বরগুনার বেতাগীতে বিষখালীর অব্যাহত ভাঙনে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নিশ্চিহ্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে ঝোপখালী, কালিকাবাড়ি ও বদনীখালীর প্রায় ১৫ হাজার পরিবার হুমকির মুখে পড়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকার এসব মানুষ চরম অনিশ্চয়তায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিষখালী নদীর পূর্ববর্তী এলাকায় বেতাগী বন্দর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দক্ষিণবাংলার ঐতিহ্যবাহী কাঠবাজার, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, সনাতন ধর্মালম্বীদের শত বছর পুরোনো কালি মন্দির ও শ্মাশ্বানঘাট, ডাক বাংলো, ঝোপখালী গ্রাম, পুরোনো থানাপাড়া, কেওড়াবুনিয়াসহ বিষখালী নদীর অব্যাহত ভাঙনে হুমকীর মুখে ২০ হাজার পরিবার। ৩ কিলোমিটারব্যাপী ভাঙনের কবলে পাল্টে যাচ্ছে বেতাগীর মানচিত্র ।
বিষখালী নদীর পশ্চিম দিকে ঝালকাঠী জেলার কাঠালিয়া উপজেলা, পূর্ব দিকে বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা অবস্থিত। উত্তরে ঝালকাঠীর সুগন্ধ্যা নদী ও বরিশালের কির্ত্তনখোলা নদীর সাথে প্রবাহমান। দক্ষিণে বলেশ্বর নদী ও বঙ্গোপসাগরের সাথে প্রবাহিত। নদীর স্রোত দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুরোনো থানা পাড়ার বিপরীত দিকে চর জেগে উঠায় নদীর স্রোত পরিবর্তিত হয়ে পূর্বদিক বেতাগী দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে ভেঙে যাচ্ছে বেতাগীর এ জনপদ
স্থানীয়রা জানায়, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সময় একটানা প্রবল বর্ষণ ও প্রায়শই নদীর পানি বৃদ্ধি এবং পৌর শহরের পশ্চিম দিকে শৌলজালিয়া এলাকায় ছৈলার চর নামক একটি নতুন চর জেগে ওঠায় নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে পূর্ব পাড়ে বেতাগীর পৌর শহর এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে।
কাঠবাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও দোকান মালিক অধ্যক্ষ মো. রফিকুল আমিন বলেন,‘ সরকারের শিকগিরই বন্দর রক্ষা তথা কাঠবাজার রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তা হলে যেভাবে ভেঙে যাচ্ছে ২/১ বছরের মধ্যে কাঠবাজারের অস্থিত্ব কিছুই থাকবে না।
এছাড়া উপজেলার নদীর তীরে রয়েছে সরিষামুড়ি ইউনিয়নের কালিকাবাড়ি গ্রাম, কালিকাবাড়ি বাজার, কালিকাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদরাসা, সার্বজনীন দূর্গা মন্দির, ফকিরেরর হাট, মায়ারহাট, ভোড়া কালিকাবাড়ি হাতেম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আলিয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের বলইবুনিয়া গ্রাম, বলইবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বলইবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বলইবুনিয়া জামে মসজিদ রয়েছে।
সরিষামুড়ি ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আবু তালেব মুসুল্লী জানান, তাদের শিশুকাল থেকে এই বিষখালী নদীর ভাঙন দেখে আসছেন।
শত বছরের পুরোনো বেতাগীর সনাতন ধর্মালম্বীদের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী কালিমন্দির আর কিছু দিনের মধ্যে বিষখালী নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে বন্দন ব্যবসায়ী সমিতি সভাপতি ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি পরেশ চন্দ্র কর্মকার বলেন, ‘বেতাগী বন্দর অতি পুরাতন, এ বন্দর কালিমন্দির ও শ্মশ্বাণঘাটকে রক্ষার জন্য সরকারের জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার । ’
বেতাগী সদর ইউনিয়নের ঝোপখালী ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দা সমাজসেবক আব্দুস সোবাহান বলেন , ‘আমরা অরক্ষিত অবস্থায় আছি। এ ব্যাপারে সরকার যদি অতি দ্রুত ব্যাবস্থা না নেয়, তাহলে এর অস্থিত্ব হারিয়ে যাবে।'
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম ২০১৯ সালের ১৪ জুন বেতাগীর বিষখালী নদীতে ভংঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে বেতাগী পৌর শহরসহ বিষখালীর অব্যাহত ভাঙনকবলিত এলাকা রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
এছাড়া বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ শওকত হাচানুর রহমান রিমন জাতীয় সংসদে পাউবোর শহররক্ষা বাঁধ প্রকল্পে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি উপস্থাপন করেন। কিন্তু এসব কেবল আশ্বাসের মধ্যেই থেকে যায়।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার আহমেদ বলেন, ‘নদী ভাঙনরোধে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় অর্থ বরাদ্দের চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। প্রয়োজীয় অর্থ বরাদ্দ পেলে ভাঙনরোধে কাজ হবে।’
-এসকে/এনএন