যে সাগরের কোনো তীর নেই!
Published : Wednesday, 23 December, 2020 at 7:16 PM Count : 291
‘শৈবাল সাগর’ এর নাম হয়তো অনেক পাঠক শোনেননি। এই সাগরটি অবস্থিত আটলান্টিক মহাসাগরে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এর কোনো তীর বা উপকূল নেই। এর আয়তন ৩৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি। শৈবাল সাগরের প্রকৃত নাম সারগাসো সাগর। এতে খুব বেশি পরিমাণ শৈবাল জন্মে।
চার ধরনের স্রোত সাগরটিকে পরিবেষ্টন করে আছে। স্রোতগুলো হচ্ছে পশ্চিমের উপসাগরীয় স্রোত, উত্তরের আটলান্টিক স্রোত, পূর্বের ক্যানারি স্রোত এবং দক্ষিণের নর্থ ইকুইটোরিয়াল স্রোত। অতিরিক্ত শৈবাল এবং চতুর্মুখী স্রোতের কারণে এই সারগাসো সাগরের পানি স্থির। শৈবাল বেশি থাকায় অনেক সময় জাহাজ আটকে যায়। অনেক ক্ষেত্রে ছোট জলযানগুলো ডুবেও যায়।
সারগাসো সাগরের মানচিত্রএই সাগরে সারগাসাম নামক এক ধরনের শৈবাল খুব বেশি জন্মে। এ কারণেই হয়তো পর্তুগীজরা এই সাগরের নাম দিয়েছিল সারগাসো। তীর কিংবা উপকূলবিহীন এই সাগরে এত শৈবাল জমা হওয়ার পেছনে চারপাশের স্রোতকে দায়ী করেছেন অনেক বিজ্ঞানী। স্রোত চারপাশ থেকে প্রতিনিয়তই শৈবাল এনে এই সাগরে জমা করছে।
অতিরিক্ত শৈবালের কারণে এই সাগরে স্রোত নেই বললেই চলে। স্রোতহীন হওয়ায় এর পানি কাঁচের মতো স্বচ্ছ। শৈবালের ফাঁকে সাগরতলের অনেক গভীরে আলো প্রবেশ করতে পারে। এ কারণে সাগরতলের অনেক গভীর পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায়। সমগ্র আটলান্টিকের মধ্যে এই সাগরের পানিতেই লবণাক্ততার পরিমাণ অনেক বেশি।
সাগরের উপরিতলে শৈবালের চাদরএই সাগরের উপরিপৃষ্ঠের অনেক অঞ্চলে কার্পেটের মত শৈবাল আস্তরণ সৃষ্টি হয়। কোপিপড, প্ল্যাংকটন, সারগাসাম ফিশ, অক্টোপাস, গ্ল্যাসি স্ন্যাপার, সার্জিয়ান্ট মেজর, বেলুনফিশ, স্কুইরেল, ডেমসেলফিশ, ডলফিন ফিশ, মাহি ফিশ, ফ্লাইং ফিশ, কাঁকড়া, তিমি, ঈল, সামুদ্রিক কচ্ছপসহ বিভিন্ন প্রজাতির বাস এই শৈবাল সাগরে। এছাড়াও অনেক সামুদ্রিক প্রজাতি শুধু প্রজননের জন্য এই সারগাসো সাগরে আসে।
সারগাসো সাগরে দূষণসারগাসো সাগর নিয়ে নানা ধোঁয়াশা রয়েছে মানুষের মনে। অনেক সাহিত্যিকের লেখায় এই সাগরের নাম উঠে এসেছে। তবে সাগরটি চরম মাত্রায় দূষণের শিকার হচ্ছে। এছাড়াও নানা পরিবেশিক বিরূপ প্রভাবে এই সাগর থেকে শৈবাল আশেপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে যাচ্ছে। সাগরটিকে বাঁচাতে গঠিত হয়েছে ‘সারগাসো সি কমিশন’।
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি এবং নোয়া
এসআর