বাহারছড়া ইউনিয়নের জুম্মা পাড়া উপকূলের আবদুল আলীর ঘাট দিয়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে সাগর পথে মানবপাচার করতে গিয়ে দালালদের দু’গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। ওই মানবপাচারকারীদের দৌরাত্মে এলাকাবাসীরাও আতঙ্কে রয়েছে। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মানবপাচার করতে গিয়ে দুই দালাল দ্রুপের মধ্যে মারামারির এ ঘটনা ঘটেছে।
সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর শীত মৌসুম আসলেই মানবপাচারকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠে। এর মধ্যে কয়েকটি ফিশিং বোট যোগে সাগরে অপেক্ষামান বড় ট্রলারে শতাধিক মালয়েশিয়াগামী যাত্রীকে পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই উপকূল দিয়ে মানবপাচারের ফলে এলাকার সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, মানবপাচারকারী দালালদের দৌরাত্মে এলাকাবাসীর ঘুম হারাম হয়ে গেছে। টেকনাফের উপকূলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়ার বিভিন্ন নৌকা ঘাট দিয়ে সক্রিয় রয়েছে এসব মানবপাচারকারীরা। এর মধ্যে নোয়াখালীর জুম্মাপাড়া এলাকায় প্রতিনিয়ত নতুন কৌশল অবলম্বন করে মানব পাচারকারী চক্র সক্রিয় হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ অবৈধ মানবপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে এলাকায় কোটিপতি হয়েছেন অনেকে। বনে গেছেন রাতারাতি সহায় সম্পত্তির মালিক। মানবপাচারকারীরা অবৈধভাবে সাগর পথে মালয়েশিয়া মানব পাচার করতে গিয়ে সমূদ্রে ডুবে অনেকের সলিল সমাধি হয়েছে। এছাড়া মালয়েশিয়া পৌঁছে মুক্তিপন আদায় করতে না পারায়ও প্রাণ দিতে হয়েছে এদেশের অনেক নাগরিককে। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা ও কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় মানব পাচার ব্যবসায়ীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
সূত্রে আরো জানা যায়, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের খোঁজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তল্লাশী অভিযানের পর থেকে চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মানব পাচারকারী দালালরাও গা ঢাকা দিয়েছিল। চিহ্নিত অনেক দালাল সাগর পথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়েছে বলেও জানা গেছে। যাওয়ার আগে পাচারকারী দালাল সিন্ডিকেট তাদের উত্তর সূরী হিসেবে নতুন পাচারকারী সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে এরা ভিন্ন কৌশলে সাগর পথে মালয়েশিয়া মানবপাচার অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালীর জুম্মাপাড়ার আব্দুল আলীর মাঝির ঘাট নামক এলাকা থেকে প্রতিনিয়ত মালয়েশিয়া যাত্রী বিশেষ ব্যবস্থা ও প্রহরায় ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে এলাকায় পৌঁছে দিচ্ছে একটি দালাল চক্র। সেখান থেকে রাতের বেলায় জেলে সেজে ফিশিং নৌকায় করে দালালদের মাধ্যমে বড় ট্রলারে উঠিয়ে দেয়া হয় বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাহারছড়া ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া এলাকার কয়েকজন যুবক জানান, আগে যারা মানবপাচার কাজে জড়িত ছিল তাদের অনেকেই মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়েছে। তাদের উত্তরসূরী হিসেবে নতুন কিছু মানবপাচারকারী দালাল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন কৌশলে মানবপাচারে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে বাহারছড়া ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া এলাকার আব্দুল আলী, সাইফুল, মোহাম্মদ জাবেরসহ ১০/১৫ জনের একটি মানবপাচারকারীদের সিন্ডিকেট। এই মানবপাচার দালালদের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আব্দুল আলীর মাঝির ঘাট দিয়ে শত শত নারী-পুরুষ পাচার করছে বলে এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়। এলাকায় মানবপাচার দালালদের বিরুদ্ধে পাচার কাজে বাধা দিতে এলে মারধর, বিভিন্ন মামলার হুমকি ধমকি দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতিতে রেখেছে।
অভিযুক্ত ও পাচারকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহলের। তা না হলে ইয়াবার মত মানব পাচারও ভাইরাস হয়ে ছড়িয়ে পড়বে।
এব্যাপারে বাহারছড়া ইউনিয়নের-৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. ইলিয়াছ জানান, জুম্মা পাড়া এলাকা আবদুল আলীর ঘাট দিয়ে প্রতিনিয়ত মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে সাগর পথে মানবপাচার করে যাচ্ছে চিহ্নিত কয়েকজন দালাল। তাদের দৌরাত্মে এলাকাবাসীরাও আতঙ্কে রয়েছে। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে মানবপাচার করতে গিয়ে দুই দালাল গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। তিনি এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ মডেল থানার ওসি (তদন্ত) এবিএমএস দোহা জানান, এবিষয়ে কেউ অবগত করেনি। তবে মানবপাচারকারী যেই হোকনা কেন আইনের আওতায় আনা হবে।
এইচএস