কেন্দ্রগুলোতে দীর্ঘ লাইন। সবার হাতে হাতে জাতীয় পরিচয় পত্রের (এনআইডি) ফটোকপি। দেখে মনে হবে, নির্বাচন হচ্ছে। আর সেখানে পছন্দের জনপ্রতিনিধিকে ভোট দিতে এসেছেন ভোটাররা। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। মহামারী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে নিজেদের শরীরে এন্টিবড়ি তৈরীতে করোনার গণটিকা নিতেই ওই দীর্ঘ লাইন।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) ৩০টি ওয়ার্ডের ৮৪টি কেন্দ্রের অন্তত ১৫টি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। সকাল থেকেই দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন কাঙ্খিত সেই টিকার জন্য। কেউ কেউ সকাল ৭-৮টার মধ্যে টিকা নিতে চলে গিয়েছেন কেন্দ্রে কেন্দ্রে।
শনিবার সকাল ৯টা থেকে মহানগরীর বাসীন্দরা এক এক করে টিকা গ্রহণ করেন তারা। টিকা নিতে আসা পুরুষের চেয়ে নারীদের সংখ্যা অনেক বেশী বলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে।
এদিন দুপুরে রাসিকের ১৪ ও ১৯ নং ওয়ার্ডের দুইটি টিকা প্রদান কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন রাসিক মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। পরিদর্শন শেষে রাসিক মেয়র লিটন সাংবাদিকদের বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ৩০টি ওয়ার্ডে মোট ৮৪টি কেন্দ্রে টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। করোনা থেকে মুক্তি পেতে টিকা গ্রহণের বিকল্প নেই, নাগরিকরা সেটি বুঝতে পেরেছেন। এ জন্য টিকা নিতে মানুষের আগ্রহও অনেক বেড়েছে।
১৯ নং ওয়ার্ড কার্যালয় কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা আসমা বেগম বলেন, ‘গণটিকা নিতে এসে আমি খুবই খুশি। কারণ করোনা যেভাবে মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে তা ভাবলেই ভয় লাগে। অদৃশ্য এই শক্তিকে মোবাবেলা করে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হোক এজন্যই পরিবারের ২৫ বছরের উর্ধ্বে যারা রয়েছেন তাদের সবাইকে কেন্দ্রে নিয়ে এসেছি টিকা দিতে।
মহানগরীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান সরকারি ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা আজমত আলী বলেন, ‘আমি নিজে থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমার পরিচিত এবং আশেপাশের যারা রয়েছেন তাদেরকে করোনার গণটিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করছি। কারণ এটি এমন একটি মহামারি যেখানে নিজ পরিবারকে করোনা মুক্ত রাখার পাশাপাশি আশপাশে যারা রয়েছেন তাদেরকেউ মুক্ত রাখতে হবে।’
দুপুর ১টা পর্যন্ত বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, টিকার পরিমাণের চেয়ে অনেক মানুষ টিকা নিতে লাইনে অপেক্ষা করছে। অনেকে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা নিতে পারেননি। আবার অনেক কেন্দ্রে টিকার নির্দিষ্ট সীমা বেলা ১২ টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। যার ফলে অনেককে টিকা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যেতে দেখা গেছে।
১১ নং ওয়ার্ডের নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা নাসিমা বেগম নামের এক নারী বলেন, চার ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা নিতে পারিনি। কারণ আগেই এখানে টিকার নির্দিষ্ট সীমা শেষ হয়ে গেছে। কেন্দ্রের দায়িক্তপ্রাপ্তরা আগে থেকেই বিষয়টি জানিয়ে দিলে আমাদের কষ্ট কম হত। যাইহোক, সামনের দিন টিকা নিতে আরো সকালে আসার চেষ্টা করব।
রাসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফএএম আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, সিটি করর্পোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডে ৮৪টি কেন্দ্রে একযোগে সকাল থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে ৩০০ জন করে টিকা পাবেন। আগামী ১২ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন এ টিকা কার্যক্রম চলবে। সেই পরিমান টিকা মজুদ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাউয়ুম তালুকদার বলেন, জেলার ৭৩টি ইউনিয়নেই গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে তিনটি করে বুথে টিকা দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি বুথে ৬০০ জন করে টিকা পাবেন। টিকাদানে বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধি ও নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। সকাল থেকে প্রতিটি টিকা কেন্দ্রে প্রচুর সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হয়ে টিকা গ্রহণ করছেন বলে জানান তিনি।
আরএইচএফ/এসআর