For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

কালাইয়ে চাল-সবজির দাম বেড়েছে

Published : Tuesday, 13 July, 2021 at 3:48 PM Count : 513

চলমান বিধিনিষেধের অজুহাতে জয়পুরহাটেকালাই উপজেলায় খুচরা ও পাইকারি বাজারে গত তিন থেকে চার দিনের ব্যবধানে প্রকারভেদে চালের দাম কেজি প্রতি পাঁচ থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। 

অথচ দেড় মাসে আগে উপজেলার কৃষকরা ক্ষেত থেকে বোরো ধান সংগ্রহ করে ঘরে তুলেছেন। 

কিন্তু হঠাৎ করে চালের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষ। চালের দাম বাড়লেও এখন পর্যন্ত বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোন কর্মকর্তারা কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যায়নি। 

উপজেলার মিল মালিকদের দাবি, এক শ্রেণীর অসাধু খুচরা ও মাঝারি খুরচা ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে কারণেই চালের বাজার বর্তমানে অস্থিতিশীল। 
তবে চালের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, লকডাউনের অজুহাত দেখিয়ে মিলাররা চালের কৃত্রিম সংকট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। 

অন্যদিকে কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। আদা, রসুন, মসলা ও পেঁয়াজসহ অন্তত ১১ ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। বেড়েছে সবজির দামও। 

সরেজমিনে কালাই পৌর বাজার, উপজেলার পাঁচশিরা বাজার, মাত্রাইহাট, বিয়ালা বাজার, বৈরাগীহাট, পুনটহাট, মোসলেমঞ্জহাট, নুনুজ বাজার, মোলামগাড়ী হাটে চালের খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে জানা যায়, গত তিন থেকে চার দিনের ব্যবধানে প্রকারভেদে চালের দাম কেজি প্রতি পাঁচ থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। চলমান বিধিনিষেধের কারণে শ্রমিক সংকট, পরিবহনের খরচ ও ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে দেখিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। 

উপজেলার চালের খুচরা হাট-বাজারে চার থেকে পাঁচ দিন আগে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৪৯ টাকা দরে, বর্তমানে তা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকায়। কাটারি ভোগ চাল ৪৮ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকায়। বি-ধান ২৮-জাতের ধানের চাল ৪২ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৭ টাকায়। বি-ধান ২৯-জাতের ধানের চাল ৪৩ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকায়। 

এছাড়া ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তার চালের দাম বেড়েছে দেড়শ থেকে দুইশ টাকা। 

এদিকে, কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার হাট-বাজারে নিত্যপণ্যের দামে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। আদা, রসুন, সব ধরনের মসলা ও পেঁয়াজসহ অন্তত ১১ ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে সবজির দামও। 

বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে পটল, বেগুন, কচুর লতি, আলু, করলা, বরবটি, ঢেঁড়স, লাউ, চিচিংগা, কাঁকরোল, মুলা, পেঁপে, ঝিঙাসহ সব সবজির দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। হঠাৎ করে এভাবেই চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য দাম বাড়ার কারণে নিম্নআয়ের মানুষরা পড়েছেন চরম বিপাকে। 

উপজেলার মাত্রাই হাটে চাল কিনতে আসা ভ্যানচালক মুজিবুর হক বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বিধিনিষেধ চলছে। গাড়ির চাকা বন্ধ, কিন্তু পেটের ক্ষুধা তো বন্ধ নেই। আমরা দিনমজুর, একদিনও বসে খাওয়ার উপায় নেই। এই বিধিনিষেধে আমাদের তেমন কোন আয়-রোজগার নেই। এমন অবস্থায় বাজারে এসে দেখি হঠাৎ করে চালের দাম কেজিতে পাঁচ থেকে ছয় টাকা বেড়েছে। বেড়েছে নিত্যপণ্যসহ সব ধরনের সবজির দামও। এতে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছি।

