ভারত সবক্ষেত্রেই বাংলাদেশকে প্রাধান্য দেয় বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট
রামনাথ কোবিন্দ।
মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘মহান বিজয়ের মহানায়ক’ অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ভারতীয় রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবন সংগ্রাম আমাদের প্রেরণা যোগায়।
মহান বিজয় দিবসে বাংলাদেশের জনগণকে বাংলায় অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান, ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
রামনাথ কোবিন্দ বক্তব্যের শুরুতে বলেন, নমস্কার, শুভসন্ধ্যা, আসসালামু আলাইকুম। আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বকে ভারত সবসময় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। বন্ধুত্বের পূর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবায়ন করতে সহায়তা করার জন্য আমরা যথাসাধ্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রামনাথ কোবিন্দ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা ধারাবাহিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, মানুষে-মানুষে সম্পর্ক, ছাত্র বিনিময় এবং সহযোগিতার একাধিক ক্ষেত্রে ব্যাপক কর্মকাণ্ড দেখেছি। এর সবই আমাদের পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সার্বভৌম, সমতা এবং আমাদের নিজ নিজ দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে একটি টেকসই ও গভীর বন্ধুত্বের নিশ্চয়তা। আমাদের প্রচেষ্টাগুলো এই দৃষ্টিভঙ্গিতে অনুপ্রাণিত হয়েছে।
গত এক দশকে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেন তিনি। বলেন, আমরা গত এক দশকে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছি, যা বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবায়নের সুযোগও তৈরি করেছে। ভৌগোলিক সুবিধা ও আপনাদের দেশের চমৎকার অর্থনৈতিক সাফল্য সমগ্র উপ-অঞ্চল এবং বিশ্বকে উপকৃত করতে পারে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একটি ক্রমবর্ধমান ধারণা রয়েছে যে, ঘনিষ্ঠ উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং সংযোগ স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সোনার বাংলা গঠনের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশ একটি বিস্ময়কর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, উর্বর জমি এবং নদীবিধৌত অনন্য দেশ। এটি কবি, শিল্পী, পণ্ডিত ও চিন্তাবিদদের দেশ। ঐতিহাসিকভাবে এই ভূখণ্ডের মানুষ সব সময় শিল্প এবং পাণ্ডিত্যকে গভীরভাবে মূল্যায়ন করেছে। আপনারা সর্বদা আপনাদের জাতীয় পরিচয়ে প্রভাবশালী এবং ঐক্যবদ্ধ উপাদান-মন, সংস্কৃতি এবং ভাষার সাধনাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। ফলস্বরূপ আপনাদের ইতোমধ্যেই একটি সুসঙ্গত, সম্প্রীতিপূর্ণ এবং গতিশীল সমাজের অনন্য মেলবন্ধন রয়েছে।
দুই দেশের অংশীদারত্বের প্রথম ৫০ বছর অসাধারণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শুরু হয় বলে জানিয়ে রামনাথ কোবিন্দ বলেন, এতে জনগণের মধ্যে একটি গভীর বন্ধুত্ব তৈরি করে। তাহলে সম্ভবত এই সীমাকে আরও বৃদ্ধি করার সময় এসেছে। এটি অর্জনের জন্য আমাদের ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ এবং বিশেষ করে আমাদের যুবকদের ধারণা, সৃজনশীলতা, বাণিজ্য এবং প্রযুক্তির জগতে যৌথভাবে বিশ্বব্যাপী অগ্রগামী উদ্যোগ তৈরিতে অনুপ্রাণিত করতে হবে।
দুই দেশের উদ্ভাবকদের সাধারণ উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য স্থানীয়ভাবে উপযুক্ত প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে নতুন সমাধান খুঁজে বের করার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
এসময় তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্মরণ করেন। অনুষ্ঠানে তিনি বিদ্রোহী কবিতার কয়েক চরণ বাংলায় আবৃত্তি করেন।
আবৃত্তি করা কবিতার লাইনগুলো হলো-
‘মহা-বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না-
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।অনুষ্ঠানে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে ‘মুজিব চিরন্তন শ্রদ্ধা স্মারক’ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসআর