For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ণের পথে বাংলাদেশ

Published : Monday, 5 September, 2022 at 9:58 PM Count : 106



১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, 'স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলাম, আজ স্বাধীনতা পেয়েছি। সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছি, সোনার বাংলা দেখে আমি মরতে চাই।' কিন্তু ষরযন্ত্রকারীদের জন্য তিনি তাঁর স্বপ্নের 'সোনার বাংলা' দেখে যেতে পারেননি। তবে তাঁর কন্যা দেশনেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের 'সোনার বাংলা'কে বাস্তবে রূপ দিতে বদ্ধপরিকর আওয়ামি লিগের সরকার। অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের পর বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভর করে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক আদর্শে অনুপ্রাণিত বাংলাদেশ সরকার দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।
বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ড এবং দীর্ঘ সামরিক শাসনে উন্নয়নের সমস্ত নিরীখেই পিছিয়ে পড়ছিল বাংলাদেশ। অনাহার আর দারিদ্রতায় ভর করে মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত সাফল্য বিসর্জিত হতে বসেছিল। কিন্তু ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই দ্রুত বদলাতে থাকে সেই চিত্র। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার আগেই তিনি আওয়ামি লিগের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারপর দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। তিনিই প্রথম টানা ৫ বছর সরকার পরিচালনা করে দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে আসেন। এই ৫ বছরে ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি সমঝোতা, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ থেকে শুরু করে খাদ্য নিরাপত্তা, দুস্থ নারী, বিধবা, প্রতিবন্দী ও মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা,  বৃদ্ধদের জন্য শান্তি নিবাস, গৃহহীনদের জন্য আশ্রায়ণ এবং 'একটি বাড়ি একটি খামার' প্রভৃতি জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি সফলভাবে রূপায়িত হয়। তারপর ফেরে বাংলাদেশ উন্নয়নের বিপরীতে হাঁটতে শুরু করলেও ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়েই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে স্বার্থক করতে উদ্যোগী হয়েছেন শেখ হাসিনা। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। শান্তি, সম্বৃদ্ধি, মানবতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনে অসামান্য অবদানের জন্য গোটা দুনিয়া শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক নেত্রী হিসাবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে।

দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রথম ৫ বছরেই ১১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উতপাদন, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)-এর হার ৬ শতাংশ, ৫ কোটি মানুষকে মধ্যম আয়ে রূপান্তর, প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে আইসিটি সেন্টার স্থাপন, বিদেশি মুদ্রা ভান্ডার ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, কৃষক কার্ড বিতরন, কৃষকদের জন্য ১০ টাকায় ব্যাঙ্কে খাতা খোলার সুবিধা প্রভৃতি চালু করেন। ২০১০ সালে দারিদ্রতার হার ৩১.৫ থেকে ২৬ শতাংশে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' নীতি কার্যকরের পাশাপাশি বিশ্বশান্তির প্রশ্নে জাতিসংঘকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করে চলেছে বাংলাদেশ।

অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি আজ গোটা দুনিয়ার কাছে বিশ্ময়কর। ২০০৮ সালেও বাংলাদেশের মাথাপিছু গড় আয় ভারতের গড় আয়ের অর্ধেকেরও কম ছিল। ২০১৩ সালে ছিল অর্ধেক। কিন্তু ২০২২ সালে ভারতের মাথাপিছু গড় আয় যেখানে ২ হাজার ডলারের কাছাকাছি বাংলাদেশে সেখানে আড়াই হাজার ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে মাথাপিছু গড় আয়। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ। মাছ ও সবজি উতপাদনে দুনিয়ার ৫টি শীর্ষ দেশের মধ্যে আমরাও রয়েছি। দেশের অভ্যন্তরীন চাহিদা মিটিয়ে ফল ও সবজি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। ৪৩ শতাংশ মানুষের রোজগারই কৃষি নির্ভর। তাই সরকার কৃষির উন্নয়নে সবরকম সহায়তা করছে।

