For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

চীনে কাকড়া রপ্তানি বন্ধ, দামও কম, দিশেহারা চাষী

Published : Tuesday, 2 February, 2021 at 12:04 PM Count : 176

করোনা ভাইরাসের কারণে চীনে কাকড়া রপ্তানি বন্ধ ও দাম কমে যাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন বাগেরহাটের চাষীরা। লোকসানের মুখে জেলার প্রায় ৬ হাজার খামারি চাষাবাদ বন্ধ করে দিয়েছেন।

দেনাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন চাষী ও কাকড়া ক্রয় বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত লক্ষাধিক মানুষ। ব্যাংক ঋণ, এনজিও ও মহাজনদের সুদের চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে মৎস্য বিভাগ বলছে, এক হাজার ৬৩ জন কাকড়া চাষীকে সহায়তা দেবে সরকার।

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ভাগা গ্রামের কাকড়া চাষী পিনাক দাস বলেন, ১১ বিঘা জমিতে আমার ৪টি কাকড়ার খামার রয়েছে।৮ লক্ষ টাকা পুঁজি হারিয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। বর্তমানে চাষাবাদ বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু ব্যাংক ও দাদনদারদের চাপে বাড়িতে ঘুমানোর সুযোগ নেই।
কাকড়া চাষে ৪৬ লক্ষ টাকা পুঁজি হারিয়ে দিপঙ্কর মজুমদার এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন, কিভাবে দেনা পরিশোধ করবেন তা নিয়ে রয়েছেন শঙ্কায়। কাকড়া রপ্তানি বন্ধ থাকায় খামারে চাষ করা কাকড়া মরে যাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি।

দিপঙ্কর বলেন, চিংড়ি চাষে নানা প্রকার রোগ বালাইয়ের কারণে তেমন লাভ হচ্ছিল না। পরে ২০১৮ সালে কাকড়া চাষ শুরু করি। লাভও ভাল হতে থাকে। একপর্যায়ে ২০১৯ সালের শেষের দিকে বড় আকারে কয়েকটি কাকড়া খামার করি। কিন্তু ২০২০ সালে প্রথম দিকে করোনার থাবায় কাকড়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। রপ্তানি বন্ধ ও দাম কমে যাওয়ায় সব খামারের কাকড়া সময়মত বিক্রি করতে পারায় কাকড়া মরে যায়। করোনার প্রকোপ সামান্য কমতে থাকলেও গেল বছরের শেষের দিকে ধার দেনা করে আবারও চাষ শুরু করি। কিন্তু উৎপাদিত কাকড়া সরাসরি চিনে না যাওয়ায় দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। যার ফলে কাকড়া বিক্রি করে আমাদের উৎপাদন খরচও উঠছে না।

শুধু দিপঙ্কর মজুমদার ও পিনাক নয় রামপাল, মোংলা বাগেরহাট সদরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার কাকড়া চাষীদের একই অবস্থা। কাকড়া চাষ বন্ধ করেও স্বাভাবিক থাকতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। আর যারা লোকসানের মুখেও কাকড়া চাষের সঙ্গে রয়েছে, তারাও বিপুল পরিমাণ লোকসানে পড়ছেন। 

কারণ কাকড়া উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে, কমেছে দাম। এই অবস্থায় চীনে কাকড়া রপ্তানি চালু করতে সরকারি পৃষ্ঠ পোষকতা ও বিনা সুদে ঋণ দিয়ে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখারা দাবি জানিয়েছেন চাষীরা।

বর্তমান বাজার দরের বিষয়ে বাগেরহাটের কাকড়া ব্যবসায়ী সাধন কুমার সাহা বলেন, রপ্তানিযোগ্য কাকড়া সাধারণত ৫টি গ্রেডে বিক্রয় হয়। যা প্রত্যেক গ্রেডে ৬ থেকে ৭‘শ টাকা কেজিতে কমেছে। ২‘শ গ্রাম (ফিমেল) ওজনের কাকড়ার কেজি ছিল ২২‘শ টাকা সেই কাকড়া বর্তমানে ৮‘শ টাকা, ১৮০ গ্রামের কাকড়া ছিল ১ হাজার টাকা তা বর্তমানে ৬‘শ টাকা, ১ ৫০ গ্রামের কাকড়া ছিল ৮‘শ টাকা এখন তা ৪‘শ টাকা, ১শ গ্রামের কাকড়া ছিল ৬‘শ বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩‘শ টাকায়। এই দামে কাকড়া বিক্রি করে চাষীদের যেমন খরচ ওঠে না। তেমনি ব্যবসায়ীদেরও পড়তে হয় লোকসানে।

বাংলাদেশ কাকড়া সরবরাহ সমিতির সাধারণ সম্পাদক অজয় দাস বলেন, সারাদেশে দুই লক্ষাধিক মানুষ কাকড়া চাষ ও ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত। বাগেরহাটের চাষীদের উৎপাদিত বেশির ভাগ কাকড়া বেশি দামে চীনে রপ্তানি করা হতো। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে রপ্তানী বন্ধ হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। করোনাকালে বাগেরহাটের চাষীদের শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৬ হাজার কাকড়ার খামার। চীনে কাকড়া রপ্তানিসহ সরকারি ভাবে সহযোগিতা না পেলে এসব চাষীরা নিঃস্ব হয়ে যাবে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক বলেন, বাগেরহাটে উৎপাদিত কাকড়া চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, কোরিয়ায় রপ্তানি হতো। এর মধ্যে চীনেই রপ্তানি হয় ৮০ শতাংশ। হঠাৎ করে চীনে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে চাষী ও ব্যবসায়ীরা যেমন বিপাকে পড়েছেন। সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা চাষীদের ধৈর্য্য ধারণের পরামর্শ দিচ্ছি। 

তিনি বলেন, সরকারি ভাবে বাগেরহাটের এক হাজার ৬৩ জন খামারিকে প্রণোদোনা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমানে সরাসরি চীনে কাকড়া না গেলেও থাইল্যান্ড হয়ে চীনে কাকড়া রপ্তানি হওয়ায় দাম কমে যাওয়ায় চাষীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সরকারি হিসেবে ১ হাজার ৮৫৯টি কাঁকড়া খামার রয়েছে। এসব খামারে চাষীর সংখ্যা ১ হাজার ৬৭০ জন। তবে বেসরকারি হিসেবে জেলায় কাঁকড়া খামারের সংখ্যা ৮ হাজারের অধিক। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দুই হাজার ৬২৯ টন কাঁকড়া রফতানি করা হয়। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই বদলে যেতে থাকে সে চিত্র।

-এসএ/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,