সরকারি নির্দেশনা না থাকার কারণে রাজশাহীবাসী নতুনভাবে গ্যাস সংযোগ পাচ্ছে না। দুই বছরের বেশি সময় ধরে এমনটি চলছে। এ নিয়ে আগ্রহী গ্রাহকদের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। কবে নাগাদ ১১ হাজারের বেশি আবেদনকারী গ্যাস সংযোগ পাবেন সেই বিষয়ে পরিস্কারভাবে কিছু বলতে পারছে না পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানী লিমিটেডের (পিজিসিএল) কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহীর বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ পাবার জন্য আন্দোলন শুরু হয় সেই ২০০৪ সালের দিক থেকে। এর দাবিতে মহানগরীতে ব্যতিক্রমী ১৫ মিনিটের হরতাল কর্মসূচিও পালিত হয়েছে। সেই সাথে মানববন্ধন হয় প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। এরপর গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে তড়িঘড়ি করে রাজশাহীতে গ্যাসের পাইপলাইন স্থাপন করা হয় এবং গ্যাস সংযোগ দেবার কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় করা হয় ১০৮ কোটি টাকা। এরপর ৯ হাজার ১৬৪টি বাসাবাড়িতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হয়। পরে ৮টি কারখানা ও একটি সিএনজি স্টেশনও গ্যাস পেয়েছে। তবে দুই বছর পর গ্যাস সংযোগ প্রদানের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, রাজশাহীতে গ্যাস সংযোগ উদ্বোধন হয় ২০১৩ সালের ৭ জুন। সেই সময় থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণিতে গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন করেন ২১ হাজার ৬৩৭ জন। এর মধ্যে সংযোগ দেয়া হয় ৯ হাজার ১৬৪ জনকে। চাহিদাপত্রের অর্থ জমা দেয়া ও ডিমান্ড নোট ইস্যু হবার পরও সংযোগ পাননি এমন গ্রাহকের সংখ্যা ৫৫০ জন। ২০১৫ সালের জুন মাস থেকে সব ধরনের গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। সরকারি নির্দেশনা না থাকায় তাদের গ্যাস সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে গ্যাস না পেয়ে গ্রাহকদের কেউ কেউ এখন জমা দেওয়া টাকা ফেরত নিতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিজিসিএল রাজশাহীর এক কর্মকর্তা বলেছেন, সম্প্রতি ৫-৬ জন গ্রাহক তাদের জমা দেওয়া টাকা ফেরত নিয়েছেন। আরও কেউ চাইলে তাদেরও ফেরত দেওয়া হবে। ডিমান্ড নোট ইস্যু হওয়া গ্রাহকরা ন্যূনতম ৬ হাজার ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করে ফেলেছেন। বাসা-বাড়ির ওয়্যারিংও করেছেন তারা। তারপরও তারা গ্যাস সংযোগ পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় তারা টাকা ফেরত নিচ্ছেন। শুধু সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণেই বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
মহানগরীর ঘোড়ামারা এলাকার বাসিন্দা মাইনুদ্দিন বলেন, গ্যাস সংযোগ দেওয়া শুরু হলে তিনিও আবেদন করেছিলেন। কিন্ত তিনি এখনও বাসায় গ্যাস সংযোগ পাননি।
সাগরপাড়া এলাকার জুলফিকার রহমান বলেন, তার নামে ডিমান্ড নোট ইস্যু হওয়ার পর তিনি মূল পাইপ থেকে বাসা পর্যন্ত পাইপ বসিয়েছেন। বাড়ি ওয়্যারিং করেছেন, চুলা বসিয়েছেন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। কিন্ত গ্যাস সংযোগ পাননি।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, গত সিটি নির্বাচনের আগে গ্যাস সংযোগ দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মহানগরবাসীর কাছ থেকে ভোট নেওয়া হয়েছিল। কিন্ত তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। দ্রুত গ্যাস সংযোগ দেবার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবার দাবি জানান তিনি।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি বলেন, রাজশাহীকে অর্থনৈতিকভাবে তরান্বিত করতে চাইলে শিল্পকারখানায় গ্যাস-সংযোগ দেবার বিকল্প নেই। কারণ বর্তমানে দেশের যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি তাতে কলকারখানায় উৎপাদন করা কঠিন। অথচ রাজশাহীতে নামমাত্র কয়েকটি কারখানায় গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হয়েছে, তাও বিশেষ বিবেচনায়। বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেবার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় এনে আবেদন করা সব শিল্প-কারখানায় দ্রুত গ্যাস সংযোগ দেবার দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, মহানগরীর বাসাবাড়িতে গ্যাসের জন্য আবেদনকারীদের মধ্যে অর্ধেক গ্রাহকও গ্যাসের সংযোগ পাননি। এটা দুঃখজনক বিষয়। এই গ্যাস সংযোগ পাবার জন্য রাজশাহীবাসী কেবল আন্দোলন করেছেন ঠিক তা নয়। বলা যেতে পারে কৃষি অঞ্চল হিসেবে এই এলাকার গ্যাস সংযোগ পাবার দাবিটাও যৌক্তিক ছিল। ইতিমধ্যে অনেকে সংযোগের জন্য টাকা জমা দেবার পর সংযোগ পাননি। বিশেষ করে, এখানকার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে ও শিল্প-কারাখানায় গ্যাস সংযোগ দেয়া হলে অনগ্রসর রাজশাহী দ্রুত এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, নির্বাচিত হবার পর ঘোষণা দিয়েছিলাম ১০ হাজার বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেয়া না হলে নিজেও নিবেন না। এখনও তা হয়নি। যার কারণে তিনি এখনও বাসায় গ্যাস সংযোগ নেননি। তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, রাজনৈতিক কারণে মেয়র হওয়ার পর গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে।
পিজিসিএলের জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং) প্রকৌশলী কামরুজ্জামান খান বলেন, সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় রাজশাহীতে বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সরকারি নির্দেশনা পেলেই গ্যাস সংযোগ দেওয়া শুরু হবে বলে জানান তিনি।
আরইউ