For English Version
রবিবার ২৮ এপ্রিল ২০২৪
হোম

দূষণে ম্লান পদ্মার সৌন্দর্য

Published : Friday, 26 February, 2021 at 5:56 PM Count : 803


‘সর্বনাশা পদ্মা নদী, তোর কাছে শুধাই; বল আমারে তোর কি রে আর কুল কিনারা নাই’। এককালে মানুষের বুক ভাঙ্গার খেলায় সর্বনাশা তকমা লেগেছিল পদ্মার নামে। আব্দুল লতিফের লেখা গানটি আব্দুল আলীমের কন্ঠে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

তবে এখন পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। পদ্মার সর্বনাশে উঠেপড়ে লেগেছে মানুষ। পদ্মাকে আর স্রোতস্বীনি বলা যায় না। পদ্মার সেই রূপ আর নেই। পানি শুকিয়ে জেগেছে বিস্তীর্ণ চর। প্লাস্টিক, পলিথিন, আবর্জনায় দূষিত হচ্ছে এর পরিবেশ। পদ্মা যেন এখন ময়লার ভাগাড়!

রাজশাহী শহর সংলগ্ন পদ্মার পাড়ে প্রতিদিন ভিড় জমে হাজারো মানুষের। শহুরে জীবনের ক্লান্তি দুর করতে এবং বুক ভরে নির্মল বাতাস নিতে মানুষ ছুটে যান পদ্মাপাড়ে। পদ্মাপাড় রাজশাহীর অন্যতম বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
পদ্মাপাড়ে মানুষের এমন সমাগমকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে ছোট-বড় শত শত মুখরোচক খাবারের দোকান। পড়ন্ত বিকেলে খোলামেলা পরিবেশে এসব দোকানের মুখরোচক খাবারের সাথে প্রকৃতির নির্মল বাতাস নিতে প্রতিদিন দর্শনার্থীদের ভিড় জমে। মুখর হয়ে ওঠে পুরো পদ্মাপাড়।
এসব মুখরোচক খাবার দোকানের বর্জ্য, দর্শনার্থীদের ব্যবহার করা প্লাস্টিক, পলিথিন যথাস্থানে ফেলা বা সংরক্ষণ করা হয়না। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে যেখানে-সেখানে। একসময় এগুলোর জায়গা হয় পদ্মার বুকে। এছাড়াও নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ড্রেনের পানির সঙ্গে বয়ে আসে প্লাস্টিক-পলিথিন, সেগুলো জমাট বাধে পদ্মার পানিতে। এতে করে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে পদ্মার পরিবেশ। ফলে দূষণে ম্লান হয়ে পড়ছে পদ্মার সৌন্দর্য।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পদ্মায় যতটুকু পানি অবশিষ্ট রয়েছে সেগুলো পট-কচুরিপানায় ছেয়ে গেছে। কচুরিপানার ফাঁকে ফাঁকে ভাসছে প্লাস্টিক-পলিথিনের আবর্জনা। আর নদীর পাড় দিয়ে স্তুপাকারে পড়ে আছে পলিথিন, কাগজ, প্লাস্টিকের আবর্জনা আর মুখরোচক খাবারের উচ্ছিষ্ট।

কথা হয় পদ্মাপাড়ের দর্শনার্থী আব্দুল হাকিম ও বদরুদ্দোজার সঙ্গে। তাদের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে হলেও থাকেন রাজশাহীতে। তারা বলেন, একটু নির্মল বাতাসের জন্য সবাই পদ্মার পাড়ে ছুটে আসে। বন্ধুরা মিলে আমরা প্রায়ই ঘুরতে আসি। কিন্তু বর্তমানে পদ্মার পরিবেশ নষ্ট হতে বসেছে। পদ্মার বাতাসের সঙ্গে এখন দুর্গন্ধ এসে নাকে লাগে। মুখরোচক খাবারের দোকানের উচ্ছিষ্টগুলো যত্রতত্র ফেলার জন্যই এমন দুর্গন্ধ। পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশের কথা না ভেবে প্রতিদিন এভাবেই যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, মহানগরের পদ্মা গার্ডেন থেকে শুরু করে আই-বাঁধ পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধের কয়েক কিলোমিটারজুড়ে গড়ে উঠেছে শত শত দোকানপাট। এগুলোতে ভিড় করেন হাজার হাজার মানুষ। সবাই মিলে পরিচ্ছন্নতার নিয়ম করলেও তা মানেন না কেউই।

