For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

ঘূর্ণিঝড় অশনিতে শঙ্কিত দক্ষিণ উপকূলবাসী, ২ নম্বর সংকেত

Published : Monday, 9 May, 2022 at 10:48 PM Count : 100

ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াশ’এ ফসল ও উপকূললীয় বণ্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ব্যাপক ক্ষতির এক বছরের মাথায় মাঠে থাকা বোরো ধানসহ রবি ফসলের জন্য আরেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে ‘অশনি’ দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দরজায় কড়া নাড়ছে। ৭০ ভাগ আধাপাকা ও পাকা বোরো ধান এখনো মাঠে। ফলে বরিশালের ১১ জেলার সাড়ে ১০ লাখ কৃষকের এখন দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই।
 
বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সব নদী বন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকেও ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। 

সোমবার শেষরাত থেকেই সমগ্র দক্ষিণ উপকূললীয় এলাকার আকাশে অশনিতে ভর করে মেঘের ঘনঘটার সাথে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত কৃষকের দুঃশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। 

ঘূর্ণিঝড় অশনি’মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে ইতোমধ্যে। রেড ক্রিসেন্টের ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি-সিপিপি’র ৭০১টি ইউনিটের প্রায় ৭৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে উপকূলের ১৩ জেলার ৪১টি উপজেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে স্বল্পতম সময়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতেও প্রস্তুত রয়েছে তারা। ৪ নম্বর বিপদ সংকেত ঘোষিত না হওয়ায় উপকূলে কোনো ধরনের বিপদ সংকেতের পতাকা উত্তোলন বা মাইক-মেগাফোন থেকে সতর্কবার্তা প্রচার করা হচ্ছে না। তবে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি রয়েছে বলে সিপিপি সূত্র জানিয়েছে। 

গত বছর ২০ মের পরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ‘ইয়াশ’ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে ক্রমান্বয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ভারেতর উড়িশ্যা উপকূলে ২৭ মে আঘাত হানে। কিন্তু তার প্রভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ফসলহানিসহ কয়েকশ কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ ছাড়াও বিশাল উপকূললীয় বণ্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও নদী তীর রক্ষা বাঁধের ক্ষতির পরিমাণও ছিল প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। ইয়াশ-এর ছোবলে উপকূললীয় অবকাঠামোর সে ক্ষতির মেরামত ও পুণর্বাসন এখনো সম্পন্ন হয়নি।
 
এমনকি গত বছর ইয়াশ-এ ভর করে প্রবল বর্ষণে উঠতি বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার নুতন আশায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ করেছেন কৃষকরা। কিন্তু সে ধান ঘরে তোলা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার বার্তা দিচ্ছে এ বছরের একই সময়ের আরেক ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’।
 
সদ্য সমাপ্ত রবি মৌসুমে বরিশাল ও ফরিদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় ৩ লাখ ৩৭ হাজার ১৮৫ হেক্টরে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৫০ হেক্টরে বোরো আবাদ সম্পন্ন হলেও এপর্যন্ত মাত্র ৩০% জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় লক্ষ্যমাত্রার ১১৩ ভাগ এবং বৃহত্বর ফরিদপুরের ৫ জেলায় ১০২% জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ফলে এবার দক্ষিণাঞ্চলে বোরো ধান থেকে ১৫ লাখ ২২ হাজার ৫২০ টন চাল পাবার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে উৎপাদন ১৬ লাখ টনে উন্নীত হবার সম্ভবনা থাকলেও, অশনি পরিস্থিতিকে কোনো পর্যায়ে নিয়ে যায় তা নিয়ে শংকিত মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগণও। 
আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে বরিশালসহ উপকূললীয় এলাকায় মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের সম্ভবনার কথা বলা হয়েছে। এমনকি পরবর্তী ৩ দিনেও বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। 
আবহাওয়া বিভাগের মতে, নিম্নচাপটি উত্তর-পশ্চিম দিকে  অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ’অশনি’তে পরিণত হয়েছে। যা শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন  এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গত বছরের ‘ইয়াশ’এর মত আরো উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ভারতের অন্ধ্র ও উড়িশ্যা উপকূললে আঘাত হানার সম্ভবনা বেশি হলেও একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। ফলে অশনির প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলসহ দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকায় আগামী ৩-৪দিন প্রবল বৃষ্টিপাতের আশংকা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে। সোমবার শেষ রাত থেকেই দক্ষিনাঞ্চলসহ উপকূললীয় এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে।

তবে অশনি কোনো কারণে তার  গতি পরিবর্তন করে উত্তরে অগ্রসর হলে তা বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবর্তী সুন্দরবন উপকূললেও আঘাত হানার সম্ভবনা রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি হতে পারে আরো ভয়াবহ। কিন্তু অশনি বাংলাদেশ উপকূললে সরাসরি আঘাত না হানলেও এর প্রভাবে আগামী ৩-৪ দিন দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূললীয় এলাকায় মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত বলে মনে করছেন আবহাওয়াবীদগণ। কিন্তু ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ এ ঘূর্ণিঝড়টি উড়িশ্যা উপকূললে পৌঁছার আগে শক্তি ধরে রাখতে না পারে বলেও  মনে করছেন। তবে এসব কিছু বুুঝতে আরো ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতে পারে।

এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে থাকা আড়াই লক্ষাধিক হেক্টরের বোরো ধানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) থেকে যত দ্রুত সম্ভব মাঠে থাকা পাকা ধান কেটে ফেলতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষকদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে ব্লক সুপারভাইজারসহ মাঠকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও ডিএইর দায়িত্বশীল মহল জানিয়েছে। তবে এত বিপুল পরিমাণ ধান দ্রুত কাটার মতো কৃষি শ্রমিক নেই এ অঞ্চলে।

আইএইচ/এনএন

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,