কাঁটাখালী গণহত্যা দিবস আজ
Published : Tuesday, 6 July, 2021 at 12:42 PM Count : 148
আজ ০৬ জুলাই। শেরপুরের ঐতিহাসিক কাঁটাখালী গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে তিন মুক্তিযোদ্ধাসহ ১২ জন শহীদ হন।
শহীদ হন নালিতাবাড়ী উপজেলার একই পরিবারের তিন মুক্তিযোদ্ধা- কোম্পানি কমান্ডার নাজমুল আহসান, মোফাজ্জল হোসেন ও আলী হোসেন।
স্বাধীনতা অর্জনের পর শহীদ নাজমুলের নামে ময়মনসিংহ কৃষি বিদ্যালয়ে একটি হল, নালিতাবাড়ীতে ‘নাজমুল স্মৃতি বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
আর মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৮ সালে শহীদ নাজমুলকে স্বাধীনতা পদক প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ‘অপারেশন কাঁটাখালি’ ও রাঙ্গামাটিয়া যুদ্ধের সরকারি স্বীকৃতি মিলেছে।
এছাড়া, স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও চেতনা ভাস্বর করে রাখার জন্য স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৯ বছর পর হলেও পুরানো সেই সেতুটি সংরক্ষণে ইতোমধ্যে সংস্কারসহ একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণের পাশাপাশি কাঁটাখালি সেতু অঙ্গণে স্বাধীনতা উদ্যান প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ০৫ জুলাই রাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী কোম্পানী কমান্ডার নাজমুলের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ডিনামাইট ফিট করে ঝিনাইগাতী-শেরপুর সড়কের কাঁটাখালি সেতু উড়িয়ে দেয়। সফল অপারেশন শেষ করতে ভোর হয়ে যাওয়ায় পার্শ্ববর্তী রাঙ্গামাটি গ্রামে আশ্রয় নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। ওই গ্রামের আশ্রয়দাতারা মুক্তিযোদ্ধাদের খাসি জবাই করে খাওয়ার ব্যবস্থাও করেছিলেন। দিনের আলো ফুটে ওঠায় কোথাও বের হওয়া নিরাপদ মনে না করে ক্লান্ত মুক্তিযোদ্ধারাও সেখানেই ঘুমিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। কিন্তু ওই গ্রামের দালাল জালাল মিস্ত্রী পাক বাহিনীর স্থানীয় হেড কোয়ার্টার আহাম্মদনগর ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খবরটি পৌঁছে দেয়।
খবর পেয়ে পাক হানাদার বাহিনী ০৬ জুলাই সকালে রাজাকার, আল-বদরদের সঙ্গে নিয়ে রাঙ্গামাটি গ্রাম তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষণ শুরু করে। কোম্পানী কমান্ডার নাজমুল আহসানের নেতৃত্ব মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি ছুড়ে জবাব দেয়। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। পাক বাহিনী অবিরাম গুলি বর্ষণ শুরু করে।
ওই গ্রামের তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের যাওয়ার একমাত্র পথ খোলা ছিল রাঙ্গামাটি বিলের দিকে। বিলটিও পানিতে তখন টইটুম্বুর ছিল। এমন অবস্থায় ওই বিলের পানিতে নেমে কভারিং ফায়ার করতে করতে কোম্পানী কমান্ডার নাজমুল আহসান মুক্তিযোদ্ধাদের রাঙ্গামাটি বিলের পানিতে সাঁতরে চলে যাবার পথ তৈরি করে দেন।
সকলে চলে যাওয়ার পর হঠাৎ পাকিস্তানিদের ব্রাশ ফায়ারে কমান্ডার নাজমুলের বুক ঝাঁঝড়া হয়ে যায়। কমান্ডার নাজমুলের লাশ আনতে গিয়ে তার চাচাতো ভাই মোফাজ্জল হোসেন ও আলী হোসেনও শহীদ হন পাকিস্তানিদের গুলিতে। এদিন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে রাঙ্গামাটি বিলের পানি লাল হয়ে উঠেছিল।
মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে পাক বাহিনী রাঙ্গামাটি গ্রামে হানা দিয়ে খুঁজে খুজেঁ বের করে ৬০/৭০ জন গ্রামবাসীকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে। এতে ঘটনাস্থলেই নয় জন শহীদ হন। এদের মধ্যে একজন গুলি খেয়েও মৃতের মতো পড়ে থাকেন। মৃত ভেবে পাক বাহিনী তাকে ফেলে চলে যায়।
পায়ে বিদ্ধ গুলি নিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা সে দিনের বিভীষিকা নিয়ে আজও বেঁচে আছেন রাঙ্গামাটি গ্রামের ইউনুছ আলী। এছাড়া গ্রামের বেশ কয়েকজন নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায় হানাদার বাহিনী। শহীদ পরিবারের সদস্যরা বুক ফাটা কষ্ট নিয়ে আজো বেঁচে আছেন।
ইতিমধ্যে রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের তিন নারীকে সরকার বীরাঙ্গণা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু শহীদ পরিবারগুলোর কোন স্বীকৃতি মেলেনি।
গ্রামবাসীদের প্রত্যাশা, তাদের দ্রুত স্বীকৃতি দেওয়া হোক, উন্নয়ন হোক গ্রামটির।
-এমএস/এমএ