For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

সবচেয়ে বেশি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছিলেন যে বাংলাদেশি

Published : Tuesday, 18 May, 2021 at 9:54 PM Count : 501

সাইফুল আজম পৃথিবীর ইতিহাসের একমাত্র যোদ্ধা যিনি আকাশপথে লড়াই করেছেন তিনটি ভিন্ন দেশের বিমানবাহিনীর হয়ে। আর একক ব্যক্তি হিসেবে আকাশপথের যুদ্ধের ইতিহাসে সর্বোচ্চসংখ্যক ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার অনন্য রেকর্ড গড়েছেন।

বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে একের পর এক ইতিহাস রচনা করে গেছেন এই বীর বাঙালি। পৃথিবীর ২২ জন ‘লিভিং ইগলের’ অন্যতম ছিলেন এই বাঙালি বৈমানিক।

১৯৭১ সালের আগে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন সাইফুল আজম। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় ১৯৬৭ সালের জুন মাসে তৃতীয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে অংশ নিতে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ইরাকি বিমানবাহিনীতে বদলি হন সাইফুল আজম। পশ্চিম ইরাকে অবস্থান নিয়ে ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন তিনি।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার মাত্র পাঁচদিনের মাথায় গাজা এবং সিনাইয়ের কর্তৃত্ব নিয়েছিল ইসরাইল। জুনের ৫ তারিখে সিরীয় বিমানবাহিনীর দুই-তৃতীয়াংশ শক্তি ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েলি বিমান সেনারা। তেমন কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই ইসরায়েল পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেম দখল করেছিল। দখল করেছিল সিরিয়ার গোলান মালভূমিও। তাদের সামনে বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ তৈরি করতে পারেনি মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ। এ সময় ইসরায়েলিদের যমদূত হয়ে জর্দনে যান সাইফুল আজম।
৬ জুন আকাশ থেকে প্রচণ্ড আক্রমণে মিসরীয় বিমানবাহিনীর যুদ্ধ-সরঞ্জাম গুঁড়িয়ে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। একই দিন দুপুর ১২টা ৪৮ মিনিটে চারটি ইসরায়েলি সুপারসনিক ‘ডাসল্ট সুপার মিস্টেরে’ জঙ্গিবিমান ধেয়ে আসে জর্দানের মাফরাক বিমান ঘাঁটির দিকে। এবার তাদের লক্ষ্য জর্দানের ছোট্ট বিমানবাহিনীটিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া।

সে সময় ইসরায়েলি সুপারসনিকের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মতো সমকক্ষ বিমান আরবদের ছিল না। তবু ইসরায়েলিদের ঠেকাতে মাফরাক বিমান ঘাঁটি থেকে 'হকার হান্টার’ জঙ্গিবিমান নিয়ে বুক চিতিয়ে উড়াল দেন সাইফুল আজম।

আর সেই হকার হান্টার দিয়েই ক্ষিপ্রগতির দুটি ইসরায়েলি সুপারসনিক ঘায়েল করে ফেললেন সাইফুল আজম। তার অব্যর্থ আঘাতে ভূপাতিত হয় একটি ইসরায়েলি ‘সুপার মিস্টেরে’। আরেক আঘাতে প্রায় অকেজো হয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে কোনো মতে পালিয়ে ইসরায়েলি সীমানায় গিয়ে আছড়ে পড়ে আরেকটি বিমান।

সেদিন অকুতোভয় বৈমানিক সাইফুল আজমের অকল্পনীয় বীরত্বের কারণে ইসরায়েলের পুরো পরিকল্পনাই ভেস্তে যায়। উল্টো নিজেদেরই দুটি বিমান হারায় তারা। এমন বীরত্বের জন্য পুরস্কারস্বরূপ সাইফুল আজমকে ‘হুসাম-ই-ইস্তিকলাল’ সম্মাননায় ভূষিত করে জর্দান সরকার।

