For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

আগাম ফুল-ফল পেতে অভিনব ব্যবস্থা

ড্রাগন গাছকে বোঝানো হচ্ছে দিন ১৮ ঘণ্টা!

Published : Monday, 1 February, 2021 at 5:12 PM Count : 168

শীতের তিব্রতার মধ্যেও দিন বড় হয়েছে। সূর্য ডোবে এখন রাত ১০টায়। আবার ভোর ৫টাতেই সূর্যের আলো ফোটে। এভাবে ড্রাগন গাছকে বোঝানো হচ্ছে দিন বড় হয়ে হয়েছে ১৮ ঘণ্টা। আগাম ফুল পেতে বাগানজুড়ে বিশেষ বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে ড্রাগন গাছের সঙ্গে এমন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বিদিরপুর গ্রামের ড্রাগন চাষি হেদায়েতুল ইসলাম হেলাল এমন কৌশল অবলম্বন করছেন। হেলাল বলছেন, সন্ধ্যা নামার পর গাছ তার সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু দিন বড় থাকলে গাছ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া চালু রাখে। গাছ যত বেশি খাদ্য গ্রহণ করে ততবেশি বেড়ে ওঠে। ফুলও ফোটে তাড়াতাড়ি। তাই এই কৌশল।

গোদাগাড়ীর উদপুর এলাকায় হেলালের ড্রাগন বাগান। প্রকল্পের নাম রাখা হয়েছে ‘গ্রীণ ওয়ার্ল্ড বসন্তপুর’। প্রকল্পের উদ্যোক্তা হেলাল একজন নগর সবুজায়নকর্মী। ঢাকা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন নগরী সবুজায়নের জন্য পরিকল্পনা প্রনয়ণের কাজ করেন তিনি। দেশে উৎপাদন কম এমন বিদেশী ফলের পরীক্ষামূলক চাষাবাদ শুরু করছেন তিনি। বাগানে তার ড্রাগন ছাড়াও রয়েছে ভিয়েতনামের আতা, ক্যাপসিকাম, অ্যাবোকাডো, গুজরাটি খেজুর, মাল্টা ইত্যাদি ফল।

দু’বছর আগে হেলাল সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে করেন ড্রাগনের বাগান। সেই জমি থেকে গেল বছর সাড়ে ১৩ মেট্রিক টন ড্রাগন বিক্রি করেছেন। এরই মধ্যে বাগানের পরিধি বেড়ে হয়েছে ১৮ বিঘা। এর মধ্যে ১২ বিঘা ড্রাগন। অন্যান্য ফল রয়েছে ছয় বিঘায়। গত বছর চারটি বাল্ব দিয়ে আলোর পরীক্ষাটা চালিয়েছিলেন তিনি। দেখা গেছে, এসব গাছে ফুল ফুটেছে একমাস আগে। তাই এবার আরো বড় পরিসরে এই আলোর ব্যবস্থা করেছেন হেলাল। তবে এটিকে পরীক্ষামূলকই বলছেন হেলাল।
গত বছর ৫ ফুট পরপর চারটি বাল্ব ব্যবহার করেন হেলাল। ফুলও এসেছিল আগে। কিন্তু দিনে আবার রোদ বেশি থাকায় নিষিক্ত হওয়ার আগেই ঝরে পড়ে ফুলগুলো। এবার দিনে সূর্যের তাপ কম। তাই পরীক্ষামূলক এই পদ্ধতিতে আগাম ফল পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হেলাল। তিনি এখন বিকেল ৫টার দিকে বাল্ব জ¦ালিয়ে দিচ্ছেন। জ¦লছে রাত ১০টা পর্যন্ত। মাঝে দিনশেষে রাত নেমে এলেও গাছ টের পাচ্ছে না। আবার ভোরের আলো ফোটার আগে ৫টার দিকেই বাল্বগুলো জ¦ালিয়ে দেয়া হয়। তখন গাছ ভাবে, সূর্য উঠে গেছে। ভোর ৬টার দিকে যখন প্রকৃতই সূর্যের আলো ফোটে তখন বাল্বগুলো বন্ধ করা হয়। এভাবে গাছকে ছয়ঘণ্টা দিন বড় দেখানো হচ্ছে।

