For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

উপহারের পাকা ঘরে ঠাঁই পাচ্ছে ২৪১৬ পরিবার

Published : Tuesday, 24 August, 2021 at 11:01 AM Count : 788

আজ থেকে ক’বছর আগেও ছিল না তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই। মানুষের জমিতে বা রাস্তার ধারের সরকারি জমিতে খড়, বাঁশ অথবা টিনের ছাপড়া তৈরি ঘরে দিনযাপন করতে হতো তাদের।

সামান্য বৃষ্টিতে ঘরের ভেতরেই জড়োসড়ো হয়ে থাকতে হতো। তারা কোন দিন কল্পনাও করতে পারেনি একদিন তাদের হবে পাকা বাড়ি। তাদের ভাগ্যে এখন জুটেছে জমির মালিকানাসহ পাকা বাড়ি। রয়েছে বিদ্যুৎ সুবিধাও। 

সারাদিন কাজ শেষে মহা আনন্দে শান্তির ঘুম দিতে পারছে তারা। দুই কক্ষের এসব ঘরে সংযুক্ত শৌচাগারসহ থাকছে রান্না ঘর ও বারান্দা। নিরাপদ পানির জন্য টিউবওয়েল ও বিদ্যুৎ সুবিধা।  যা একটি ছোট পরিবার থাকার জন্য যথেষ্ট। 

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে এসব ঘরে ঠাঁই হয়েছে হাজারো ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষদের। তাদের সুখের এই দিনে তারা প্রধানমন্ত্রীকে দোয়া আর আশির্বাদ জানাতে ভুলে যাননি। 
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড় জেলায় জমি নেই ঘর নেই এমন ‘ক’ তালিকাভূক্ত পরিবারের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৫৪৩টি, ১০ শতাংশ পর্যন্ত জমি আছে কিন্তু ঘর নেই এমন ‘খ’ তালিকাভূক্ত পরিবারের সংখ্যা দুই হাজার ৯৯১টি এবং ১০ শতাংশ পর্যন্ত জমি আছে, ঘর আছে কিন্তু জরাজীর্ণ এমন ‘গ’ তালিকাভূক্ত পরিবারের সংখ্যা দুই হাজার ৩২১টি। প্রথম দফায় ‘ক’ তালিকাভূক্ত এক হাজার ৫৭টি পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। 

এর মধ্যে পঞ্চগড় সদর উপজেলায় ২০৮টি, বোদা উপজেলায় ৫৫টি, দেবীগঞ্জ উপজেলায় ৫৮২টি, তেঁতুলিয়া উপজেলায় ১৪২টি এবং আটোয়ারী উপজেলায় ৭০টি। আর দ্বিতীয় দফায় দেয়া হবে এক হাজার ৩৫৯টি পরিবারকে ঘর। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৬৩৬টি, বোদা উপজেলায় ১৭টি, দেবীগঞ্জ উপজেলায় ৪৫১টি, তেঁতুলিয়া উপজেলায় ১৩৫টি এবং আটোয়ারী উপজেলায় ১২০টি পরিবারকে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে অর্ধেক পরিবারের কাছে এসব ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি অর্ধেক ঘরের নির্মাণ কাজও শেষের পথে। এসব ঘর নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার পরই তালিকাভূক্ত পরিবারের কাছে তা হস্তান্তর করা হবে।

সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের বিলুপ্ত গারাতি ছিটমহলের রাজমহল পূর্ব বাগান গ্রামে খাস জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে ১৩টি ঘর। ছিটমহলের অধিবাসীসহ আশপাশের গ্রামের ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের ঠাঁই হয়েছে এসব ঘরে। পার্শ্ববর্তী মাধই পাড়া গ্রামের তছলিম উদ্দীন (৬৫) স্ত্রী রাজিয়া বেগমকে নিয়ে বসবাস করছেন এখানে।

তিনি বলেন, বাপের অনেক জমিজমা ছিল। এখন কিছুই নেই। নিজের জমি বিক্রি করে দিয়ে সেখানেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করতাম। এখন এখানে প্রধানমন্ত্রী আমাদের পাকা বাড়ি উপহার দিয়েছেন। জমির মালিকানার দলিলও দেয়া হয়েছে। বয়স হয়েছে। এখন আর শরীরও চলে না। ছেলেরা মাধই পাড়াতেই থাকে। মানুষের জমিতে কাজ করে। তারাই আমাদের দেখাশোনা করে।

