ইউটিউব দেখে প্রতারণার কৌশল আয়ত্ত করে ভোলার চরফ্যাশনের দিপু ২০ বছর বয়সেই কোটিপতি বনে গেছে। সে নিজেকে কখনও মার্কিন নাগরিক, কখনও এনএসআই পরিচালক, বড় সরকারি কর্মকতা ছাড়াও পরিচয় দিতেন গ্রুপ অব কোম্পানির মালিক।
সম্প্রতি এই প্রতারক পোশাক তৈরির প্রতিষ্ঠান নোমান গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাওয়ার খবর জানাতে রাজধানীর একটি ৫ তারকা হোটেলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ফেসবুক লাইভে সে জানায়, গুলশান ওয়লে ফেয়ার ক্লাবে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছে সে। আর এ খবরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে নোমান গ্রুপের হেড অব প্রটোকল মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী নজরে আসে। দিপু নামের ওই প্রতারকের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি।
এছাড়াও অভিযোগ করা হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার বিভাগে। পরে তাকে রাজধানীর পল্লবী থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ডিএমপি গোয়েন্দা সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক তদন্তে দিপুর প্রতারণার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে তার প্রতারণার নানা কৌশল। ১৪ বছর বয়সে ভোলায় ত্রাণের টাকা আত্মসাতের মধ্য দিয়ে দিপুর প্রতারণা শুরু হয়। ভোলা, কিশোরগঞ্জ, সিলেটে সরকারি প্রটোকলে সফর করেছেন তিনি। এমনকি সৌদি সরকারের ডাকে হজও করেছেন। এনএসআইয়ের সহকারী পরিচালক হিসেবে চাকরি দেয়ার নামে হাতিয়েছেন মোটা অংকের টাকা।
তিনি আরও জানান, করোনায় অসহায় মানুষকে সহায়তার নামে মানবিক টিম নামে সংগঠন তৈরি করে প্রবাসীদের থেকে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। তার নামে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ আছে এমন চেক দেখিয়ে করেন প্রতারণা। প্রতারণার ফাঁদ পাততে দিপু চলাফেরা করেন দামি ব্রান্ডের ভাড়া করা গাড়িতে। তার হাত থেকে রেহাই পায়নি ভাড়া করা গাড়ির চালকরাও। দিপুর বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারী) রাজধানীর ভাটারা থানায় মামলা করেন লেকশো অটো লিমিটেডের গাড়িচালক মীর সুজেল।
এদিকে, দিপু গ্রেফতার হওয়ার পর তার নিজ এলাকা থেকে বের হচ্ছে নতুন নতুন তথ্য। চরফ্যাশন উপজেলার নজরুল নগর ইউনিয়নের বাবুরহাট বাজারের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম দিপু। বাবা ওই এলাকার একজন খামারী ছাগল পালক ও দিনমজুর।
দিপুকে নিয়ে সম্প্রতি ডিবিসিসহ অন্য একটি চ্যানেল নিউজ করার পর থেকে তার গ্রামে চলছে আলোচনা, সমালোচনা। সবার মুখে একটাই কথা এ যেন আরেক শাহেদ। এতদিন তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলেনি।দিপুর নিজ এলাকায় মাদক, দেহ ব্যবসা ছিলো তার দখলে। আর এই মাদক ব্যবসার পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করতো এলাকায় দিপুর ডান হাত হিসেবে পরিচিত নজরুল নগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী। সে একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী।
নজরুল নগর ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোহাম্মদ আলি মূলত আগে শিবিরের কর্মী ছিলো। ২০১৪ সাল থেকে ছাত্রলীগের খাতায় নাম লিখিয়ে নজরুল নগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন। চাকুরি দেওয়ার নামে প্রতারক দিপু নিজ এলাকার প্রায় অর্ধশত মানুষের কাছে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এই টাকাগুলো লেনদেন হতো মোহাম্মদ আলীর ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে। চাকুরির জন্য যারা টাকা দিতো তাদেরকে প্রথমে মোহাম্মদ আলী ম্যানেজ করতো, পরবর্তীতে তার ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে টাকা লেনদেন হতো।
প্রতারক দিপুর গ্রেফতারের পর থেকে তার ডান হাত মোহাম্মদ আলীও এখন পলাতক।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ চর আইচা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, প্রতারক দিপুর বিরুদ্ধে গাজীপুরের শ্রীপুর মডেল থানা, কালিহাতী, টাঙ্গাইল থানাসহ চরফ্যাশন থানায় প্রতারণাসহ জালিয়াতির ১০/১৫টি মোমলা রয়েছে।
-এসএফ/এমএ