বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক মানবতার অভিন্ন স্বার্থে দৃঢ় অংশীদারত্ব গড়ে তোলার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেস্কোর ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ফ্রান্সের প্যারিসে সংস্থাটির সদর দপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁর সরকার সহিষ্ণুতা ও মর্যাদা সঞ্চারের মাধ্যমে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ লক্ষ্যে আমরা শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও যোগাযোগকে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছি।’
ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজোলে এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আমাদের সাফল্য উদযাপনের এক অনন্য মুহূর্ত। এছাড়া এটি শতবর্ষ উদযাপনের আগে পরবর্তী ২৫ বছরে সংস্থার কার্যকলাপগুলোকে পুনর্বিবেচনা ও আত্মসমালোচনা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ্য।’
তিনি বলেন, ‘ইউনেস্কোর নীতির প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার ১৯৭২ সালে আমাদের প্রাথমিক সদস্যপদ লাভের মাধমে প্রতিফলিত। আমরা এ সংগঠনকে বিশ্ব শান্তি এবং সম্মিলিত সমৃদ্ধি জোরদারের জন্য অন্যতম কার্যকর মঞ্চ হিসেবে বিবেচনা করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শান্তি-কেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতিতে পরিচালিত বাংলাদেশ সব সময় বিশ্ব শান্তি উদ্যোগের অগ্রভাগে থাকে। শীর্ষ অবদানকারী হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় আমাদের অংশগ্রহণ এমনই একটি ঘটনা।’
তিনি বলেন, ‘বৃত্তি প্রদান, লিঙ্গ-সংবেদনশীল দৃষ্টি ভঙ্গি, স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম এবং আইসিটি শিক্ষার মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে শিক্ষায় আমাদের বিনিয়োগ প্রচুর।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাঁর সরকার স্কুলে বছরের শুরুতে প্রায় চার কোটি ২০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে ৪০ কোটি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ মহাপরিকল্পনা আইসিটি ভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের শিক্ষা মহাপরিকল্পনায় আইসিটি চালু করেছি। এর আওতায় প্রায় ৮৩ হাজার স্কুলকে আইসিটি ডিভাইস সরবরাহ করা হয়েছে এবং তিন লাখ ২৬ হাজার ৯৩৬ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনেস্কোর ঐতিহাসিক ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী ইউনেস্কোর মহাপরিচালককে অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউনেস্কো বিশ্বের জন্য আশা ও শান্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ কারণ আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন একই সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন শান্তির প্রবক্তা এবং মানবতায় দৃঢ় বিশ্বাসী। মানুষের অদম্য কর্মস্পৃহা, অসম্ভবকে সম্ভব করার ও অনতিক্রম্য বাধা অতিক্রম করার ক্ষমতায় তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) গভীর আস্থা ইউনেস্কোর চেতনা অনুরণিত করে।’
শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার ‘সৃজনশীল অর্থনীতি’র জন্য ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠানে যোগদানের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘এ আন্তর্জাতিক পুরস্কার অবশ্যই সৃজনশীল উদ্যোক্তা বিকাশে উৎসাহ যোগাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইউনেস্কো জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে একটি প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করায় ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ স্থান দেওয়ায় তিনি কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘জনগণের নেতাকে এ ধরনের গভীর শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আমি ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানাই।’
‘কোভিড-১৯ মহামারি বহু মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে এবং আমাদের জীবন বদলে দিয়েছে’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি আমাদেরকে উদ্ভাবনী কাজ ও গতির মাধ্যমে বেঁচে থাকতেও শিখিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারের পথে থাকা বিশ্বের সামনে চারটি পরামর্শ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আসুন আমাদের বিশ্ব মানবতার অভিন্ন কল্যাণের জন্য দৃঢ় অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে এ মুহূর্তটি কাজে লাগাই।’
প্রধানমন্ত্রী তার প্রথম পরামর্শে মহামারি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে মারাত্মক ভাবে ব্যাহত করেছে উল্লেখ করে বলেন, ‘পুনরুদ্ধারের জন্য, ডিজিটাল সরঞ্জাম ও পরিষেবা, ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ, ডিজিটাল বিষয়বস্তু এবং শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে আমাদের একটি বৈশ্বিক পরিকল্পনা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তি-সহায়ক অর্থপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ তৈরির জন্য অবশ্যই সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব গড়তে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর তৃতীয় পরামর্শে কোভিড-১৯ টিকাকে অবশ্যই একটি ‘বৈশ্বিক গণপণ্য’ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত বলে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই সবার কাছে, বিশেষ করে, বিশ্বব্যাপী ছাত্র ও শিক্ষকদের কাছে টিকা লাভের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।’
চতুর্থ পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের জনগণের কল্যাণের জন্য প্রযুক্তি স্থানান্তরকে গুরুত্ব দিয়ে বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার সুবিধাকে কাজে লাগাতে হবে।’
-এমএ