শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে খুলে দেয়া হয়েছে অধিকাংশ তৈরী পোশাক কারখানা। সকালে এসব কারখানায় শান্তিপূর্নভাবে প্রবেশ করে কাজে যোগ দিয়েছে শ্রমিকরা। তবে অভ্যন্তরীন সমস্যার কারনে বেশ কয়েকটি কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এছাড়া সার্ভিস বেনিফিট ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে গতকাল সোমবার সকাল থেকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে সকাল থেকে শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোন ধরনের সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া গতকালকের বন্ধ থাকা মন্ডল নীটওয়্যার কারখানাটিও খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর ফলে ওই কারখানার শ্রমিকরাও শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগদান করেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে কারখানার সামনে যৌথ বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন রাখা হয়।
শিল্প পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে শিল্পাঞ্চলের জিরাবো রোডে অবস্থিত এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেড ছাড়া বাকি সব কারখানা চালু রয়েছে। কাঠগড়া এলাকার এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেড, টঙ্গাবাড়ি এলাকায় ম্যাংগো টেক্স লিমিটেড, বাইপাইল এলাকার স্কাইলাইন কারখানা ও সেতারা গ্রুপের তৈরী পোশাক কারখানা স্ববেতনে ছুটি রয়েছে।
তবে টঙ্গাবাড়ি এলাকার মন্ডল নিটওয়্যার, ন্যাচারাল ডেনিম, ন্যাচারাল ইন্ডিগো, জামগড়া ও নরসিংহপুর এলাকায় এনভয়, দ্য রোজ, হামীম, শারমীন, মেডলার, অনন্তসহ অন্যান্য সকল কারখানা চালু রয়েছে। স্ব-বেতনে ছুটি রয়েছে তবে চালু রয়েছে অন্যান্য সকল কারখানা।
এর আগে সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে বাইপাইল এলাকায় এবং ডিওএইচএস এর সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা। পরবর্তীতে ডিওএইচএস এর সামনে থেকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সরে গেলেও বাইপাইল এলাকায় অবস্থান নিয়ে মঙ্গলবারও পাওনা আদায়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
মহাসড়কের বাইপাইল পয়েন্টেই উভয় লেনে সোমবার সকাল ৯ টা থেকে সড়ক অবরোধ করে রাখে। গতকাল গভীর রাতে বৃষ্টিতে ভিজেও সড়ক অবরোধ করে রেখেছিলেন তারা। গতকাল ভিন্ন পথে গাড়ি চললেও মঙ্গলবার সকালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে করে এই পথে এসে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে জনসাধারণকে। এতে নবীনগর ত্রিমোড়কে কেন্দ্র করে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রায় ২০ কিলোমিটার জটের সৃষ্টি হয়েছে।
বার্ডস গ্রুপের নারী শ্রমিক শাহানাজ বেগম বলেন, সোমবার আমাদের আইনগত পাওনাদি পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো ধরনের পাওনাদি পরিশোধ না করে সকল শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করে। আমরা আমাদের পাওনাদি না পাওয়া পর্যন্ত অবরোধ প্রত্যাহার করবো না।
বিক্ষোব্দ শ্রমিকরা জানায়, ২৭ তারিখের ইস্যু করা নোটিশের মাধ্যমে গত ২৮ আগস্ট আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকার বার্ডস গ্রুপের সকল কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হয়। এসময় শ্রমিক কর্মচারীদের আগস্ট মাসের বেতন সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখ ও সার্ভিস বেনেফিটসহ ক্ষতিপূরণ ৩০ সেপ্টেম্বর পরিশোধের দিন ধার্য করা হয়। চুক্তিমত শ্রমিকদের বেতনের টাকা পরিশোধ করলেও ৩০ সেপ্টেম্বর সার্ভিস বেনেফিটসহ ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানের জন্য আরও তিন মাস সময় চেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটি। নির্ধারিত টাকা পরিশোধ না করায় শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এদিকে শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ না করলেও শ্রমিক নেতাদের প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা উৎকোচ হিসাবে প্রদান করে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, বার্ডস গ্রুপ তাদের কারখানা বন্ধ ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে বিজিএমইএ, শ্রমিকসহ সকল পক্ষের একটি বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার গ্রুপটির শ্রমিকদের যাবতীয় আইনগত পাওনা পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু তারা তা করেনি।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সার্ভিস বেনিফিট ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে শ্রমিকরা সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে নবীনগর চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। আমরা তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু শ্রমিকরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সড়ক ছাড়বেনা বলে জানিয়েছে। আমরা কারখানাটির মালিকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। এছাড়া বিজিএমইএসহ যৌথ বাহিনীর সাথে আলোচনা করে শ্রমিকদের দাবি আদায়ের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
অন্যদিকে আশুলিয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রায় ১ ঘন্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এসময় তারা বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী সরকারের আমলে যেভাবে পাখির মতো গুলি করে ছাত্র-শ্রমিক জনতাকে হত্যা করা হয়েছে এখনও তা চলছে। এভাবে চলতে পারে না। শ্রমিক হত্যার কঠোর শাস্তি ও বিচার দাবি করেন তারা।
আশুলিয়া শিল্প-পুলিশ ১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলোতে শান্তিপূর্ণভাবে উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। শ্রমিকরা সকালে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগদান করায় কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় ৭ টি কারখানা বন্ধ আছে এবং ৮ টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া যে কোনো ধরনের অপ্রিতিকর পরিস্থিতি এড়াতে শিল্প পুলিশ, এপিবিএনসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন বলেও জানান তিনি।
ওএফ/এসআর