ফেসবুকে ইতালি প্রবাসীর স্ত্রী সুরভীর আক্তারের (২৯) পরিচয় হয় নাজমুল হোসেন ওরফে আলভী (২২) নামের এক যুবকের সঙ্গে। প্রথমে কথাবার্তা পরে পরকীয়া সম্পর্ক। এক সময় পরকীয়া প্রেমিকের ভরসায় ঘর ছাড়ে সুরভী আক্তার।
প্রবাসী স্বামীকে ছেড়ে পরকীয়া প্রেমিক আলভীর হাত ধরে উঠে ভাড়া বাসায়। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই লাশ হতে হলো সুরভীকে।
শুক্রবার রাতে রাজধানীর দক্ষিণখানের গোয়ালটেক এলাকার জামে মসজিদ রোডের ১২৫/১ নম্বর বাসায় এ ঘটনা ঘটে।
পরে সুরভীকে উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায় তার প্রেমিক আলভী। কিন্তু ততক্ষণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে সুরভী।
হাসপাতালে লাশ ফেলে পালানোর চেষ্টা করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে আলভীকে। রাতেই নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে নিহত সুরভীর বাবা শাহজাহান বাদি হয়ে দক্ষিণখান থানায় আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগে একটি মামলা করেন।
যদিও নিহত সুরভীর স্বজনরা বলছেন আলভী তার দ্বিতীয় স্বামী। কিন্তু পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা।
গ্রেফতার নাজমুল হোসেন ওরফে আলভী সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার তেগানী গ্রামের বাসিন্দা।
নিহতের ভাই সোহাগ বলেন, '২০০৯ সালে ইতালি প্রবাসী সাঈফের সঙ্গে বিয়ে হয় সুরভীর। কিন্তু সে দেশে না আসায় তার সঙ্গে সম্পর্ক টিকেনি সুরভীর। পরবর্তীতে ফেসবুকের মাধ্যমে আলভীর সঙ্গে ২০১৮ সালের শেষ দিকে পরিচয় হয় তার। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তীতে তারা আমাদেরকে না জানিয়েই গত বছর বিয়ে করে। সেই ছেলে কোন কিছুই করতো না, ধান্দাবাজি করেই চলতো। যদিও ওই বিয়েতে আমাদের সম্মতি ছিল না।'
তিনি বলেন, 'শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর আনুমানিক সোয়া ২টার দিকে আলভী আমার মা'কে ফোন করে বলে সুরভী ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে আছে। পরে আমরা হাসপাতালে নিয়ে দেখি বোন আর নেই। আর তার স্বামীকে আটকে রেখে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।'
সোহাগ আরও বলেন, 'সুরভীর গলায় ফাঁসের দাগ, হাতে কামড়ের দাগ, পিঠ ও পেটে মারধরের চিহ্ন রয়েছে। আমাদের ধারণা কয়েকজন মিলে সুরভীকে হত্যা করেছে। তবে কি কারণে হত্যা করা হয়েছে তা জানা নেই।'
তিনি বলেন, 'আমার বোন তো আমি জানি। ও সুইসাইড করার মত মেয়ে না। ওদের সঙ্গে বনিবনা না হলে আমাদের বাসায় চলে আসতো। কারণ আমাদের কাছ থেকে ও সাপোর্ট পেত, তা ভালো করেই জানে।'
সুরভীর মামা বোরবান উদ্দিন বলেন, 'ওই ছেলের সঙ্গে সুরভীর ফেসবুকে পরিচয়। পরে ছেলেটা ওকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে আসছে সাত/আট মাস হবে। এখন আলভী বলছে সে নাকি সুরভীকে বিয়েই করেনি।'
তিনি বলেন, 'আমি ধারণা করছি সুরভীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। আর যদি ও নিজে ফাঁসি আত্মহত্যা করতো তাহলে ওর জিহ্বা বের হয়ে থাকতো। সেই সঙ্গে আরও বেশ কিছু সিমটম থাকতো। যা সুরভীর মরদেহে ছিল না।'
নিহতের খালাতো ভাই মারুফ হোসেন বলেন, 'সুরভী ও আলভীর সম্পর্কে বিষয়টি বাড়িতে জানানো নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। পরে একপর্যায়ে সুরভীকে হত্যা করে লাশ হাসপাতালে রেখে পালাতে গেলে লোকজন আলভীকে আটক করে।'
এ বিষয়ে দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মামুনুর রহমান অবজারভারকে বলেন, সুরভীর বাবা বাদি হয়ে দক্ষিণখান থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছে। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আত্মহত্যার প্ররোচণার মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া যুবক জানায় নিহত সুরভী ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাকালে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেছে। সুরভীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়নি বলেও জানায় সে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
হত্যা মামলা কেন নেওয়া হলো না জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।
-এমআর/এমএ