ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরসভায় নেই কোন আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। পৌর এলাকার ময়লা, আবর্জনা ডাম্পিং করা হয় ব্যস্ত সড়কের পাশে খোলা জায়গায়। এতে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ বাসিন্দা ও এ পথে যাতায়াতকারীরা। ময়লার ভাগাড়ের আশপাশে রয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। দুর্গন্ধে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
বছরের পর বছর এ দুর্ভোগের শিকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, পথচারী ও বাসিন্দারা চরম ক্ষুব্দ।
জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া-বিজয়নগর আঞ্চলিক সড়কের পাশে বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদয়ালয়। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত রেলওয়ে সরকারি এ বিদ্যালয়ের সামনের সড়ক দিয়ে নিয়মিত আখাউড়া-বিজয়নগর এ'দুটি উপজেলায় যাতায়াত করেন হাজার হাজার মানুষ। উপজেলার একটি প্রাচীনতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সড়কের পাশে আখাউড়া পৌরসভার ময়লার ভাগাড়। ময়লা-আবর্জনার বিশাল স্তুপের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম। শিক্ষার্থীরা পড়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও।
শুধু শিক্ষার্থীই নয়, বর্জ্যের উৎকট গন্ধের কারণে চলাচলে সমস্যায় পড়েন পথচারীরা। আশপাশের বাসা-বাড়ির মানুষও দুর্গন্ধে চরম ভোগান্তিতে দিনযাপন করছেন।
অন্যদিকে, ময়লা পরিবহনের ভ্যান আর তাদের ময়লাবাহী ট্রাকের কারণে রাস্তায় যান চলাচলে যানযটে পড়ে।
নিজেদের এমন ভোগান্তি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পথচারী ও অভিভাবকরা।
বছরের পর বছর ধরে ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষিত করে এলেও এ বিষয়ে যেন কোন ভ্রূক্ষেপ নেই আখাউড়া পৌর কর্তৃপক্ষের।
ভুক্তভোগীরা জানান, দিন যত যাচ্ছে পচনশীল ময়লা-আবর্জনার স্তূপ ততই বাড়ছে। পৌর শহরের বাজারে নষ্ট হওয়া শাক-সবজি, হোটেলের বাসি-পঁচা খাবার, জবাই করা গরু, ছাগল, মুরগির পালক, নাড়িভুঁড়ি এবং বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনাও সেখানে ফেলা হচ্ছে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই এগুলো পঁচে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হচ্ছে। উৎকট গন্ধের কারণে শিক্ষার্থী কিংবা পথচারীদের ওই রাস্তা দিয়ে নাক-মুখে কাপড় দিয়ে বা হাত দিয়ে নাক চেপে ধরে চলাচল করছেন।
অনেক সময় উৎকট দুর্গন্ধে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এমনকি মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানা হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন শিক্ষার্থীরা। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
শিক্ষার্থী তাবাসসুম, মাসুমা, মোহসীন, জান্নাতুল ফেরদৌসী বলেন, আমরা প্রতিদিন স্কুলে আসা-যাওয়া করি। কিন্তু ময়লার উৎকট দুর্গন্ধে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, বমি চলে আসে। শ্বাসকষ্ট হয়। স্কুলে গেলে মনে হয় শরীর থেকে ময়লার গন্ধ বের হচ্ছে। বিদ্যালয়ের মাঠেও বর্জ্যের দুর্গন্ধের কারণে খেলাধুলা করতে পারিনা।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান খান বলেন, শ্রেণিকক্ষের দরজা-জানালা বন্ধ করে ক্লাস করতে হয়। গরম যত বাড়তে থাকে দুর্গন্ধ এত বেশি তীব্র হয় যে বিদ্যালয় ভবনে বসে থাকাও দায় হয়ে যায়। শ্রেণিকক্ষের দরজা-জানালা বন্ধ করেও দুর্গন্ধ এড়ানো যায় না। ভাগাড়ের গন্ধে শিশুদের মাথা ব্যাথা, বমি ও পাতলা পায়খানা হয়। অনেকে মাথা ঘুরে অজ্ঞান পর্যন্ত হয়ে যাওয়ার ঘটনাও প্রতিনিয়ত ঘটছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকরা বলেন, বিকল্প কোন রাস্তা না থাকায় বাধ্য হয়েই পৌর কর্তৃপক্ষের সৃষ্ট ময়লা-আবর্জনার স্তুপের পাশ দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার পথচারীকে। ময়লার ভাগাড়ের আশপাশের বসতি স্থানীয়দের নিয়মিত পড়তে হচ্ছে বড় ধরনের সমস্যায়। স্তুপের দুর্গন্ধে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। ছড়াচ্ছে রোগবালাই। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পথচারিদের চলাচলের স্বাভাবিক পরিবেশের বিঘ্ন ঘটাচ্ছে ময়লার ভাগাড়ের দুর্গন্ধ। প্রভাব পড়ছে ছোট ছোট শিশু ও বয়স্কদের ওপর।
শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে এ স্থান থেকে দ্রুত ময়লা-আবর্জনার স্তুপ সরানোর দাবি জানিয়েছেন অভিভাবক ও এলাকাবাসী।
ময়লার দুর্গন্ধ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর কি ধরনের প্রভাব ফেলছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হিমেল খান বলেন, ময়লার দুর্গন্ধে মানুষের বিভিন্ন রোগব্যাধিসহ শারীরিক নানা সমস্যা হতে পারে। কোমলমতি শিশু-কিশোরদের ডায়রিয়া, টাইফয়েড, আমাশয়সহ বায়ুর মাধ্যমেও রোগ জীবাণু ছড়িয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে।
ময়লার ভাগাড়ে নিজেরাও অস্বস্তিতে রয়েছেন জানিয়ে স্থানীয় ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল আহসান খাদেম এনাম বলেন, আবর্জনার ভাগাড় অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে।
অবশ্য আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল বলেন, জায়গার অভাবে ওই স্থানে পৌরসভার ময়লা ফেলা হচ্ছে। যেখানে জনবসতি নেই এমন একটি সরকারি খাস জায়গার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনও করা হয়েছে। জায়গা পাওয়া গেলে এ সমস্যা আর থাকবে না।
-এমএ