প্রথমবারের মতো তেঁতুলিয়ায় চাষ হচ্ছে ‘পেরিলা’
Published : Saturday, 23 October, 2021 at 1:05 PM Count : 457
প্রথমবারের মতো পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় চাষ হচ্ছে কোরিয়ান তেলবীজ ফসল ‘পেরিলা’। সূর্যমূখী ও সরিষার মতো পেরিলার বীজ থেকেও উৎপন্ন হয় ভোজ্যতেল।
চীনে পেরিলার আদি নিবাস হলেও দক্ষিণ কোরিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তৃতির কারণে বিশ্বে এটি কোরিয়ান পেরিলা নামে পরিচিত। দেশের এই পেরিলার ফসলের সঙ্গে অধিকাংশ কৃষক এখনো তেমন অবগত না হলেও উৎপাদন নিয়ে চলছে নানা গবেষণা।
তেলবীজ জাতীয় ফসলটিকে কৃষকদের মাঝে পরিচিত ও আবাদে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের হারাদিঘী কাজী পাড়া গ্রামের প্রথমবারের মতো পরিক্ষামূলক ভাবে দুই একর জমিতে পেরিলা চাষ করছেন সৈয়দ রোকনুজ্জামান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তরতাজা পেরিলা গাছে ফুল এসেছে। প্রথমত সবুজ পেরিলা দেখতে মনে হয়েছিল সবুজের এক সমারোহ কিংবা কোন শাক সবজির বাগান। দেখতে অনেকটা পান পাতার মতো এবং প্রতিটি পাতা সবুজ বর্ণের।
কৃষক সৈয়দ রোকনুজ্জামান বলেন, কৃষি অফিস থেকেই আমাকে বীজ দেওয়া হয়। জমিটি পতিত থাকায় সিদ্ধান্ত নিলাম নতুন ফসল চাষ করে দেখি কি হয়। তেঁতুলিয়ায় এই প্রথম আমি পেরিলা চাষ করছি। ফলনও মোটামুটি ভালো হয়েছে।
তিনি বলেন, পেরিলা ক্ষেতে মৌমাছির ব্যাপক আনাগোনা দেখা যায়। পেরিলা চাষের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভাবে মধু চাষ করাও সম্ভব। ফলনে লাভজনক হলে আগামীতে আরও অধিক জমিতে পেরিলা ও মধু চাষ করব।
জানা যায়, জাতটি দেশিয় ভাবে উদ্ভাবন করেছেন শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজননবিদ প্রফেসর ড. এইচ এম এম তারিক হোসেন ও পিএইচডি ফেলো মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম মজুমদার। পেরিলার বৈশিষ্ট্য হিসেবে রয়েছে উচ্চমাত্রা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড (৫০-৬০ শতাংশ), অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড প্রায় ৯২ শতাংশ, ক্ষতিকর ই্রুসিক এসিডমুক্ত, জাতটি মিন্ট পরিবার ভুক্ত হওয়ায় তেলের সুগন্ধ রয়েছে। এটি বন্যামুক্ত যেকোনো ধরনের জমি বা মাটি, প্রচলিত তেল ভাঙ্গানোর মেশিনে বীজ থেকে তেল আহরণ করা যাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত আউস আবাদের পর কৃষকের জমিগুলো পতিত পড়ে থাকে। এ সময়টাতে কেউ সরিষা আবাদ করে। যেহেতু এই ফসল আড়াই মাসে উঠে যায় তাই কৃষকদের জমি পতিত না রেখে পেরিলা আবাদ করলে ভালো একটি ফসল উঠে আসবে। ৭০-৭৫ দিনের মধ্যে এই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। সেই দিক থেকে একই জমিতে একাধিক ফসল করা যায়।
তিনি আরও বলেন, পেরিলার পাতা সবজি ও বীজকে তেল উৎপাদনে কাজে লাগিয়ে দু'ভাবে ব্যবহার করা যায়। পেরিলার ফুল এলে ক্ষেতে মৌমাছির ব্যাপক আনাগোনা থাকায় বাণিজ্যিক ভাবে মধু চাষের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে পেরিলার চাষ ব্যাপকতা বাড়াতে পারলে দেশের অর্থনৈতিক সেক্টর আরও সমৃদ্ধ হবে। তাই জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের দিককে গুরুত্ব দিয়ে এই ফসল চাষ শুরু করা হয়েছে। অন্যদিকে মানব শরীরের জন্যও এই তেল অনেক উপকারী। পেরিলায় শতকরা ৬৫ ভাগই ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে যা বিশেষত হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক, ত্বকসহ ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধে এটি কার্যক্রর ভূমিকা রাখবে।
-এসকে/এমএ