টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার খরস্রোতা চেল্লাখালী নদীর পানি ২৭.২৮ সেন্টিমিটার ও ভোগাই নদীর পানি ৭.৫৬ সেন্টিমিটার বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) এই দুই নদীর পাড় উপচে গিয়ে নদীতীরবর্তী গ্রামগুলোর বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সকাল দশটা পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে শেরপুরে ১৭৭ মিলিমিটার এবং নালিতাবাড়ীর দুটি পয়েন্টে ২৫৫ ও ২৬০ মিলিটিার।
বানভাসীরা জানান, বৃহস্পতিবার সারারাত একটানা বৃষ্টি হয়। এই টানা বৃষ্টিতে ভোররাত থেকেই উজানে ভারতের মেঘালয় থেকে বয়ে আসা চেল্লাখালী ও ভোগাই এই দুই নদীর পাড় উপচে গিয়ে হঠাৎ করে প্রবল স্রোতে ঢল নামে। এতে নদীতীরবর্তী আন্ধারুপাড়া, পলাশীকুড়া, বাতকুচি বুরুঙ্গা, আটভাইপাড়া, আমবাগান বেকিকুড়া, তাজুরাবাদ, সন্নাসীভিটা, বাঘবের, কলসপাড়, রাজনগর, যোগানিয়া, হাতিপাগার, দুধকুড়া, রুপাকুড়া, নয়াবিল, তন্তর, শিমুলতলা, গড়কান্দা, মরিচপুরান, কোন্নগরসহ প্রায় ২৫টি গ্রামের শতশত মানুষের ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ। সেইসাথে এসব এলাকার হাজার হাজার একর জমির উঠতি আমন ফসলের ক্ষেত বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। একইসাথে ভেসে গেছে এলাকার মানুষের পুকুরের মাছ, ধসে পড়েছে মাটির দেয়াল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পোল্ট্রিফার্ম ও সবজিক্ষেত।
এদিকে, পাহাড়ি ঢলের পানি রাস্তায় উঠায় নন্নী মৈত্রী কলেজ সংলগ্ন সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা শহরের সাথে বারোমারী-নন্নী-শেরপুর সড়কের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
ভুক্তভোগী আন্ধারুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাবিজুল হক ও আব্দুল্লাহ মুন্সি জানান, শুক্রবার ভোরে হঠাৎ করে নদীরপাড় উপচে গিয়ে বাড়িতে পানি উঠে পড়ে। এতে আমরা জীবন নিয়ে বাড়ি ত্যাগ করলেও ঘরের চাল-ডালসহ সমস্ত কিছু পানিতে তলিয়ে গেছে।
তারা বলেন, বিগত প্রায় ৪১ বছরেও এমন ভয়ংকর বন্যা হয়নি। এলাকার বানভাসী মানুষ গরু-ছাগল নিয়ে উচু রাস্তা, স্থানীয় হাট-বাজার ও স্কুল কলেজে আশ্রয় নিয়েছে। ঘরবাড়িতে পানি উঠায় এদের অনেকেই অভুক্ত রয়েছেন। হঠাৎ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষ। তারা পানিতে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে স্প্রীডবোর্ড ও নৌকা ব্যবহারের দাবী জানান।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা বলেন, নালিতাবাড়ীতে হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে এলাকার মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঢলের পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমান জানা যাবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা বন্যার্তদের পাশে আছি। তাদের মাঝে জরুরীভিত্তিতে শুকনো খাবার বিতরণসহ উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।
এমএস/এসআর