বঙ্গবন্ধু নারীর সমানাধিকারের প্রশ্নে জাতীয় সংসদে ১০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত করেছিলেন। আর তাঁর কন্যা নারী শিক্ষার বিস্তারে কাজ করে চলেছেন। ২০০৯ সাল থেকে নারী শিক্ষায় ব্যাপক উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। এসএসসি পর্যায়ে ৫৫.০৭ শতাংশ, এইচএসসি পর্যায়ে ৫০.২১ শতাংশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়স্তরে ৩৫.২১ শতাংশ ছাত্রী পড়াশুনো করছে। নারীরা হাইকোর্টের বিচারপতি থেকে শুরু করে পুলিশ ও প্রশাসনে উচ্চপদে নিযুক্ত রয়েছেন। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর পাশাপাশি নারীরা বিজিবি-তেও বেশ সক্রিয়। হাসিনার নেতৃত্বে নারীর কর্মসংস্থানে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ।

স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও ব্যাপক সাফল্য এসেছে। শিশু ও প্রসূতির মৃত্যুর হার ৮৫ শতাংশ কমেছে। আগে শিশুমৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে ১৪১। এখন সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ২০ এবং মানুষের গড় আয়ু ৪৭ থেকে বেড়ে এখন হয়েছে ৭৩। এর থেকেই বোঝা যায় স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নতি করেছে।  বঙ্গবন্ধু দেশের অবকাঠামোর উন্নয়নে গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। হাসিনাও  রাস্তাঘাট ও সেতু নির্মাণে ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছেন। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তার হাত দিয়েই চালু হয় বঙ্গবন্ধু সেতু। আর অতিসম্প্রতি তাঁর হাত দিয়েই পদ্মা সেতুর উদ্বোধন বাংলাদেশের যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই বাংলাদেশ মহাকাশে বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ পাঠাতে সক্ষম হয়। মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি বাংলাদেশের মানবিক সাহায্য গোটা দুনিয়ার প্রশংসা কুড়িয়েছে। জাতিসংঘের জলবায়ু সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা আন্তর্জাতিকস্তরে ব্যাপক প্রশংসিত।

কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই স্থিতিশীল। ২০২০ সালে বিদেশি মুদ্রাভান্ডার শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই ৪৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছিল। বর্তমানে সেটি কমে ৪৫ বিলিয়ন হলেও দেশ যথেষ্ট মজবুত অর্থনৈতিক বুনিয়াদের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। গত বছর বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আদায় হয়েছে ২১ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে পোশাক রপ্তানিতে গোটা দুনিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থান অর্জনে সক্ষম হয়।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ঘাতকেরা বাংলাদেশের উন্নয়ন স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। প্রাথমিকভাবে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি কিছুটা সফল হলেও হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ এগিয়ে চলেছে। জাতীয় সূচক পর্যালোচনা করলেই সেটা বোঝা যায়। ১৯৭১ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ২.৫০ থেকে এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.২৫ শতাংশ। মাথাপিছু গড় আয় ৯৪ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৮২৪ ডলার। ৮৮ শতাংশ দারিদ্রতা এখন কমে হয়েছে ২০.৫ শতাংশ। ৩৪১ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বানিজ্য থেকে আয় বর্তমানে পৌঁছেছে ৫২ হাজার ৮২ মিলিয়নে। সাক্ষরতার হার ২৬.৮ থেকে এখন ৭৫.২০ শতাংশ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সেই সময়কার হার ৭ থেকে এখন কমে গড়ে ১.৭। প্রসূতি মৃত্যুর হার প্রতিলাখে ৬০০ থেকে কমে এখন ১৭৩ এবং শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ১৬৭ থেকে কমে এখন মাত্র ২১। তখন জিডিপির আকার ছিল ৬.৮২ বিলিয়ন ডলার। এখন সোনার বাংলা গঠনের স্বপ্নকে বাস্তবায়ণে প্রস্তুত বাংলাদেশের জিডিপির আকার ৪১৬ বিলিয়ন ডলার। উন্নয়নের সমস্ত সূচকেই দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। আর এই উন্নয়নের কান্ডারী হিসাবে গোটা দুনিয়াতেই প্রশংসিত হচ্ছেন মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক।

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,