জাতীয়
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, 'মিনিকেট চাল বলতে কোন চাল বাজারে থাকবে না। আমাদের খাদ্য মন্ত্রণালয়
‘ডিক্লিয়ারেশন’ দিয়েছে, মিনিকেট চাল প্রতারণা বন্ধ করতে হবে। আমরা অভিযানে
নামবো।
মিনিকেট চালের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিনিকেট বলে কোনো চাল নেই। মোটা চালকে চিকন করে মিনিকেট নাম দিয়ে বিক্রি করা হয়। এটা ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা। যা চলতে দিতে পারি না।
এ বিষয়ে ভোক্তাদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন,
'ভোক্তাদেরও একটু সচেতন হওয়া উচিত। মোটা চাল খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। মোটা
চালের ভাত খেতেও মজা। মোটা চাল খেলে এসব মিনিকেট চাল তৈরির সুযোগ থাকবে
না।'
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যালয়ে
সুপারশপ ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি
এসব কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় স্বপ্ন সুপার শপ, প্রিন্স বাজার, আগোরা, ডেইলি নীডস, মিনা
বাজার, ইউনিমার্টের প্রতিনিধি এবং কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের
(ক্যাব) প্রতিনিধি অংশ নেন।
ভোক্তারা প্রায় সব ক্ষেত্রে প্রতারিত হচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, সুপার শপসহ ভোক্তারা যেখানে যাচ্ছে প্রায় সব ক্ষেত্রে প্রতারিত হচ্ছে। ১০০% নিশ্চিত ক্যাশব্যাকের মাধ্যমে ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। ১০০% নিশ্চিত ক্যাশব্যাক দিলে আর ব্যবসা করার দরকার কি?
ডিমের দামের বিষয়ে ভোক্তার ডিজি বলেন, সুপার শপগুলো এক ডজন ডিমে ২৬ শতাংশ পর্যন্ত লাভ করছে। যা অস্বাভাবিক। ডিম ব্যবসায়ীরা পণ্য দোকানের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়, তার পরেও কেন ২৬ শতাংশ লাভ করছেন। ১৫৪ টাকা ডজন ডিম কিনে ১৮০ টাকা বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ সময় স্বপ্ন সুপার শপের সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামিম খান এবং আগোরার প্রতিনিধি সবুর খান বলেন, প্যাকেটজাত পণ্যের মোড়কে যে দাম লেখা থাকে তার চেয়ে বেশি নেওয়া হয় না। প্যাকেটজাত পণ্যের মোড়কে মূল্য লেখার ক্ষেত্রে কোনো কোম্পানিকেই সুপার শপগুলো নির্দেশনা দেন না। কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছে মত দাম নির্ধারণ করেন।
ব্যবসা করে টিকে থাকা কঠিন, ব্যবসায় লোকসান গুনতে হচ্ছে বলেও জানান সুপার শপের প্রতিনিধিরা।
ভোক্তার ডিজি সফিকুজ্জামান বলেন, সব দোষ ক্রেতাদের। আপনাদের কোনো দোষ নেই। আমি এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবসায়ীকে বলতে শুনিনি যে তারা লাভে আছেন। তারা সবাই বলে লোকসানে আছেন। তাহলে একের পর এক শো-রুম বাড়ছে কিভাবে?
তিনি বলেন, সুপার শপগুলোতে একই চাল বিভিন্ন নাম দিয়ে ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করে বিক্রি করা হচ্ছে। সুপার প্রিমিয়াম, প্রিমিয়াম কোয়ালিটি লিখছেন অথচ সব চালের সোর্স এক জায়গাতেই।
ভোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভোক্তাদের একটা ভুল ধারণা আছে। তারা মনে করে বেশি দামে পণ্য কিনলেই হয়তো ভালো হবে। এটা ঠিক নয়। এই ধারণাকে পুঁজি করে ব্যবসা করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
ক্যাবের পক্ষ থেকে ভোক্তাকণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, বেশিরভাগ চেইন শপগুলো ভ্যান্ডরের মাধ্যমে পণ্য সংগ্রহ করে। কিন্তু এই ভ্যান্ডর কারা? সরকারের কোন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য সরবরাহের অনুমতি দিয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর আমরা পাইনা। এই ভ্যান্ডরেরা হলেন মধ্যস্থভোগী। তারা পণ্যের দাম ঠিক করে দিচ্ছে। ভ্যান্ডর থেকে আউটলেট পর্যন্ত আসতেই ২৬ শতাংশ লভ্যাংশের মার্জিন যুক্ত হচ্ছে। তাহলে উৎপাদক পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যন্ত আসতে কত শতাংশ মার্জিন যুক্ত হচ্ছে?
তিনি বলেন, মার্জিন যুক্ত হোক, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে সেটি যৌক্তিক হতে হবে। একই সঙ্গে দেখতে হবে রাষ্ট্র সেখানে বঞ্চিত হচ্ছে কি না। এক্ষেত্রেও অনিয়ম হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মতবিনিময় সভায় ভোক্তা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বাজার তদারকিতে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
এসআর