পরিবেশবিদরা বলছেন, প্লাস্টিক বা পলিথিন পচনযোগ্য নয়। দীর্ঘদিন অক্ষত অবস্থায় থাকে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণের কারণে একটা বীজ মাটিতে দিলেই গাছ হয়ে যায়। অন্যদেশে তা সম্ভব নয়। কিন্তু মাটির নিচে এসব পলিথিনের উপরে গাছ বড় হতে পারে না। মরে যায়। যা পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

আবার প্লাস্টিক দূষণের কারনে মাছসহ নদীর অন্য জীবের অস্তিত্ব সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই নগরায়ণ ও বৈশ্বিক দূষণের কারণে পরিবেশের উপকারি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্রাণি হারিয়ে যাচ্ছে। এখনই পরিবেশের দূষণ রোধ করা না গেলে হুমকির মুখে পড়বে সমগ্র জীবকুল।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, প্লাস্টিক ও পলিথিন ডিগ্রেডেবল না। এটা পানি ও মাটিকে দূষিত করে। এর দূষণ জলচক্র এবং খাদ্য চক্রের ভেতরে প্রবেশ করে। সেখান থেকে মাছের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। ফলে আমরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছি।
তিনি আরো বলেন, পদ্মারপাড়ে দোকানিরা উচ্ছিষ্ট, ময়লাগুলো যত্রতত্র ফেলে রাখে। এতে করে আমাদের পরিবেশটা সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ফেলে রাখা প্লাস্টিক-পলিথিনগুলো নদীর পানিতে মিশে শুকিয়ে গেলে চাষাবাদের জন্য ক্ষতিকর হবে।

এ বিষয়ে রাজশাহী পরিবেশ অধিদফতরের সিনিয়র কেমিস্ট মিজানুর রহমান বলেন, প্লাস্টিক-পলিথিন পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বস্তু। আমরা পলিথিন ব্যবহারের মানুষকে নিরুৎসাহিত করি। ব্যবহার কমানোর মাধ্যমেই পলিথিন দ্বারা দূষণ কমানো সম্ভব। এজন্য আমরা বিভিন্ন অভিযানও পরিচালনা করি। আমরা পদ্মাপাড় পরিদর্শন করবো, এরপর মেয়র স্যারের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন বলেন, নদীর দূষণরোধে প্রয়োজন জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি। যেন তারা প্লাস্টিক-পলিথিন নদীতে, ড্রেনে না ফেলেন। সেই লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যেই উন্মুক্ত সভা করা হয়েছে। একদিনেই সবকিছু বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়, ধীরে ধীরে গৃহীত কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

রাসিক জানিয়েছে, পদ্মা নদীতে দূষণরোধে নদী সংলগ্ন এলাকার সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করছে সিটি কর্পোরেশন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মহানগরীর অডভার্ড মুনসক্গার্ড পার্কে জনসাধারণের অংশগ্রহণে করা হয়েছে সভা।

পদ্মা নদী দূষণরোধে মহানগরবাসীকে সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়েছেন রাসিক মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। একই সঙ্গে মেয়র নমহাগরীর পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পদ্মাপাড়ের সৌন্দর্য্য বজায় রাখতে মহানগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।

মহানগরবাসীর উদ্দেশ্যে মেয়র লিটন বলেন, যে কোন ধরণের প্লাস্টিক বর্জ্য নদীর জীব ও বৈচিত্র নষ্ট করে। নির্মাণ সামগ্রী, বর্জ্য সামগ্রী, মাটি, রাবিশ ইত্যাদি নদীতে ফেলবেন না। বাসাবাড়ি ও দোকানের ময়লা আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলে আপনার এলাকার ভ্যান চালককে দিন। আমাদের গৌরব ও ঐতিহ্যেও অংশ পদ্মা নদীকে সংরক্ষণের দায়িত্ব আমাদের। আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।

আরএইচএফ/এসআর

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft