মেহেরপুর শহরকে যানজট ও পরিবহন খাতে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টিতে ২০১০ সালের ১৫ জুন মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের পাশে শহরের উপকণ্ঠে ২৫ বিঘা জমির উপর মেহেরপুর পৌরসভা ইউজিআই প্রকল্পের আওতায় টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মাটি ভরাট করতে ৪৭ লক্ষ এবং টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করতে ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়।
একই সময়ে পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে ২৬ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা ব্যয়ে টার্মিনালের সম্মুখ ভাগে সীমানা প্রাচীর, ১৫ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা ব্যয়ে পুলিশ বক্স ও রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করা হয় বলে মেহেরপুর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়াও, টার্মিনাল ভবনে ভেতর যাত্রী বসার জায়গা, টিকিট কাউন্টার, ওজুখানা ও টয়লেট, নামাজের ঘর, হোটেল ও কয়েকটি দোকানও নির্মাণ
করা হয়। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় ওজুখানা ও টয়লেট বিনষ্টের পথে। সীমানা প্রাচীরের ইটও দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, নতুন ভবনটি মাদকসেবীদের নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
পৌর সূত্রে জানা যায় ২০১২ সালের দিকে নতুন বাস টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হলে টার্মিনালটি দৃশ্যমান হয়। সে সময় মেয়র হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন সাবেক মেয়র মোতাছিম বিল্লাহ মতু। তিনি মেয়র থাকা অবস্থায় টার্মিনালটি চালু করার ব্যাপারে বেশ কয়েকবার আলোচনা হলেও চালু করতে পারেননি। বিষয়টি আলোচনা পর্যন্তই থেকে যায়।
বর্তমান মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন বছর দেড়েক আগে বাস টার্মিনাল চালুর উদ্যোগ নিলেও অদৃশ্য কারণে সেটিও আলোর মুখ দেখেনি। পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে বাস রাখার জায়গা সংকুলান না হওয়ায় এবং যানজটের কারণে স্থানীয় প্রশাসন টার্মিনাল চালু করতে পৌরসভাকে তাগিদ দেন। বাস-ট্রাক মালিক সমিতিও এগিয়ে আসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চালু হয়নি। পরে সিদ্ধান্ত হয় যেসব বাসের রাস্তায় যাত্রী পরিবহনের ট্রিপ থাকবে না সেগুলো সেখানে অবস্থান করবে।
একইসঙ্গে টার্মিনালে নয়টি মোটর মেরামত গ্যারেজ চালু হয়। ফলে হল্টে থাকা বাস ও মেরামত যোগ্য বাসগুলোই এখন রাখা হচ্ছে টার্মিনালে। বাকিগুলো শহরের প্রাণ কেন্দ্রে গিয়ে যানজটসহ যোগাযোগ ব্যবস্থায় নানা প্রতিকূলতা সৃষ্টি করে যাচ্ছে।
মেহেরপুর শহরের যানজট দুর করতে পূর্ণাঙ্গ ভাবে নতুন বাস টার্মিনালটি চালুর কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন জেলা ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (টিআই-১) ফেরদৌস হাসান।
তিনি বলেন, মেহেরপুর শহরের রাস্তাগুলো কিছু কিছু জায়গায় খুবই ন্যারো। লোকাল ও দূর পাল্লার বাসগুলো শহরের প্রাণ কেন্দ্রে এসে রাস্তায় স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। বাস টার্মিনালটি চালু হলে বাস ও ইজিবাইকগুলোই শহরের বাইরে চলে যাবে। ফলে যানজট সহনীয় মাত্রায় এসে যাবে বলে তিনি দাবি করেন।
মেহেরপুর বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মেহেরপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক গোলাম রসুল বলেন, বর্তমানে নতুন টার্মিনালটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। চারিদিকে সীমানা প্রাচীর না থাকায় বাস-ট্রাকের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্তেও সৃষ্টি হয়েছে। নতুন করে সংস্কার না করলে এটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
নতুন বাস টার্মিনালটি চালুর ব্যপারে মেহেরপুর পৌরসভার মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন বলেন, টার্মিনালটি চালু করতে এখনো প্রয়োজন ইয়ার্ড, লাইটিং ও সারফেস ড্রেনসহ সীমানা প্রাচীর ও ভবনটির সংষ্কার। চলতি বছরেই একটি প্রজেক্টের মাধ্যমে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাবে। আমরা আশা করছি খুব দ্রুতই বাস টার্মিনালটি চালু করতে পারবো।
-এমআর/এমএ