রাজশাহী অঞ্চলে দেশের সর্বনিন্ম তাপমাত্রা অব্যাহত রয়েছে। চলমান শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলা নষ্টের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রকৃতির এই বৈরীতা উপেক্ষা করে বোরো বীজতলা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজশাহীর কৃষক। প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে বোরো বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্তের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ ও কৃষকরা।
আগাম বীজতলার চারা গাছগুলো হলুদ হয়ে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। তবে এখনো বীজতলা নষ্ট হয়নি। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশার কারণে ‘কোল্ড ইনজুরি’তে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। এ অবস্থা থাকলে শুধু বীজতলা নয়, প্রচন্ড শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে আলু, সিম, সরিষাসহ অন্যান্য রবি শস্য খেতের ক্ষতি হতে পারে। এমন আবহাওয়া দীর্ঘস্থায়ী হলে জেলায় বোরো বীজতলাসহ রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পবার উপজেলার মথুরা গ্রামের আলিমুদ্দিন বলেন, তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করবেন। সেই মোতাবেক ধানের বীজ বপন করেছেন। কিন্তু কয়েকদিনের তীব্র ঠান্ডা ও শৈত প্রবাহে বীজতলা ক্ষতির আশংকা করছেন তিনি। এ অবস্থায় তিনি ও কৃষকদের বীজতলাগুলো সাদা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন এবং সূর্য উঠার পরে পলিথিনগুলো আবারো উঠিয়ে দিচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, এবারে বোরো বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৫৬ হেক্টর এবং আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৫ হাজার ১২৫ হেক্টর। বীজতলা তৈরি ও বীজ বপণের কাজ দ্রুতই এগুচ্ছে। ভালো ফসল পেতে ও বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতি থেকে চারা বাঁচাতে চাষিদের প্রতিনিয়ত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
পবা উপজেলার হড়গ্রাম ইউনিয়নের কুলপাড়া গ্রামের কৃষক সাজ্জাদ আলী, বসন্তপুর গ্রামের আসাদ আলী, মোহনপুর উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের তসলিম উদ্দিনসহ অনেক চাষি জানান, ইরি-বোরোর বীজ বপণের সময় আরো কিছুটা হাতে থাকলেও বীজতলা তৈরি ও বপণের কাজটা এবার আগেভাগেই শুরু করেছিলেন। কিন্তু এবারে অনেক আগেই ঘন কুয়াশা, তীব্র ঠান্ডা ও শৈত প্রবাহে বীজতলা নষ্টের আশংকা দেখা দিয়েছে। তারা সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বীজতলা বাঁচাতে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, জেলার কোথাও বোরো বীজতলা নষ্টের খবর পাওয়া যায়নি। তবে বৈরী আবহাওয়া মোকাবেলায় চাষিরা প্রস্তুত রয়েছে। ঘন কুয়াশা ও তীব্র ঠান্ডা থেকে বীজতলাকে রক্ষা করতে চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বীজতলায় রাতে প্রচুর পরিমাণে পানি জমা রেখে সকালে সেই পানি বদলে আবার নতুন পানি রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রাতে বীজতলা সাদা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে বলা হচ্ছে। দুইপাশে রশি ধরে ধানের চারার উপর থেকে শিশির কণা ঝরিয়ে দিলে কৃষকরা উপকৃত হবেন। এছাড়া ছত্রাক নাশক থিয়োভিট পাউডার ব্যবহারের পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।
আরএইচএফ/এসআর