চিরকুট লিখে আত্মহত্যাকারী সেই প্রেমিকা ধর্ষণের শিকার
Published : Tuesday, 17 August, 2021 at 3:26 PM Count : 364
কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ীতে প্রেমিক অন্য মেয়েকে বিয়ে করায় অভিমানে চিরকুট লিখে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যাকারী সেই প্রেমিকা ধর্ষেণর শিকার হয়েছে।
এ ঘটনায় গত ৯ আগস্ট সকালে মমতা মিতুর মামা মমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে ধর্ষণ, আত্মহত্যার প্ররোচণা এবং ভয়ভীতি প্রদর্শণের অভিযোগে প্রেমিক রাজুসহ চারজনকে আসািম করে ফুলবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
এ দিকে মামলার ৯ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ মুল আসামি রাজুসহ অন্যদের গ্রেফতার করতে না পারায় ক্ষুব্ধ বাদীর পরিবার। মিতুর মা মদিনা বেগম দ্রুত আসামিদেরকে গ্রেফতার করে আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের তালুক শিমুলবাড়ী গ্রামের মৃত আফাজ উদ্দিনের মেয়ে এবং শিমুলবাড়ী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মমতা মিতুর (১৫) সাথে একই এলাকার দলিল লেখক মকু মিয়ার অনার্স পড়ুয়া ছেলে রাজু মিয়ার (২২) প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রেমিক রাজু অন্য মেয়েকে গোপনে বিয়ে করে গত ৮ আগস্ট বাড়িতে বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রেমিক রাজুর বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান চলায় ক্ষোভে চিরকুট লিখে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে প্রেমিকা মমতা মিতু আত্মহত্যা করে। এঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
মমতা মিতুর বাবা ৭ বছর আগে মারা যান। মা মদিনা বেগমসহ মিতু মামা মমিনুল ইসলামের বাড়িতে থাকেন। সাত বছর থেকেই মিতু মামার বাড়িতে থাকতেন। সেখান থেকে মিতু পড়াশোনা করেন। মা মদিনা বেগম জীবিকার তাগিদে ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। মাঝে মধ্যেই মেয়ে মিতুর জন্য কিছু টাকা পাঠাতেন। বাকি সব কিছুই বহন করতেন মামা মমিনুল ইসলাম।
মামলার বাদী মমিনুল ইসলাম জানান, রাজুর সঙ্গে মমতার প্রেমের সম্পর্কের কথা সকলেই জানে। প্রায় এক বছর ধরে তাদের মাঝে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে। গত মাসের ৩০ জুলাই গভীর রাতে রাজু মমতার সাথে সাক্ষাত করতে আসলে বাথরুমে আপত্তিকর অবস্থায় রাজুকে আটক করা হয়। পরে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করার চেষ্টা করলেও ছেলের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।
পরদিন ফুলবাড়ী থানার পুলিশ গিয়ে রাজুকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। একপর্যায়ে রাজু ও তার পরিবার বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিলে আমরা কোন প্রকার মামলা করিনি। পরে সন্দেহজনক আটক মামলায় রাজুকে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। জামিনে বেরিয়ে এসে অন্যত্র বিয়ে করে বাড়িতে নতুন বউ নিয়ে আসে রাজু।
মামা মমিনুল ইসাম আরও জানান, আমার ভাগিনি মমতা মিতু এতিম মেয়ে তার বাবা অনেক আগেই মারা যান। মা জীবিকার তাগিতে ঢাকার একটি গার্মেন্টেসে চাকরি করেন। মিতুকে আমরাই ছোট থেকে পড়ালেখাসহ মানুষ করেছি। ভণ্ড-প্রতারক রাজু আমার নিষ্পাপ ভাগনিকে ফাঁকি দিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করায় মিতু ক্ষোভে-অভিমানে আত্মহত্যা করেছে। আমি প্রতারক রাজুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এর আগে গত ৮ আগস্ট রাজুর বাড়িতে বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান চলাকালীন বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে চিরকুট লিখে ক্ষোভে,অভিমানে ঘরের আড়ার সাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে মমতা মিতু।
চিরকুটে লেখা ছিল, “আমি মমতা মিতু। আমি রাজুকে খুব ভালবাসি। রাজুর জন্য আত্মহত্যা করলাম। কারণ আমি ও রাজু দুজনেই দুজনকে খুব ভাল বাসতাম। কিন্তু রাজুর মা-বাবা আমাদের সর্ম্পকটা মানতে চান না। তাই রাজুর বিয়ে দিয়েছে। আজ ওর বৌ-ভাত, আমি এটা মানতে পারছি না। তাই আমি এই পৃথিবী ছাড়লাম। কিন্তু এই শাস্তি আমি একাই ভোগ করছি না। আমি চাই আমাদের এই সর্ম্পকটার মাঝে যারা বাধা ছিল, তারাও যেন আইনি শাস্তি পায়। ইতি মিতু---।
খবর পেয়ে ফুলবাড়ী থানার পুলিশ কিশোরীর লাশ উদ্ধার করে রাতেই থানায় নিয়ে যায় এবং পরদিন লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুড়িগ্রামে পাঠায়।
এ প্রসঙ্গে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই এনামুল জানান, বাদী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে চারজন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে মামলা রুজু করা হয়। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
-এসি/এনএন