে বালু উত্তোলন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ড্রেজারের প্রপেলারের আঘাতে নির্গত পোড়া মবিল ও তেলের কারণে মাছের প্রধান প্রাকৃতিক খাদ্য নদীর প্লাংটন আশংকাজনক হারে কমে যায়। এছাড়া বালু উত্তোলনে নদী দূষণসহ নদীর গঠন প্রক্রিয়া পাল্টে যাওয়ার ফলে বাসস্থানের বাস্তুতন্ত্রও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণিকূলের এ ধরনের পরিবর্তনের ফলে তাদের আবাসস্থল যেমন ধ্বংস হচ্ছে, তেমনি ইলিশসহ অন্যান্য মাছের খাদ্যের উৎস্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে মাছের বিচরণ ও প্রজনন পাল্টে যাওয়াসহ নদীতে ইলিশের উৎপাদন ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।
উপজেলা সদরের চরহোসনাবাদ এলাকার বাসিন্দা সাফায়েত হোসেন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে লিখেছেন, 'বালুমহলের নির্দিষ্ট সীমানা অতিক্রম করে তেঁতুলিয়া নদীর মোহনায় প্রতিদিন যেভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে তাতে নদীর প্রবেশ মুখের নিচের মাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ড্রেজার ও বাল্কহেড মেশিনের নির্গত ডিজেলে মা ইলিশের মারাত্মক ক্ষতি হবে। প্রজনন মৌসুমে সাগর থেকে ডিম দিতে আসা ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ প্রবেশ পথে বাঁধাগ্রস্ত হবে। ডিম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরঙ্গ নদীর ইলিশ সম্পদ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন নদীর মোহনাসহ যত্রতত্র ড্রেজিং বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।'
ফেসবুকের ওই লেখায় একমত পোষণ করে মন্তব্য করেছেন উপজেলার লিওন, মিরাজ, তরিকুল, ফিরোজ আলমসহ অনেকেই।
উপজেলার রণগোপালদী ইউনিয়নের পাতারচর গ্রামের জেলে জামাল হাওলাদার বলেন, 'নদীতে যত্রতত্র ড্রেজার শুধু মাছেরই ক্ষতি করে না। ডিমেরও ক্ষতি হয়।'
একই কথা বলেন ওই গ্রামের আরেক জেলে বেল্লাল হাওলাদার।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. সাজেদুল হক মুঠোফোনে অবজারভারকে বলেন, 'শুধু নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনই নয় সব সময়ই বিশেষ করে ড্রেজার, বাল্কহেড নদীতে মাছের অবাধ বিচরণে সরাসরি প্রভাব ফেলে। এতে পানি ঘোলা হয়ে যায়। পানির ঘোলাত্ব বেড়ে গেলে পানিতে অক্সিজেন কমে যায়। আর এতে ডিমগুলো জীবিত থাকে না। তাছাড়া মাছের প্রধান প্রাকৃতিক খাদ্য নদীর প্লাংটন অনেক কমে যায়।'
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম তালুকদার মুঠোফোনে বলেন, 'ড্রেজারের ব্যাপারে আমাদের কোন নীতিমালা নেই।'
দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল অবজারভারকে বলেন, 'এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।'
-এসটি/এমএ