For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের জঘন্যতম হামলার ২০ বছর

Published : Saturday, 11 September, 2021 at 10:35 AM Count : 550

পৃথিবীর অন্যসব দেশের মানুষের মতো মার্কিনিরাও ধারণা করতে পারেনি যে, সামরিক শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বেষ্টনী এড়িয়ে দেশটির ইতিহাসের জঘন্যতম হামলা হতে পারে। প্রতি বছর ১১ সেপ্টেম্বর যেন বার বার সেই ভয়াল হামলার দুঃসহ স্মৃতির কথাই মনে করিয়ে দেয়। সে স্মৃতি মার্কিনিরা ছাড়াও আরও ৭৮টি দেশের নাগরিকরা বয়ে বেড়াচ্ছেন, যাদের দেশের মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল সেই নারকীয় হামলায়। ওই হামলার দিনটি সারা বিশ্বে ‘নাইন-ইলেভেন’ নামে পরিচিত। আজ সেই ‘নাইন-ইলেভেন’-এর ২০তম বার্ষিকী।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে জড়িত ১৯ জঙ্গি চারটি বিমান ছিনতাই করে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি স্থানে। সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে আমেরিকান এয়ারলাইনসের ‘ফ্লাইট-১১’ বোস্টন থেকে উড়ে এসে হামলে পড়ে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর ভবনটিতে। 

জানা যায়, হামলা চালানোর আগে সকাল ৮টা ১৯ মিনিটে একজন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট সতর্ক করেন, তাঁদের উড়োজাহাজ ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েছে। তিনি জানান, ককপিট থেকে কোন উত্তর আসছে না এবং ছিনতাইকারীদের কাছে বিস্ফোরক রয়েছে। এছাড়া জানানো হয়, এক যাত্রীসহ দুজন অ্যাটেনডেন্টকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। পরে জানা যায়, হামলার শিকার হওয়া ওই যাত্রীর নাম ড্যানিয়েল লেউইন। তিনি ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। ধারণা করা হয়, তিনি ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে উড়োজাহাজের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন এবং নাইন-ইলেভেনের হামলায় তিনিই প্রথম ভুক্তভোগী।

এ হামলার বিষয়টি ঠিকমতো বুঝতে না বুঝতেই ১৭ মিনিট পর ৯টা ৩ মিনিটে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দক্ষিণ ভবনে আছড়ে পড়ে ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের ফ্লাইট-১৭৫। সেটিও বোস্টন থেকে উড়ে এসে হামলা চালায়। 
পরে জানা যায়, উড়োজাহাজটি ছিনতাইয়ের পরই একজন অ্যাটেনডেন্ট ইউনাইটেড এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছে এবং দু'জন পাইলটই নিহত হয়েছেন। তবে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়েও শেষরক্ষা হয়নি কারো।

ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে এ দুই নারকীয় হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন দুই হাজার ৭৫৩ জন মানুষ। এছাড়া ভবনে আটকেপড়া অনেকেই বাঁচার জন্য ভবন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সে হামলায় নিহতদের বয়স ছিল দুই থেকে ৮৫ বছরের মধ্যে।

ওই হামলার পরই তাৎক্ষণিক ভাবে জরুরি উদ্ধার কাজ পরিচালনা করা হয়। কিন্তু হামলার পর ভবন ধসে পড়ায়, ভবনে থাকা অন্যদের সঙ্গে নিহত হন উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া নিউ ইয়র্ক ফায়ার সার্ভিসের ৩৪৩ কর্মী, নিউইয়র্ক সিটির ২৩ পুলিশ কর্মকর্তা ও বন্দর কর্তৃপক্ষের ৩৭ কর্মকর্তা। এছাড়া হাজারও মানুষকে আহত অবস্থায় ভর্তি করা হয় বিভিন্ন হাসপাতালে।

এ দুই ভয়াবহ হামলার এক ঘণ্টার মধ্যে ৯টা ৩৭ মিনিটে ওয়াশিংটনে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর পেন্টাগনে হামলে পড়ে আরও একটি উড়োজাহাজ। ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের ডালাস থেকে উড়ে আসা আমেরিকান এয়ারলাইনসের ফ্লাইট-৭৭-এর যাত্রীদের জিম্মি করে এ হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। ওই বিমানে তখন ছয় জন ক্রুসহ ৫৮ যাত্রী ছিলেন। এ হামলায় সামরিক কর্মকর্তা ও বেসামরিক নাগরিকসহ মোট ১২৫ জন নিহত হন। এছাড়া উড়োজাহাজে থাকা পাঁচ জঙ্গিসহ সব যাত্রীই নিহত হন।

একের পর এক হামলার মধ্যেই নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের নেওয়ার্ক থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকোর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের ফ্লাইট-৯৩ ছিনতাই করে জঙ্গিরা। পরে বিমানটি বিধ্বস্ত হয় পশ্চিম পেনসিলভানিয়ার শ্যাংকসভিল এলাকার একটি মাঠে। এতে বিমানে থাকা ৪৪ জনের সবাই নিহত হন। 

