চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৭ জনে দাঁড়িয়েছে। ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান চলছে। তবে আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।
এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে সেখানকার বাতাস। কেউ এসেছেন নিখোঁজ স্বজনের খোঁজে, আবার কেউ মরদেহ শনাক্তে ব্যস্ত।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দিন তালকুদার জানান, আহত হয়ে চমেকে ভর্তি আছেন ১৩৫ জন। চট্টগ্রামের অন্যান্য হাসপাতালে আরও শতাধিক চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
চমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ৫২ জন এবং অর্থোপেডিক বিভাগে ১০ ভর্তি রয়েছে। তাদের বেশিরভাগেরই শ্বাসনালী পোড়া। তাদের বাঁচাতে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।
নিহতদের মধ্যে ৯ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিসের কর্মী মনিরুজ্জামান, ভোলা দক্ষিণ বালিয়ারার হাবিবুর রহমান, বাঁশখালীর রবিউল আলম, মুমিনুল হক, মহিউদ্দিন, তোফায়েল আহমেদ, নোয়াখালীর চাটখিলের আলাউদ্দিন, মো. সুমন ও যশোরের ইব্রাহীম হোসেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন দুই শাতধিক। আগুনে দগ্ধদের চমেকসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
রোববার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন বলেন, আগুন লাগার খবর পাওয়ার পর রাত থেকে আমরা এখানে কাজ করছি। লাশের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। একটি কনটেইনারে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রাসায়নিক থাকায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের ১৮৩ কর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে মালিকপক্ষের কাউকে পাচ্ছি না। মালিকদের পেলে আমরা জানতে পারতাম কোন কনটেইনারে কী আছে। এটা আমাদের জানা নেই। এজন্য উদ্ধার কাজে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে।
মহাপরিচালক বলেন, আমরা এখনো ভেতরে পুরোপুরি প্রবেশ করতে পারছি না। এ ঘটনায় ফায়ারের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের বিশেষ টিম কাজ করছে। কনটেইনারগুলোতে যেহেতু কেমিক্যাল আছে, সেজন্য ঢাকা থেকে ফায়ারের ২০ সদস্যের হেজবোর্ড টিম আনা হচ্ছে। তারা বিদেশ থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকার বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত ও দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেলসহ আশপাশের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের পর এ বিস্ফোরণ ঘটে। রাত পৌনে ১১টার দিকে এক কনটেইনার থেকে অন্য কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। একটি কনটেইনারে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রাসায়নিক থাকায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এ ছাড়া আশপাশের বাড়িঘরের জানালার কাঁচ ভেঙে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সেখানে একের পর এক কনটেইনার বিস্ফোরণ হচ্ছে। দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুনের লেলিহান শিখা। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন ৪৫০ জনের বেশি মানুষ
সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকার বিএম কনটেইনার ২৪ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি মূলত পণ্য রপ্তানি করে থাকে। এখান থেকে পণ্য রপ্তানির জন্য কনটেইনারগুলো প্রস্তুত করে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো হয়। ৩৮ ধরনের পণ্য রপ্তানিতে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। ঘটনার সময় সেখানে ৫০ হাজার কনটেইনার ছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অগ্নিকাণ্ডের সময় অন্তত ২০০ শ্রমিক সেখানে কাজ করছিলেন বলেও জানা গেছে। তবে সেখানে ঠিক কত সংখ্যক মানুষ তখন ছিলেন তা এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি।
এনএন
