For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

বিদ্যালয়ের কোটি টাকার জমি দখল তালিকায় যুবলীগ নেতাসহ প্রভাবশালীরা

Published : Thursday, 19 August, 2021 at 12:08 PM Count : 362

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দখলদারদের তালিকায় রয়েছে স্থানীয় যুবলীগ নেতাসহ প্রভাবশালীরা। বিদ্যালয়ের জমি দখল করে তারা গড়ে তুলেছেন দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বছরের পর বছর একটু একটু করে এভাবে দখল হয়েছে বিদ্যালয়টির কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ২৬ শতক জমি। এ নিয়ে বিদ্যালয়টি আদালতে মামলা করলেও দখল থেমে থাকেনি। উল্টো বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষকদের বার বার দখলদারদের হুমকিতে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নে ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় শালবাহান দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৮১ সালে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। এই বিদ্যালয়ে সীমান্ত এলাকার শত শত শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। পাঠ দানসহ বিভিন্ন শিক্ষা উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের জন্য বিদ্যালয়টির বেশ সুনাম রয়েছে। তাই স্থানীয় দরিদ্র অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের এই বিদ্যালয়ের পড়ানোর বিষয়ে বেশ আগ্রহী। বিদ্যালয়টি মোট জমি রয়েছে ৮ একর ২০ শতক। এর মধ্যে বিদ্যালয় ঘেঁষে রয়েছে বড় একটি পুকুর, একটি মার্কেট। কিন্তু বাজার সংলগ্ন বিদ্যালয়ের জমিগুলোর মধ্যে ২৬ শতক জমি গত এক দশকে দখল হয়েছে। যার বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। মোট ২১ জন ব্যক্তি এই জমি দখল করেছেন বলে জানিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তাদের অভিযোগ, শালবাহান ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম বুলবুল, আব্দুল কাদের, তৌহিদুল ইসলামসহ প্রভাবশালীরা রয়েছেন এই তালিকায়। জমিগুলো দখল করে তারা গড়ে তুলেছেন দোকানপাটসহ নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দিনের পর দিন এভাবে একটু একটু করে বিদ্যালয়ের জমি দখল হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আদালতে একাধিক মামলা করার পরও দখলদারদের দৌরাত্ম থামেনি। বিদ্যালয়টির নতুন ভোকেশনাল শাখার একাডেমিক ভবন নির্মিত হলেও তার যাতায়াতের রাস্তা দখল করে যুবলীগ নেতা বুলবুল গড়ে তুলছেন দোকান। প্রতিবাদ করতে গেলেই হুমকির মুখে পড়তে হয় বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের।
 
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক কাবুল বলেন, শালবাহান ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম বুলবুল, আব্দুল কাদের, আব্দুল হাকিম ও তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত বিদ্যালয়ের ২৬ শতক জমি দখল করেছে। যার মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। আমি জমি দখলের বিষয়গুলো উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করি। তাদের পরামর্শে আমি মামলাও দায়ের করেছি। তারপরও ভোকেশনাল শাখার একাডেমিক ভবনে রাস্তা দখল করে তারা দোকান তুলছে। তাই ভবনটি ব্যবহার করতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা। দিন দিন বিদ্যালয়ের জমি দখল হলেও আমরা তাদের কিছুই করতে পারছি না। কিছু বললেই তারা লাঠিশোঠা নিয়ে তেড়ে আসে। আমাদের যে সকল জমি ও মার্কেট রয়েছে সেখানকার টাকা দিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করি। আমরা কোন শিক্ষার্থীর কাছে বেতন নেই না। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেজ কিনে দেয়াসহ তাদের কাজেই সব টাকা ব্যয় করা হয। কিন্তু এভাবে জমি দখল হওয়ায় বিদ্যালয়ের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মামুনুর রশিদ বলেন, কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় দখলকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আমরা বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবহিত করলেও কোন সমাধান হয়নি।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জহির উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়ের জমি দখল করে দোকানপাট তোলা হচ্ছে কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আমরা তো আর লাঠিশোঠা নিয়ে তাদের সাথে মারামারি করতে যাবো না। আমরা চাই প্রশাসন যেন দ্রুত বিদ্যালয়ের জমি দখলমুক্ত করে।

স্থানীয় অধিবাসী মফিজুল হক বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমরা জানি স্কুলের মাঠের চারপাশের সব জমি স্কুলের। কিন্তু এখন দেখছি একটু একটু করে দখল হচ্ছে। সীমান্ত এলাকার দূর দূরান্তের দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা এই বিদ্যালয়ে পড়তে আসে। আমরা চাই বিদ্যালয়ের জমি অবিলম্বে দখলমুক্ত করা হোক।  

শালবাহান ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম বুলবুল জানান, আমি ২০১৩ সাল থেকে এই দোকান ও মার্কেট নির্মাণ কাজ করছি। সেসময় স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুস্তানসের রহমান ও তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মফিজউদ্দিন বিদ্যালয়ের জমি মাপজোক করে নিয়ে আমার জমি আমাকে বুঝিয়ে দেন। এরপর আমি মার্কেট ও দোকানঘর নির্মাণের কাজ শুরু করি। তারা সেসব অভিযোগ করেছে তা মিথ্যে। মূলত প্রধান শিক্ষক তার অনিয়ম ঢাকতেই আমাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করে বেড়াচ্ছে।     

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, শালবাহান দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি দখল বিষয়ে একটি সমস্যার কথা শুনেছি। জমি নিয়ে সিভিল মামলাও চলছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেন জমি ফিরে পায় সেজন্য আমরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিব।

এসআইএস/এসআর

         


« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,