পার্শ্ববর্তী অমরখানা ইউনিয়নের সোনারবান গ্রামে নির্মাণ করা হয়েছে ২৯টি ঘর। সব ঘরেই পরিবার পরিজন নিয়ে উঠেছে এখানকার নিবাসীরা। পার্শ্ববর্তী মেহেনাভিটায় রাস্তার পাশে টিনের ছাপড়া দিয়ে বাড়ি তৈরি করে বসবাস করতেন আব্দুর রব (৬৮)। তিন মেয়ের সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা জায়গায় বাড়ি করে সংসার করছে। বরাদ্দ পাওয়ার পর স্ত্রী কফিজান বেগমকে নিয়ে উঠেছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে। ইউনিয়ন পরিষদের ৪০ দিনের কর্মসূচিতে সর্দার হিসেবে কাজ করে চলে যাচ্ছে তাদের সংসার।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরিবের বন্ধু। আমরা দোয়া করছি মহান আল্লাহ তায়ালা যেন তাকে বহু দিন বাঁচিয়ে রাখেন। তাহলে দেশ উন্নতির দিকে যাওয়ার পাশাপাশি আমরা গরীব মানুষ অনেক উপকৃত হব।

একই ইউনিয়নের ছোট কামাত থেকে এখানকার নিবাসী হয়েছেন সোলায়মান আলী (৭২)। কিছুদিন আগে ব্রেইন স্ট্রোকে এখন বিছানায় পড়ে রয়েছেন। একমাত্র ছেলে মানুষের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। 

সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মুছা কলিমুল্লাহ প্রধান বলেন, আমার ইউনিয়নে ৭১ ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। একই ডিজাইনের এসব বাড়ি দেখতে সুন্দর। লাল সবুজের টিনের চালায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশের পতাকা। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যোগ্য পরিবার বাছাই করে দিয়েছি। তারা সবাই এখন ওই ঘরে অবস্থান করছেন। সবাই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা বাড়ি পেয়ে খুব খুশি।

সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার দেশে কোন মানুষ গৃহহীন থাকবে না। সেই আলোকে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে তিনি সারাদেশে বহু মানুষকে ঘর উপহার দিয়েছেন। যা বিশ্বে অনন্য। সরকারি নির্দেশনা মেনে পঞ্চগড় সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে দুই দফায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাকা বাড়ি পাচ্ছেন ৫৪৪টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার। এর মধ্যে প্রথম দফায় ২০৮টি পরিবারকে জমির দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় দফায় ৩৩৬টি বাড়ির মধ্যে অর্ধেকের বেশি বাড়ি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করছি খুব দ্রুত এসব বাড়ির কাজ শেষ করে তালিকাভূক্তদের মাঝে হস্তান্তর করা হবে। 

তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি বিভিন্ন ইউনিয়নে বাড়ি নির্মাণের কাজ পরিদর্শন করেছি। নিয়মতান্ত্রীক ভাবে এসব বাড়ির নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোন অনিয়মের খবর আমার কানে আসেনি। 

জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, একসঙ্গে এতগুলো গৃহহীন মানুষকে সেমিপাকা ঘর প্রদান প্রধানমন্ত্রীর একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বিশ্বের আর কোন দেশে একসঙ্গে এতগুলো গৃহহীন পরিবারের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়নি। মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর এটি বিশেষ উদ্যোগ। এরই ধারাবাহিকতায় পঞ্চগড়ের পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় উপযুক্ত সুবিধাভোগী বাছাই করে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। এখানে বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা ক্ষুদ্র নৃত্বাত্বিক জনগোষ্ঠি, বিলুপ্ত ছিটমহলের অধিবাসীসহ প্রকৃত গৃহহীন মানুষদের ঘর প্রদানের চেষ্টা করেছি এবং সরকারের প্রাক্কলন অনুযায়ী তাদের ঘর নির্মাণের খরচ করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, এটি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদানকৃত বিশেষ প্রকল্প। এ জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজটি সম্পন্ন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে যাদের ঘর দেয়া হয়েছে তাদের সরকারি বিভিন্ন অনুদানের ব্যবস্থাসহ উন্নয়নমূখী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় ঘর নির্মাণের শুরুতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেখভাল ও তদারকি করা হচ্ছে। প্রত্যেক উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স নিজেরা উপস্থিত থেকে কাজের তদারকি করছেন। যাতে মানসম্পন্ন নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়। প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানিরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে এসব ঘরে ঠাঁই হচ্ছে হাজারো ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষদের। বর্ষায় কাজের গতি কমেছে। তবে শিগগিরই কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

-এসআই/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,