বগুড়ার ধুনট উপজেলায় আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৭ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদ সড়কে এ ঘটনা ঘটে। পুরো এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আহতরা হলেন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজাউদ্দৌলা, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া খন্দকার, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ হারুন, চিকাশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সাজেদুল ইসলাম, যুবলীগের সদস্য সুজন, বলয় মন্ডল, ছাত্রলীগের সদস্য রাজু সুলতান ও রুবেল বাবু। অপরপক্ষে পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুজন সাহা, পৌর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস ছাত্তার ও যুব শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীনুর আলম এবং এসআই প্রদীপ, এসআই মজিবর, কনষ্টেবল মোজাফফর ও কনষ্টেবল সবুজ মিয়া।
ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, গত ৩ মাস ধরে উপজেলা পরিষদের সরকারি বরাদ্দের অর্থ বন্টন নিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খোকনের সঙ্গে ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরোধ চলছিল। একপর্যায়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারমান আব্দুল হাই খোকনের বিরুদ্ধে ১০ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা প্রশাসকের নিকট অনাস্থা প্রস্তাবের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বেলা ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদের হল রুমে বৈঠকে বসেন।
তিনি আরও জানান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খোকনের পক্ষের নেতাকর্মীরা বৈঠকটি ভন্ডুল করার চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি টি আই এম নুরুন্নবী তারিক বলেন, উপজেলা পরিষদের নামে বরাদ্দকৃত অর্থ বন্টন নিয়ে ১০ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যাদের সঙ্গে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরোধ ছিল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অনাস্থা প্রস্তাবের নেপথ্যে থেকে নেতৃত্ব দেন বগুড়া-৫ আসনের সাংসদ হাবিবর রহমানের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আসিফ ইকবাল। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় আসিফ ইকবালের নেতৃত্বে তার নেতাকর্মীরা যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মারধর করেছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খোকন বলেন, আমাকে অনাস্থা প্রস্তাবের কোন বিষয় ছিল না। উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ বন্টনে দলীয় ভাগ নিয়ে সাংসদের সঙ্গে আমার বিরোধ হয়। শুক্রবার সকালে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসোসিয়েশন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেই হিসেবে আজ সব ঘটনা সমাধান করতে সকাল ১০টার দিকে বৈঠকের প্রস্তুতি চলছিল। এর আগেই সাংসদের ছেলে আসিফ ইকবালের নেতৃত্বে আমার নেতাকর্মীদের মারধর করা হয়েছে।
সাংসদের ছেলে আসিফ ইকবাল বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খোকনের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ জেলা প্রশাসকের নিকট অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণের জন্য বৈঠক করছিলেন। আমি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মহসীন আলমের সঙ্গে নেতাকর্মীদের নিয়ে পরিষদের বাইরে অবস্থান করছিলাম। এ সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতাকর্মীরা আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করেছে। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা অপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে।
ভারপ্রাপ্ত ওসি কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করা হয়েছে। পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মধ্যে পরিষদের নামে বরাদ্দকৃত উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ বন্টন নিয়ে বিরোধ চলছে। এ কারণে উপজেলা পরিষদের পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খোকন গত ৩ মাস ধরে সমন্বয় কমিটির সভায় আসেন না। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১০ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যানবৃন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের নিকট অনাস্থা প্রস্তাব পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন।
-এমএ/এমএ