রাজধানীর উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরের বাসা বাড়িতে অনুমোদনহীন ‘এইচ এস ডিস্ট্রিবিউশন’ নামের একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির কারখানায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ আধুনিক মেডিকেল হাসপাতালের মো. জহির (৩২) নামের এক কর্মচারীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। সেই সাথে ওই কর্মচারীর শরীরের রক্ত বিক্রি করে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতকে দেয়া জরিমানার পাঁচ লাখ টাকা তোলার হুমকি দিয়েছে ওই সিন্ডিকেটের লোকজন।
উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সপ্তম তলায় বুধবার (১৮ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী ওই কর্মচারী একই হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
পরবর্তীতে তিনি টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ্ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় ওই ভুক্তভোগী উত্তরা পশ্চিম থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি-১০৮৪) করেন।
ভুক্তভোগী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘সুজনের এইচ এস ডিস্ট্রিবিউশন কারখানায় র্যাবের অভিযানে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আমি ওই ভবনেই ভাড়া থাকি। ভবন থেকে বের হওয়ার সময় আমাকে র্যাবের স্যারেরা ডেকে নিয়ে কারখানা থেকে তাদের গাড়িতে মালামাল তোলে। এ ঘটনার পর আমি ও আমার স্ত্রীকে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করতে দিচ্ছে না উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সোসাইটি। যাদের মাধ্যমে সুজন নিন্মমানের হাসপাতালের চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ দিত। এরাই হলো সুজনের সিন্ডিকেট।
তিনি বলেন, ওই সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মন্টু সরকার বুধবার আমাকে হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সাত তলায় ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে মিজান আমাকে ধরে প্রথমে লাথি মারে। সাথে থাকা নজরুল ইসলাম, মিন্টু সরকার, রবিউল ইসলাম, মেহেদী, জাহিদসহ অজ্ঞাত ১০/১২ জন আমাকে রড দিয়ে পিটায় আর বলে- র্যাবের অভিযানে তোরা ছিলি কেন? তোর জন্যই ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।
আহত জহির বলেন, ‘মারধরের একপর্যায়ে তারা বলে- এখন তোর শরীরের রক্ত বিক্রি করে জরিমানার ৫ লাখ টাকা আদায় করবো। সেই সাথে তারা আমার শরীরে খালি সিরিজ দিয়ে বাতাস ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। মারধরের সময় অধ্যক্ষ ডা. সাব্বিরও উপস্থিত ছিলেন।
'এক পর্যায়ে আমি কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে টঙ্গী হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। সেই সাথে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি জিডি করি। জিডি করার পরও কোন পুলিশ পাইনি। অথচ উল্টো উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই রুবেল সমিতির সভাপতি নজরুলের কথা শুনে আমাকে ধরার জন্য খুঁজে বেড়াচ্ছে। সেই সাথে আমার বাসায় গিয়ে হুমকিও দিয়ে আসছে' বললেন ভুক্তভোগী জহির।
এ বিষয়ে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সোসাইটির সভাপতি নজরুল ইসলাম অবজারভারের প্রতিবেদককে বলেন, সুজন অনেক আগে হাসপাতালের আইসিইউতে ওয়ার্ড বয় হিসেবে কাজ করতো বলে আমার পরিচিত মাত্র। তার সাথে এর বাহিরে ব্যবসায়ীক কোনো সম্পর্ক নাই। র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানাকে কেন্দ্র করে জহিরকে কোন মারধর করি নাই। জহির উল্টো আমাদের সিকিউরিটি অফিসার আবু তারাহকে মারধর করেছে। তাহলে এ বিষয়ে আইনগত কেনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না কেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবগত আছে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে ১১ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এই তদন্ত কমিটির প্রধান আধুনিক মেডিকেল কলেজটির অধ্যক্ষ ডা. সাব্বির আহমেদ। আপনি তার সাথে কথা বলেন।
বিষয়টি জানতে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সাব্বির আহমেদের সাথে দেখা করতে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ফোন করা হলে তিনি বলেন আমি এখন অপারেশন থিয়েটারে আছি। আপনি পরে ফোন করেন।
জীবনের নিরাপত্তা চাওয়া আহত জহিরুলকে পুলিশি হয়রানি কেনো করা হচ্ছে জানতে ফোন করা হয় উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই রুবেলকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, হয়রানি করার বিষয়টি মিথ্যা। এমন কোনো কাজ করিনি।
উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস অবজারভারের প্রতিবেদককে জানান, দু পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি করেছে থানায়। আমি বিষয়টি তদন্ত করার জন্য বলেছি। তবে হাসপাতালে সিন্ডিকেট থাকতে পারে।
গেলো সোমবার (১৬ আগস্ট) উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের ৫ সড়কের ৫২নং সালাউদ্দিনের বাড়িতে এইচ এস ডিস্ট্রিবিউশন নামের কারখানায় দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে র্যাব-১-এর ভ্রাম্যমাণ আদালত। মুলত এর জেরেই পরবর্তীতে এই ঘটনা ঘটিয়েছে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজে নিন্মমানের চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহকারী সিন্ডিকেট দাবি আহত জহিরুলের।
-এনএন