ক্রেতা-দর্শণার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। শুক্র ও শনিবার ক্রেতা-দর্শণার্থীদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। তবে মেলায় মাস্ক ব্যবহার করতে ক্রেতা ও দর্শণার্থীদের উপর কঠোর নজরদারি রয়েছে।
সকলেই মাস্ক পরে মেলায় প্রবেশ করেছেন। তবে তাদের কেউ কেউ প্রবেশের পর মাস্ক খুলে ফেলেন। আবার কেউবা থুতনিতে, কেউবা গলায় মাস্ক ঝুলিয়ে রাখেন।
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থেকে আসা মাইনুল হক বলেন, মাস্ক পড়লে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তাই মাস্ক খুলে ফেলেছি।
মেলা প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শনিবার সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতা-দর্শণার্থীরা মেলায় আসতে শুরু করেন। কেউ নিজস্ব পরিবহনে, কেউ বিআরটিসি বাসে কেউবা সিএনজি চালিত অটোরিকশাযোগে মেলায় এসেছেন। তাদের অনেকেই পরিবার, আত্বীয়-স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে মেলায় এসেছেন। তবে এবারে মেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়।
অধিকাংশই ক্রেতা-দর্শণার্থীই অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করেছেন। তাতে মেলার প্রবেশদ্বারে ঠেলাঠেলি কিংবা চাপের মুখে কাউকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না।
অন্যদিকে, করোনার নতুন ভাইরাস ওমিক্রনের প্রভাব এড়াতে মেলা প্রাঙ্গণে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশিকা পালনে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন মেলার আয়োজক কমিটি।
মেলায় খাবার স্টলগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, এবারের মেলায় ভোজন রসিক দর্শণার্থীর সংখ্যাও কম নয়। ফলে আইসক্রিম, কফি ও খাবারের দোকানগুলোতে সকাল-দুপুর ও রাত পর্যন্ত লাগাতার বিক্রি হচ্ছে। অনেককেই দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে খেতে হচ্ছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের মেলায় মানসম্মত খাবার ও দাম সীমিত হওয়ায় স্বাচ্ছন্দে উপভোগ করছেন ভোজন রসিকরা।
এছাড়াও, মেলায় সর্বাধুনিক ডিজাইনের দেশি-বিদেশি শো-পিস, কাপড়, অলংকার, তৈজসপত্র, কুটির শিল্প, ইলেকট্রনিক্স, মোবাইল ফোন ও কয়েদীদের উৎপাদিত পণ্যতে মজেছেন ক্রেতা-দর্শণার্থীরা। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। কিন্তু ফার্ণিচার, মোটরবাইক, ফ্রিজ ও টিভির স্টলগুলোতে ক্রেতা-দর্শণার্থী বেশি থাকলেও বিক্রি হচ্ছে কম। তবে স্টলের শো-রুমের ঠিকানা নিয়ে যাচ্ছে দর্শণার্থীরা।
নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া থেকে মেলায় এসেছেন চাকরিজীবী রফিকুল আমিন। তিনি বলেন, 'ছুটির দিন পেয়ে পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছি। বরসর খোলামেলা জায়গা নিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে মেলার আয়োজন হওয়ায় প্রচুর লোকজনের সমাগম হয়েছে। মেলাটি উপভোগ করেছি, ভাল লেগেছে।'
আশুলিয়া থেকে এসেছেন শিক্ষিকা রেহেনা আক্তার। তিনি বলেন, 'সুযোগের অভাবে এতদিন মেলায় আসতে পারিনি। কিন্তু পত্রিকা-টেলিভিশনে মেলার সংবাদ দেখে মন মানছিলো না। তাই শুক্রবার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে চলে আসছি। '
গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে আগত গৃহবধূ সামিরা বেগম বলেন, 'মেলার আয়োজন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভাল থাকায় সারা দিন নির্বিঘ্নে মেলা উপভোগ করেছি। '
ব্যবসায়ী শাইনুল ইসলাম রাতুল এসেছেন নরসিংদী থেকে। তিনি বলেন, 'যানজটের কারণে দেড় ঘন্টা পর মেলায় প্রবেশ করেছি। মেলার আনন্দ ধূলায় আর যানজটে বিলীন হয়ে গেছে। তবে মেলার অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা ও আয়োজন দেখে মুগ্ধ হয়েছি।'
ফাহিম এন্ড সোহানা ক্রোকারিজের বিক্রয় প্রতিনিধি ফাহিম মিয়া বলেন, 'কোম্পানির প্রচারের স্বার্থে স্টল দেয়া হয়েছে। আমাদের স্টলে নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে তৈরি মানসম্পন্ন কোকারিজ পণ্য রয়েছে। কোম্পানির প্রচারের স্বার্থে স্বল্প দামে এ পণ্যগুলো বিশেষ ছাড়ে বিক্রয় করা হচ্ছে। আশানুরূপ বিক্রয় হয়েছে।'
আক্তার ফার্নিচারের দুলাল রায় বলেন, 'নান্দনিক ডিজাইনের ফার্নিচার দিয়ে স্টল সাজিয়েছি। মেলায় প্রচুর দর্শণার্থী আছে কিন্তু ক্রেতা কম। তবে অনেকেই পরে ক্রয় করবেন। তাই শো-রুমের ঠিকানা নিয়ে যাচ্ছেন।'
শিক্ষা উপকরণ বিক্রয় স্টল পেনটিলের বিক্রয় প্রতিনিধি শাহরিয়ার আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, 'আমাদের স্টলে বিভিন্ন ধরনের কলম, পেন্সিল, জ্যামিতি বক্স ও রং তুলিসহ শিক্ষা উপকরণ রয়েছে। ক্রেতাদের কাছে প্রচুর চাহিদাও রয়েছে। আর বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর।'
মডার্ণ হারবাল পণ্যের বিক্রয় প্রতিনিধি নুসরাত জাহান বলেন, 'হারবাল পণ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে এর বেশ চাহিদা রয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে আরও ভালো বিক্রয় হবে বলেও আশা করছি।'
ভারত থেকে আগত কাশ্মীর ক্রাফ্টের বিক্রয় প্রতিনিধি জাকের আহমেদ বলেন, 'এবারের মেলায় আশাতীত বেশি বিক্রি হচ্ছে। বিশেষত কাশ্মীরি শাল, শাড়ি আর থ্রি-পিস সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে।'
মেলার আয়োজক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, 'স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই মেলা পরিচালনা করা হচ্ছে। দর্শণার্থীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মাস্কবিহীন মেলায় ঘোরাফেরা করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হবে।'
-এমএ