সাইফুল আজমের কাছে ইসরায়েলি বৈমানিকদের ধরাশায়ী হওয়া এটাই প্রথম। পরদিনই তার কৃতিত্বে ইরাকি বৈমানিক দলের কাছে চরমভাবে পরাজিত হয় ইসরায়েলিরা। ৭ জুন ইরাকের ‘এইচ-থ্রি’ ও ‘আল-ওয়ালিদ’ ঘাঁটি রক্ষা করার দায়িত্ব পড়ে এক ইরাকি বৈমানিক দলের কাঁধে। আর সাইফুল আজম সেই দলের অধিনায়ক। সেদিন চারটি ‘ভেটোর বোম্বার’ ও দুটি ‘মিরেজ থ্রিসি’ জঙ্গিবিমান নিয়ে আক্রমণ চালায় ইসরায়েল।

একটি ‘মিরেজ থ্রিসি’ বিমানে ছিলেন ইসরায়েলি ক্যাপ্টেন গিডিওন দ্রোর। দ্রোরের গুলিতে নিহত হন আজমের উইংম্যান। তার হামলায় ভূপাতিত হয় দুটি ইরাকি বিমান। পরক্ষণেই এর জবাব দেন আজম। তার অব্যর্থ টার্গেটে পরিণত হয় দ্রোরের ‘মিরেজ থ্রিসি’। সে আঘাতের পর বাঁচার উপায় না পেয়ে যুদ্ধবন্দি হিসেবে ধরা দেন ক্যাপ্টেন দ্রোর। ওই যুদ্ধবন্দির বিনিময়ে জর্দান ও ইরাকের সহস্রাধিক সৈন্যকে মুক্ত করে ইসরায়েল।

আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রথম ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই সাইফুল আজম একটি অনন্য রেকর্ড তৈরি করেন। ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ভূপাতিত করেছেন সর্বোচ্চ তিনটি ইসরায়েলি বিমান। যে জন্য ‘নাত আল-সুজাহ’ সামরিক সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।

শুধু আরব যুদ্ধেই কৃতিত্ব দেখাননি সাইফুল আজম। এর আগে ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে তার বীরত্বে আক্রান্ত হয় একটি ভারতীয় ‘ফোল্যান্ড নেট’ জঙ্গিবিমান। সে বিমান থেকে ভারতের ফ্লাইট অফিসার বিজয় মায়াদেবকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে আটক করা হয়। সে সময় প্রশিক্ষকের দায়িত্বে থাকাকালীনই সেপ্টেম্বর পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ১৭ নম্বর স্কোয়াড্রনের হয়ে ‘এফ-৮৬ স্যাবরজেট’ জঙ্গিবিমান নিয়ে এ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন।

বিরল এই পারদর্শিতার স্বীকৃতিস্বরূপ সাইফুল আজমকে পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ সামরিক সম্মাননা ‘সিতারা-ই-জুরাত’-এ ভূষিত করা হয়। সাইফুল আজমই পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র বৈমানিক যিনি চারটি দেশের বিমানবাহিনীর সৈন্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই চারটি দেশ হলো পাকিস্তান, জর্দান, ইরাক ও মাতৃভূমি বাংলাদেশ।

এ ছাড়া আটটি ভিন্ন দেশের আট বাহিনীর বিমান পরিচালনা করেছেন আজম। যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, জর্দান, ইরাক, রাশিয়া, চীন ও নিজ মাতৃভূমি বাংলাদেশের হয়ে বিমান চালিয়েছেন তিনি। যুদ্ধক্ষেত্রে অনন্য সব অর্জন আর ইতিহাস গড়া সাইফুল আজমকে ২০০১ সালে ইউনাইটেড স্টেটস এয়ারফোর্স বিশ্বের ২২ জন ‘লিভিং ইগলস’-এর একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

কিংবদন্তি এই বীর বাঙালি আর নেই। গত বছরের জুনে ঢাকার মহাখালী ডিএসএইচওর তার নিজ বাসভবনে তিনি ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। দীর্ঘদিন তিনি নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল ফখরুল আজম তার ভাই।

-এনএন

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,