ধারণা করা হয়, হামলাকারীরা তাঁদের উদ্দেশ্য অনুযায়ী প্লেন হামলাটি চালাতে পারেনি। প্লেন ছিনতাইয়ের পরই যখন ক্রু ও যাত্রীরা নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, তখনই বিমানটি ইচ্ছাকৃত ভাবে বিধ্বস্ত করা হয়। 

জানা গেছে, ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের ফ্লাইট-৯৩ ছিনতাইয়ের পরই এক ছিনতাইকারী ঘোষণা দেয়, ‘ভদ্র মহোদয়া ও মহোদয়রা, আমি ক্যাপ্টেন বলছি। দয়া করে বসে থাকুন। আমাদের কাছে বোমা রয়েছে, তাই বসুন।’

যুক্তরাষ্ট্রে ধারাবাহিক এসব হামলায় সে দিন প্রাণ হারিয়েছিল অন্তত তিন হাজার মানুষ। ধারণা করা হয়, ওসামা বিন লাদেনের সংগঠন আল-কায়েদা এ হামলায় আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। ২০১১ সালের ০২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে মার্কিন বাহিনী। লাদেন সেখানে একটি বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন।

ধারণা করা হয়, নাইন-ইলেভেনের প্রধান পরিকল্পনাকারী ছিলেন আল-কায়েদা সংগঠনের সদস্য খালিদ শেখ মোহাম্মদ। তিনি পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০০৩ সালের মার্চে রাওয়ালপিন্ডি থেকে সিআইএ ও আইএসআইয়ের যৌথ অভিযানের সময় গ্রেফতার হন।

এ হামলা চালানোয় আল-কায়েদার অন্যতম ভরসা ছিলেন মোহাম্মদ আতা নামের এক মিসরীয়। মনে করা হয়, নাইন-ইলেভেনের হামলার অন্যতম নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। মোহাম্মদ আতা ১৯৬৮ সালে মিসরে জন্মগ্রহণ করেন এবং কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি জার্মানির হামবুর্গ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে পড়াশোনা করতে যান।

মোহাম্মদ আতা নাইন-ইলেভেনের হামলায় ব্যবহৃত আমেরিকান এয়ারলাইনসের ফ্লাইট-১১-এর চালকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। পরে জানা যায়, উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের পরই ৮টা ২৪ মিনিটে আতা ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আমাদের কাছে কয়েকটি প্লেন রয়েছে। আপনারা চুপ থাকুন, তাহলে আপনাদের কোন সমস্যা হবে না। আমরা আবারও বিমানবন্দরে ফিরে যাব।’ পরে এও বলা হয়, ‘কেউই নড়াচড়া করবেন না। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আপনারা যদি চলাচলের চেষ্টা করেন, তাহলে নিজেদের এবং বিমানের জন্য বিপদ ডেকে আনবেন। শুধু চুপচাপ থাকুন।’

এদিকে, হামলার দিন ফ্লোরিডার একটি স্কুল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। তিনি ৮টা ৫৫ মিনিটে জানতে পারেন, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বিমান হামলার ঘটনা ঘটেছে। 

এরপর ৯টা ৫ মিনিটে বুশের চিফ অব স্টাফ জানান, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আবারও প্লেন হামলা হয়েছে এবং আক্রমণের মুখে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

পরে সন্ধ্যা ৬টা ৫৪ মিনিটে হোয়াইট হাউসে পৌঁছান বুশ। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওভাল থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বুশ বলেন, ‘সন্ত্রাসী হামলা আমাদের উঁচু ভবনের ভিত নাড়িয়ে দিতে পারে, কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভিত স্পর্শও করতে পারবে না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘যারা এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে এবং যারা তাদের আশ্রয়দাতা, তাদের দুদলের মধ্যে কোন পার্থক্য আমরা করব না।’

নাইন-ইলেভেন হামলার পর ২০ সেপ্টেম্বর কংগ্রেসে এক ভাষণে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আল-কায়েদার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ শুরু হয়েছে, কিন্তু এখানেই তা শেষ হবে না। সব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পতনের আগে এ লড়াই শেষ হবে না।’

এরই অংশ হিসেবে ২০০১ সালের শেষ দিকে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায় মার্কিন সামরিক বাহিনী। আফগানিস্তানে যুদ্ধের মাধ্যমে নিজেদের ইতিহাসে দীর্ঘ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। তালেবান ও কথিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-কায়েদাকে নির্মূলে এবং ৯/১১ হামলার কথিত নকশাকারী ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার এই যুদ্ধে সহযোগী হিসেবে অংশ নেয় ইউরোপীয় সামরিক জোট ন্যাটো। এতে সে সময় মার্কিনিরাও ব্যাপক ভাবে সমর্থন জোগায়।

আফগানিস্তানের পর ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে মার্কিন প্রশাসন।

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,