যশোরে ৫ লক্ষাধিক টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জমি কেনাবেচা
Published : Wednesday, 17 November, 2021 at 1:14 PM Count : 678
যশোরে সাড়ে ৪ তলা ভবনের তথ্য গোপন করে জমি কেনাবেচায় ৫ লক্ষাধিক টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে।
যশোর সাব রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, শহরের পুরাতন কসবা মিশনপাড়া এলাকায় দাতা আব্দুল মোতালেব মিসেস শেফালি খাতুনের কাছে কসবা মৌজার ৯৩নং দাগে ৪ শতক জমি বিক্রি করেছেন। যার সরকারি দালিলিক মূল্য ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। গত ১৫ জুলাই জমিটি যশোর রেজিস্ট্রি অফিসে সাব-কেবলা রেজিস্ট্রি হয়েছে। যার ক্রমিক নং-৯৩৭৩/২০২১। দলিলে জমিটি বাস্তু শ্রেণির এবং জমিতে কোনো স্থাপনা নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সরেজমিন তদন্তে ওই জমিতে সাড়ে ৪ তলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি (ভবন) দেখা যায়। যে ভবনটির গায়ে এবং সীমানা প্রাচীরে মিসেস শেফালি খাতুন (জীবু) এবং স্বামী মো. আবুল বাশার (পুলিশ) হোল্ডিং নং-১১৬৬-০০, ওয়ার্ড নং-৫, ১৭৯ মিশনপাড়া, পুরাতন কসবা লেখা আছে। সরকারি হিসেবে পুরাতন কসবা মৌজায় জমির মূল্য শতক প্রতি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৫৭৫ টাকা এবং জমিতে স্থাপনা থাকলে সেটির ১২০০ টাকা স্কয়ার ফিট হিসেবে শতকরা সাড়ে ৮ শতাংশ (যশোর পৌর এলাকা) সরকারি রাজস্ব জমা দিতে হয়। সে হিসেবে সাড়ে ৪ তলা বাড়িটিতে যদি প্রতি তলাতে ১৩০০ স্কয়ার ফিট জায়গাও ধরা হয় তবে পুরো বাড়িটিতে ৫২০০ স্কয়ার হিসেবে সরকারি রাজস্ব দিতে হবে। সে হিসেবে প্রায় ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা সরকারি রাজস্ব জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু দাতা এবং দলিল লেখক সুচতুরভাবে ঐ জমিতে কোনো স্থাপনা নাই উল্লেখ করে সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছেন অন্যান্য দলিল লেখকরা।
বিষয়টি জানতে জমিটির দলিল লেখক ফিরোজ আল মাহমুদকে ফোন করে জমিতে কোনো স্থাপনা আছে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘তাতো আমি জানি না ভাই।’ না জেনে রেজিস্ট্রি করা ঠিক হয়েছে কিনা উত্তরে তিনি বলেন, ‘জানতে হলে কোর্ট জানবে, অফিস জানবে এবং যিনি রেজিস্ট্রি করেছেন তারা জানবে। আমাদের কাজ হচ্ছে পার্টি এসে যেটা বলবে সেটা।’ রেজিস্ট্রার কিভাবে জানবে উত্তরে ফিরোজ বলেন, ‘সেটাতো আমি বলতে পারবো না। তবে রেজিস্ট্রার যদি জানার প্রয়োজন মনে করে তবে তদন্ত করবে। এই দায়িত্ব আমার না। ওটা রেজিস্ট্রি অফিসারের দায়িত্ব। আর যদি কোনো অভিযোগ বা সমস্যা হয়ে থাকে তবে যার সম্যসা হচ্ছে, সে কোর্টে মামলা করুক আদালত বুঝবে।’
এ বিষয়ে জমি দাতা আব্দুল মোতালেকে তার মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
জমিটি রেজিস্ট্রির বিষয়ে যশোর রেজিস্ট্রি অফিসের সাবরেজিস্ট্রার রফিকুল আলম বলেন, আমার কাছে যেমন কাগজ এসেছে, সেটি যাচাই-বাছাই করেই জমি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে।
এদিকে স্ট্যাম্প আইনে বলা হচ্ছে, দলিলে যদি কোনো কৌশলগত, ত্রুটিপূর্ণ, মিথ্যা, অসম্পূর্ণ বা ভুয়া তথ্য থাকে তবে তার জন্য দলিল সম্পাদনকারী (দাতা) এবং প্রস্তুতকারী (দলিল লেখক) দায়ী থাকবেন। আবার দলিল লেখক সনদের ২০নং অনুচ্ছেদে বলা হচ্ছে, ‘হস্তান্তরিত সম্পত্তির সঠিক পরিচয় এবং বাজারমূল্য সম্পর্কে সম্যক অবহিত হইয়া আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী অত্র দলিলের মুসাবিদা/লিখিয়া দিয়াছি এবং পক্ষগণকে পাঠ করিয়া শুনাইয়াছি।’ তাই এক্ষেত্রে দাতা বা প্রস্তুতকারক উভয়ই সুচতুরভাবে জমির দলিল সম্পন্ন করেছেন। যে কারণে সরকার প্রায় ৫ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব হারিয়েছে বলে জানিয়েছেন যশোর দলিল লেখক সমিতির অন্যান্য সদস্যরা।
-এসকে/জেডআর/এনএন