কালাই পৌরসভার বাদাম বিক্রেতা মোফাজ্জল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখন ব্যবসায়ীরা সব পণ্যের দর-দাম ঠিক করে দেন। আমাদের কোন পণ্যের প্রয়োজন হলে আমরা বাধ্য হয়েই তাদের থেকে মালামাল সংগ্রহ করি। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে আমাদের ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনাহারে দিন কাটাতে হবে।

উপজেলার মোসলেমঞ্জহাটে চাল কিনতে আসা নারী শ্রমিক আয়েশা বিবি বলেন, একটু সুযোগ পেলেই ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে চালসহ নিত্য য়োজনীয় পণ্যর দাম বাড়িয়ে দেয়। আর কষ্ট ভোগ করতে হয় আমাদের মতো অনেকের। তাই প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি,-উপজেলার হাট-বাজারগুলো মনিটরিং করলে সব কিছু দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আমি মনে করি। 

উপজেলার মোলামগাড়ীহাটে সবজি ব্যবসায়ী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান বিধিনিষেধ চলায় সব যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে আমরা জেলা ও উপজেলা থেকে সবজি কিনতে পারছি না। তাছাড়া সব জায়গায়ই সবজির দাম বেড়েছে। আমাদের এখানে করার কিছু নেই। কারণ চাহিদার চেয়ে এখন উৎপাদন অনেক কমে গেছে। তাছাড়া সবজিগুলো অনেক সময় পঁচেও যাচ্ছে। তাই সব ধরনের সবজি কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা দাম বেড়েছে।

উপজেলার পাঁচশিরাবাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা জালাল চাল ঘরের সত্বাধিকারী মো. জালাল উদ্দীন বলেন, বিধিনিষেধের অজুহাতে এলাকার মাঝারি ও বড় মিলাররা চালের কৃত্রিম সংকট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের গোডাউনে যথেষ্ঠ পরিমাণে ধান ও চাল মজুদ রয়েছে। ওইসব চালগুলো এলাকার বাজারে বাজারজাত করলে চালের দাম স্বাভাবিক হবে।

একই স্থানে আরেক খুচরা চাল বিক্রেতা মেসার্স তালের চাল ঘরের সত্বাধিকারী মো. আবু তালেব সরদার বলেন, উপজেলার মিলারদের কাছ থেকে চাল কিনতে দাম বেশি পড়ায় আমাদেরকে বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। আমরা যে দামে চাল কিনে নেই তা সামান্য লাভে বিক্রি করি।

কালাই উপজেলার চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল বারী বলেন, চলমান বিধিনিষেধের কারণে শ্রমিক সংকট, পরিবহনের খরচ বৃদ্ধি, তাছাড়া বর্তমান বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধির ফলে সব ধরনের চালের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পায়েছে। আমরা প্রতিদিন ধান থেকে চাল উৎপাদন করে বাজারে চাল বিক্রি করছি। বাজারে ধান ও চালের সংকট নেই। তবে এলাকার এক শ্রেণী অসাধু কিছু খুচরা ও মাঝারি খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা তারা নিজেরাই সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বর্তমান চালের বাজার অস্থিতিশীল করেছেন।

কালাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. শাহানশাহ হোসেন গর্ব করে বলেন, এই উপজেলায় কোথায়, কোন জায়গায় চালের দাম বাড়লো তা আমার জানা নেই। এই বিষয়টি আমার দায়িত্ব নয়। যারা বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্বে আছেন, তাদের এই দায়িত্ব। আমার দায়িত্ব কোন মিলাররা গোডাউনে চাল দিল কি না? তারা সঠিক সময়ে গোডাউনে চাল দিচ্ছে কি না? এসব বিষয় আমার দায়িত্ব।

কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট টুকটুক তালুকদার বলেন, দাম বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে উপজেলার হাটে-বাজারগুলো মনিটরিং করা হবে। এরপরও কেউ যদি অবৈধ ভাবে ধান-চাল মজুদ রাখেন এবং খাদ্যের দাম অকারণে বাড়ান তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

-টিআই/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,