ক্ষমতাসীনদের দৌরাত্মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলগুলোতে বরাদ্দকৃত সিটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উঠাতে পারছেন না হল প্রাধ্যক্ষরা। আবার অনেকে সিটে উঠতে পারলেও হলে ক্ষমতাশীন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দিতে হচ্ছে ৩ থেকে ৭ হাজার টাকা। আর এ বিষয়ে নিজেদের নিরাপত্তা সঙ্কটের কারণে মুখ খুলতেও চাচ্ছেন না সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, হল প্রশাসন থেকে সিট দেওয়া হলেও হলে উঠতে পারছেন না। হলে সিট ফাঁকা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি দখলে নিচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বৈধ সিটে অবৈধভাবে থাকছেন তারা।
হল প্রাধ্যক্ষরা বলছেন, সব হল প্রাধ্যক্ষরা যদি একসঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করে আর প্রশাসন থেকে যদি কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয় তবেই এটি সমাধান করা সম্ভব।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলে সদ্য সিট পাওয়া ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী স্বজন রায় বলেন, হলে আমার নামে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পাশাপাশি রুম নম্বরসহ হলকার্ডও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দকৃত রুমে গিয়ে দেখি, অন্যরা দখল করে আছে। তারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলেও নিজেদের পরিচয় দিয়েছে। পাশাপাশি বলেছে হলের সিট নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্রলীগ। হলে সিট পেতে গেলে হয় রাজনীতি করা লাগবে নতুবা টাকা লাগবে। একই হলের সদ্য সিট পাওয়া শিক্ষার্থী জিদনী রহমানও জানায় একই সমস্যার কথা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানায়, তাকে হলের পলিটিক্যাল ব্লকে সিট দেওয়া হয়েছে। সেখানের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি বরাদ্দকৃত সিটে উঠতে গেলে দেখে সেখানে আরেকজন অবস্থান করছেন। পরে নিজের রুমে উঠতে না পেরে বর্তমানে তিনি হলের আরেক রুমে বেড শেয়ার করে থাকছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাগিব শাকিল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি জীবনে মাত্র একটি রাত হলে নিজের সিটে ঘুমাতে পেরেছি। পরদিন হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্ষমতাশীনদের কিছু নেতাকর্মী আমাকে সেই সিট থেকে নামিয়ে দেয়। তারপর থেকে মেসে অবস্থান করছি। হলে না থেকেও হল ভাড়া দিতে হতো আমাকে, তাই কিছুদিন আগে সিট বাতিল করেছি।’
নবাব আব্দুল লতিফ হলের আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, হলে উঠতে চাইলে তার কাছে হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের এক নেতা তার কাছে সাড়ে ৬ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন।
চাঁদা দাবি ও হলে সিট দখলের প্রেক্ষিতে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘চাঁদা দাবি করার তো কোনো প্রশ্নই আসেনা। এমন কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে আমরা তাৎক্ষণিক তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আর হলে সিট দখল করে রাখার কিছু নেই, যারা আছেন তারা তো আছেনই। হল প্রশাসনের সুনির্দিষ্ট তথ্যের সমন্বয়হীনতার জন্য এই সমস্যা হচ্ছে।’ এজন্য সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে হল প্রশাসনকে রুম বরাদ্দ দিতে হবে বলে মনে করেন এই নেতা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হল প্রাধ্যক্ষ ড. সুজন সেন বলেন, আমি চাই প্রকৃত শিক্ষার্থীরাই হলে উঠুক এবং আমি নিয়ম অনুযায়ী সিটও দিয়েছি। তবে অনেকে উঠতে পারছে না। আমি এমন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের কাছে লিখিত অভিযোগ চেয়েছি। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আর সব হলে যদি সম্মিলিতভাবে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয় আর প্রশাসন থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয় তবেই এটি সমাধান করা সম্ভব।
হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্ববায়ক ও শহীদ হবিবুর রহমান হল প্রাধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলাম বলেন, হলের এমন পরিস্থিতিটি একদিনে তৈরি হয়নি। আমাদের হল প্রাধ্যক্ষরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে এই উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানের জন্য। সকলের সার্বিক সহযোগিতায় আশা করি এটা সমাধান করা সম্ভব হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, হলের এই সমস্যাগুলোর সমাধান হল প্রাধ্যক্ষকেই করতে হবে। তবে হল প্রাধ্যক্ষরা এ ব্যাপারে আমাদের পরামর্শ নিতে পারেন। এই সমস্যাটি তো একদিনেই তৈরি হয়নি। আমরা ধীরে ধীরে এটা সমাধান করার দিকে এগোচ্ছি।
-আরএইচ/এনএন