কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর সমুদ্র মোহনা থেকে এক পর্যটকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত পর্যটকের চার বন্ধুকে আটক করেছে পুলিশ।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ হোসেন জানান, শনিবার দুপুর ১টায় কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক এলাকার বাঁকখালী নদীর সমুদ্র মোহনা থেকে ভাসমান অবস্থায় মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিহত মেহের ফারাবি অগ্র (২৭) যশোর জেলার কুতুব আলী থানার ইবনে মিজান আলফা’র ছেলে।
আটককৃতরা হলেন- যশোরের একই এলাকার মাসুদুর রহমানের ছেলে মো. রায়হান উদ্দিন, মৃত মো. মুমিন উদ্দিনের ছেলে রোহান উদ্দিন, শওকত হাসানের ছেলে মুহিবুল হাসান ও মাহফুজুর রহমান খানের ছেলে ফারদিন খান আরণ্যক। তারা মেহের ফারাবি অগ্রের সঙ্গে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছিল।
এর আগে শুক্রবার বিকালে কক্সবাজার সৈকতের সী-গাল পয়েন্ট সাগরে গোসলে নেমে রাফিক ঐশিক (২৬) নামের এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছিল। তিনি যশোর জেলার কুতুব আলী থানার কাসাদ্দুস জামালের ছেলে।
প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাফিক ঐশিক ও মেহের ফারাবি অগ্র এক সঙ্গে সাগরে গোসল করতে নেমেছিল। শুক্রবার বিকালে সৈকতের লাইফগার্ড কর্মিরা রাফিক ঐশিককে মূর্মুার্ষাবস্থায় উদ্ধার করলেও মেহের ফারাবি অগ্র নিখোঁজ ছিল। তারা বেড়াতে আসা ৭ বন্ধু মিলে সাগরে গোসল করতে নেমেছিল। কিন্তু অন্য বন্ধুরা এক বন্ধুকে মূর্মুর্ষাবস্থায় উদ্ধার এবং আরেক বন্ধু নিখোঁজের ব্যাপারে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের কাছে অবহিত করেননি।
সৈয়দ মুরাদ হোসেন বলেন, দুপুরে কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক এলাকার বাঁকখালী নদীর সমুদ্র মোহনায় একটি মৃতদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে অজ্ঞাত এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
“এর আগে শুক্রবার বিকালে সাগরে গোসলে নেমে স্রোতের টানে ভেসে যাওয়ার সময় এক যুবককে মূর্মুর্ষবস্থায় লাইফগার্ড কর্মিরা উদ্ধার করে। পরে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা, মৃত্যু হওয়া যুবকটিকে পর্যটক বলে ধারণা করলেও তার পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি।”
পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, “এদিকে শুক্রবার বিকালে সাগরে গোসলে নেমে মৃত্যু হওয়া পর্যটক এবং শনিবার দুপুরে বাঁকখালী নদীর মোহনা থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার যুবকের পরিচয় জানতে বিচ কর্মিরা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে মাইকিং করছিল। দুপুরে এক পর্যায়ে ৪ জন যুবক এসে বিচ কর্মিদের জানায় শুক্রবার সাগরে গোসলে নেমে তাদের দুই বন্ধু নিখোঁজ রয়েছে।”
“পরে বিচ কর্মিরা দুই পর্যটক নিখোঁজের বিষয়টি ট্যুরিস্ট পুলিশসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের কাছে অবহিত করে। এরপর খোঁজ নিতে আসা ৪ বন্ধুকে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় তারা মৃতদেহ দুইটি দেখার পর দুই বন্ধুর পরিচয় নিশ্চিত করেছে” বলেন, সৈয়দ মুরাদ হোসেন।
খোঁজ নিতে আসা বন্ধুদের বরাতে তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার যশোর থেকে ৭ বন্ধু মিলে কক্সবাজার বেড়াতে আসে। এরপর তারা কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনের হোটিল বিচ হলিডে’তে উঠেন। শুক্রবার বিকালে বন্ধুরা মিলে সৈকতের সী-গাল পয়েন্ট সাগরে গোসলে নামে।
“কিন্তু এক বন্ধুর মৃত্যু এবং আরেক বন্ধুর নিখোঁজের ব্যাপারে পুলিশসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের কাছে অবহিত করেননি। শনিবার নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত হতে বিচ কর্মিরা মাইকিংয়ের সময় ৪ বন্ধু খোঁজ নিতে আসে। তথ্য গোপনের পাশাপাশি আচরণ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
উদ্ধার দুই পর্যটকের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে বলে জানান সৈয়দ মুরাদ হোসেন।
এফআই/এসআর