নেপালের কাছে ৩-০ গোলে হার জামালদের
Published : Tuesday, 27 September, 2022 at 10:54 PM Count : 222
মাত্র কদিন আগেই নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরেছে সাবিনা-সানজিদারা। এবার সেই নেপালের পুরুষ দলের বিপক্ষে পেরে উঠল না জামাল ভূঁইয়ার বাংলাদেশ। কাঠমুন্ডুর রশরথ ফুটবল স্টেডিয়ামে নেপালের কাছে ৩-১ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ।
স্কোরলাইন একই আছে, তবে আজ আর বাংলাদেশ হাসতে পারছে না। মেয়েরা সেদিন সাফের ফাইনালে নেপালকে ৩-১ হারিয়েছিলেন, আজ প্রীতি ম্যাচে ছেলেদের দল নেপালের কাছে হেরেছে ৩-১ গোলে। সর্বনাশ যা প্রথম ৪৫ মিনিটেই হয়ে গেছে বাংলাদেশের, ৩৮ মিনিটেই যে গোল তিনটি করে ফেলেছে নেপাল! তিন গোলই নেপালের ফরোয়ার্ড অঞ্জন বিষ্টার! এর মধ্যে দুই গোলে ফ্রি-কিক থেকে ভেসে আসা ক্রস ঠেকাতে ব্যর্থ বাংলাদেশের রক্ষণ।
৫৫ মিনিটে সাজ্জাদ হোসেনের গোলে বাংলাদেশ ফিরে আসার সম্ভাবনা জাগিয়েছে বটে, কিন্তু ওই সম্ভাবনা জাগানোতেই সার!
কোথায় বাংলাদেশ ম্যাচটা হেরে গেছে? কোচ হাভিয়ের কাবরেরার পরীক্ষা-নিরীক্ষাই যেন বুমেরাং হয়ে এসেছে। কম্বোডিয়ার বিপক্ষে জয়ের ম্যাচের একাদশ থেকে ডিফেন্ডার তারিক কাজী, মিডফিল্ডার আতিকুর রহমান ফাহাদদের বাদ দিয়ে অন্যদের বাজিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন – প্রীতি ম্যাচে তা-ই করার কথা, কিন্তু সেটির ফল এমন হবে তা কে ভাবতে পেরেছিলেন?
কাবরেরার কৌশলের কারণেই হোক বা বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সেটি ঠিকমতো পড়তে না পারা, দ্বিতীয়ার্ধে ইব্রাহিম-ফাহিমরা নামার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের লেফট উইং বলে কিছু ছিল না। ‘ডানপন্থী’ কৌশল যাকে ভর করে গড়ে ওঠার কথা, সেই রাইট উইঙ্গার রাকিব হোসেনই যা বাংলাদেশের হয়ে কিছুটা লড়েছেন।
তবে কৌশলের খেলায় বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে পড়েছে মাঝমাঠে। নেপাল মূলত ৫ মিডফিল্ডারকে নিয়ে নেমেছে, বাংলাদেশ আক্রমণে গেলেই মাঝবৃত্ত থেকে ৪ ডিফেন্ডারের সামনে ৫ মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুই ব্যুহ সাজিয়েছে। মাঝমাঠের ওই ব্যুহ ভেদ করা আর বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ যেভাবে মাঝমাঠে বারবার বল হারিয়েছে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গলেও সেভাবে কিছু হারিয়ে যায় কি না সন্দেহ!
আর বাংলাদেশের রক্ষণ! হায় রক্ষণ! ৩৮ মিনিটে নেপাল তিনটি গোল করেছে, তিনটিতেই রক্ষণের দায়। ১৮ মিনিটে প্রথম গোল, বক্সের বাঁ দিক থেকে নেপালের ‘নাম্বার টেন’ বিমলের ক্রসটা অসাধারণ ছিল ঠিকই, তবে দূরের পোস্টে তিন নেপালি আক্রমণকারীর সামনে বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা যেন ভড়কেই গেছেন! ছয়গজি বক্সে অঞ্জন বাধাহীন হেড করে বেরিয়ে গেছেন।
২৭ মিনিটে দ্বিতীয় গোল। এবারও অঞ্জন বক্সে অরক্ষিত! দারুণ আক্রমণে বক্সে ঢুকে নেপালের শট বাংলাদেশ গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকো দারুণ ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়েছিলেন বটে, কিন্তু বাংলাদেশ ডিফেন্ডাররা ‘দর্শক’ বনে যাওয়ায় জিকোর চেষ্টা বিফলে। দূরের পোস্টে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা অঞ্জনের আলতো শট আরেকবার ঝাঁপিয়ে পড়ে জিকোই ঠেকাবেন – এতটা আশা করাও হয়তো বাড়াবাড়ি হতো।
৩৮ মিনিটে তৃতীয় গোলটি তো আরও বেশি করে চোখে আঙুল দিয়ে বাংলাদেশ রক্ষণের করুণ দশা দেখিয়ে গেছে। মাঝমাঠের একটু ওপরে ফ্রি-কিক পেয়েছে নেপাল, সেটি থেকে আবারও বক্সে ক্রস। বক্সে বাংলাদেশের ৬-৭ ডিফেন্ডারের ভিড়ে বলের দিকে ছোটার মতো নেপালি ফরোয়ার্ড বলতে এক অঞ্জনই ছিলেন। তাকে ‘মার্ক’ করার জন্য পাশেই দাঁড়ানো বাংলাদেশ সেন্টারব্যাক টুটুল হোসেন বাদশার চেয়ে দৈর্ঘ্যেও অঞ্জন এগিয়ে – এমন দাবি অঞ্জনের পাড় ভক্তও করবেন না! কিন্তু দারুণ দক্ষতায় অঞ্জন যখন হেড করছেন, তার আশপাশে তাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো বাংলাদেশের কোনো ডিফেন্ডারই পাশে নেই!
বিরতিতেই তিন গোলে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের এই ম্যাচই হারই যে জুটছে, তা ধরে নিতে কষ্ট হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধে ডানপ্রান্ত ধরে রাকিবের দারুণ ক্রসের পর সাজ্জাদের গোল শুধু মিছে আশাই জাগিয়েছে।
এনএন