হেলাল এবার প্রায় ৫ কাঠা জমিতে মোট ২৬০টি বিশেষ এই বাল্ব বসিয়েছেন। ১৫ ওয়াটের এই বাল্বগুলো আনা হয়েছে চীন থেকে। এগুলো কৃষিকাজের জন্যই বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। প্রতিটি বাল্বের দাম পড়েছে ৪৭০ টাকা। ৩ হাজার ৬০০ রঙের আলো দিতে সক্ষম এই বাল্বগুলো। গত দুই মাস ধরে বাল্বগুলো জ¦ালিয়ে দেয়া হচ্ছে। চলবে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। যে অংশে আলো জ¦ালানো হচ্ছে সেখানে ইতোমধ্যে দু’একটি করে ফুল আসতে শুরু করেছে। জমির অন্য অংশে যেখানে বাল্বের ব্যবস্থা করা হয়নি সেখানে এখনও ফুলের দেখা মেলেনি।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সূর্যের আলোর সাথে বিকিরিত হয় দেড় লাখেরও বেশি রঙ। যা গাছেদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে। আর এই বাল্বগুলো রঙ ছড়ায় ৩ হাজার ৬০০ ধরনের। আলোর রঙ সূর্যের রঙের মতোই। তাই সূর্যের আলোর বিকল্প হিসেবে এই বাল্বগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। এই আলো গাছকে সজাগ ও বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে পুরোপুরি না হলেও বেশ সহায়ক হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাছের জীবন আছে তা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। ফলে সূর্যের আলো চলে যাওয়ার পরে গাছ সালোকসংশ্লেষণসহ অন্যান্য কার্যক্রম থামিয়ে দিতে পারে। এতে ঝিমিয়ে পড়বে গাছের বৃদ্ধি। বিলম্বিত হবে ফুল ফোটা। তাই আলো সরবরাহ করা হচ্ছে। যেন গাছ ১৮ ঘন্টা তার কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। এতে গাছের বৃদ্ধি ত্বরাণি¦ত হবে। কাঙ্খিত সময়ে মিলবে ফুল। তবে শতভাগ সফল হবেন এমনটা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না উদ্যোক্তা হেলাল।

তিনি বলেন, আমরা গতবছর চারটা বাল্ব দিয়ে পরীক্ষাটা চালিয়েছিলেন। পার্থক্য লক্ষ্য করেছি। এবার পরিধি বাড়িয়েছি। সফলতা কতটুকু আসবে তা এখনই বলতে পারছি না। এটাকেও আমরা পরীক্ষামূলকই বলছি। হেলাল বলেন, আলো জ¦ালিয়ে দিনের সমাপ্তিটা আড়াল করা হচ্ছে গাছের কাছে। যাতে করে গাছ তার কাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে না নেয়, ঠিকভাবে চালিয়ে যায় সালোকসংশ্লেষণসহ অন্যান্য কার্যক্রম। তাহলে তাড়াতাড়ি ফুল আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আর এক মাস আগেই যদি ফুল ফোটে, ফলও বিক্রি হবে একমাস আগে। তখন দাম বেশি পাওয়া যাবে ফলের। বেশি মুনাফা করার আশায় এই প্রযুক্তির প্রয়োগ।

তিনি জানিয়েছেন, সাধারণত ড্রাগন গাছে ফুল আসে এপ্রিল মাসে। জুন থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। কিন্তু সেই সময়টা কমিয়ে মার্চেই আগাম ফুল আনার চেষ্টা চলছে আলোর মাধ্যমে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রক্রিয়াটা একেবারেই ভুল নয়। আলোর মাধ্যমে গাছকে দিন বড় দেখানোর প্রক্রিয়া অকার্যকরও নয়। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখা রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামছুল হক বলেন, বাল্বগুলো বিশেষভাবে তৈরি। সেগুলো সূর্যের আলোর মতো আলো দেয়। তাই গাছ মনে করে, এখনও রাত হয়নি। তিনি বলেন, এখন দিন ছোট। কিন্তু ড্রাগনের ফুল আসতে লম্বা দিনের প্রয়োজন। এই বাল্বের মাধ্যমে দিনটাকে গাছের কাছে লম্বা করা হয়। বাইরের দেশে এটা প্রচলিত প্রযুক্তি। আমাদের এখানে নতুন। আমি নিজে হেলালের ড্রাগনের বাগান ঘুরে এসেছি। আমরা আশা করছি, তিনি সফল হবেন।

আরএইচ/এইচএস

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,