ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে রেস্টুরেন্ট ভাঙচুর, লুটপাটের অভিযোগ
Published : Tuesday, 27 September, 2022 at 9:52 PM Count : 203
মানিকগঞ্জ পৌরসভার বেউথা এলাকায় ‘টি অ্যান্ড ফিশ বারবিকিউ’ নামের একটি রেস্টুরেন্টে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল সোমবার রাতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সিফাদ কোরাইশী সুমনের ঘনিষ্ঠ অনুসারীরা এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রেস্টুরেন্ট মালিক।
সরেজমিনে রেস্টুরেন্টের লোকজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ছয় মাস আগে বেউথা এলাকায় কালিগঙ্গা নদীর দক্ষিণ পাড়ে ওই রেস্তোরাঁ গড়ে তোলেন এম এম জনি নামের এক তরুণ উদ্যোক্তা। জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদকও তিনি। গতকাল সোমবার রাত আটটার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক মনিরুল হক ওরফে মিম, ছাত্রলীগের কর্মী শামীম হোসেন ওরফে বাবু, আতিকুর রহমান ও তন্ময় হোসেনসহ ছাত্রলীগের ছয়-সাতজন নেতা-কর্মী মদ পান করে ওই রেস্তোরাঁয় ঢুকে অপ্রীতিকর আচরণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া তরুণীদের উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। এ সময় তারা খেতে যাওয়া অন্যান্য লোকজনকে রেস্তোঁরা থেকে বের হতে বকাঝোকা করতে থাকেন। এ সময় রেস্তোরাঁর মালিক জনি তাদেরকে সংযত হতে বলেন। পরে তারা আরও উত্তেজিত হয়ে বকাঝকা করতে থাকেন এবং তারা বলতে থাকেন তারা ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন। পরে তারা সেখান থেকে চলে যান।
এরপর রাত ১০টার দিকে মিম, বাবু ও আতিকসহ ছাত্রলীগের ১০-১২ জন নেতা-কর্মী ধারালো চাপাতি ও রাম দা নিয়ে ওই রেস্তোরাঁয় ঢুকে হামলা চালায়। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর চালান। তারা রেস্টুরেন্টের ছয়টি টিন সেড ঘর ধারালো অস্ত্রো দিয়ে ভাঙচুর করে। একই সময়ে দুটি ফ্রিজ, বেশ কয়েকটি চেয়ার ও একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ সময় বাঁধা দিতে গেলে হামলাকারীরা রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক আসিফ হোসেনকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করেন। এতে তার দুই হাত গুরুতর জখম হয়।
আজ মঙ্গলবার সকালে বেউথা এলায় ওই রেস্টুরেন্টে গিয়ে চার-পাঁচটি টিন শেডের ঘরের বেড়া কাটা ও ভাঙচুর অবস্থায় দেখা যায়। রেস্টুরেন্টের দুটি ফ্রিজ, বেশ কয়েকটি চেয়ার ও একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর অবস্থায় পড়ে রয়েছে। রেস্টুরেন্টের বিভিন্ন মালামাল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে।
রেস্টুরেন্টের মালিক এম এম জনি বলেন, মদপান করে রেস্টুরেন্টে এসে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করতে বাঁধা দেওয়ায় এ হামলা ও ভাঙচুর চালায়।
হামলাকারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, ‘আমরা ছাত্রলীগের সভাপতি সুমনের লোকজন।’ তাৎক্ষণিক জনি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সেখান থেকে ক্ষিপ্ত হয়ে চলে যান। এরপর রাত ১০টার দিকে ছাত্রলীগের ১০-১২ নেতা-কর্মী রেস্টুরেন্টে ঢুকে তাণ্ডব চালান। হামলার সময়ে রেস্তোঁরা থেকে ২৪ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যান হামলাকারীরা। এ ঘটনায় তাঁর ছয় লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
অভিযোগের বিষয়ে আজ দুপুরে ছাত্রলীগের নেতা মনিরুল হকের মুঠোফোনে কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এর পর দুপুরে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সিফাদ কোরাইশীর মুঠোফোনে কল করা হলে তিনিও কল ধরেননি।
তবে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং অপরাধমূলক। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রউফ সরকার বলেন, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। আজ সকালে তিনি নিজেও ওই রেস্টুরেন্টে যান। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এএ/এনএন