যানজটে নাকাল সাতক্ষীরা শহরবাসী
Published : Monday, 30 September, 2024 at 4:27 PM Count : 262
কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না সাতক্ষীরা শহরের সড়কগুলোর যানজট। নাকাল শহরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও সড়কের দায়িত্বে থাকা পুলিশও কার্যত ব্যর্থ।
পুলিশ বলছে, এসব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারায় বেপরোয়া চালকরা তাদেরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলেছে। নিরবে সহ্য করতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। ফলে সড়কে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিজেরাও অতিষ্ঠ হয়ে অকপটে শিকার করছেন তাদের ব্যর্থতার কথা।
জেলা ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বরত ইন্সপেক্টর এডমিন শাহাব উদ্দীন জানান, জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিদিন সকালে অসংখ্য ইজিবাইক, থ্রি হুইলার, নসিমন, করিমন, ভটভটি, ব্যাটারি চালিত ভ্যানসহ অন্যান্য যানবাহন শহরে এসে হাজির হচ্ছে। এরপর সারাদিন তারা শহরের মধ্যে ও বিভিন্ন প্রান্তে ভাড়া খেটে সন্ধ্যায় বা রাত্রে এলাকায় ফিরে যায়। আর শহরের যানবাহন তো আছেই। এভাবে প্রচুর যানবাহন প্রতিদিন শহরে আসায় যানজট বাড়ছেই। ট্রাফিক বিভাগ যথাযথভাবে মাঠ পর্যায়ে কাজ করলেও আসলে যানজট কমানো সম্ভব হচ্ছে না। কারণ পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে যানজট সৃষ্টিকারি এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কোন আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় তারাও এখন বেসামাল। তবে জনগনকে স্বস্তি দিতে জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সাথে যানজট নিরসনে কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছেন, গত ৫ আগস্ট থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত সাতক্ষীরায় কোন যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা বা মামলা দায়ের করা হয়নি। একই সঙ্গে অবৈধ বাহন বিশেষ করে ইজিবাইক ও ব্যাটারি চালিত ভ্যান জব্দ না করায় তারা আরো উচ্ছৃঙ্খলভাবে চলাচল করছে। ইতোপূর্বে ট্রাফিক বিভাগে ৩৭ জন কর্মকর্তা ও সদস্যরা দায়িত্ব পালন করলেও বর্তমানে ৪জন টিআই, ৭জন সার্জেন্টসহ ৪৮ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন এই শহরে। কিন্তু অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারায় কার্যত পুলিশের এই কার্যক্রম কাজে আসছে না। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
ট্রাফিক পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরো জানান, ৫ আগস্টের পূর্বে সাতক্ষীরায় ট্রাফিক বিভাগ থেকে প্রতিমাসে ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা সরকার রাজস্ব পেয়েছে। বর্তমানে এই বিভাগ থেকে সরকার একেবারেই রাজস্ব থেকে বঞ্চিত, তেমনি যানজট আর ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুন।
এদিকে পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নাম প্রকাশ না করার প্রতিশ্রুতিতে এক নেতা বলেন, জেলায় বাস মিনিবাস রয়েছে প্রায় ৩শর মত। এর মধ্যে শ খানেক গাড়ির কাগজপত্র সঠিক আছে। বাকিরা চলে হাওয়ার উপর। জেলায় ছোট বড় ট্রাক রয়েছে ২ হাজারের বেশি। এসব ট্রাকের ৮০ভাগ কাগজপত্র সঠিক আছে। বাকি ২০ ভাগ চলে বাতাসের উপর ভর করে। জেলায় থ্রি হুইলার রয়েছে ৪শর মত। যার একটিও রাস্তায় চলার অনুমোদন নাই। আর ইজিবাইক আছে ৬ থেকে ৭ হাজার। এসব বিভাগ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি মাসে মোটা অংকের একটা ইনকাম ছিল। এখন সেই ইনকাম না থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও অনেকটা উদাসিন।
এসব বিষয়ে কথা হয় সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের প্রধান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের সাথে। তিনি বেশ দৃড়তার সাথে ডেইলি অবজারভারকে জানান, সাতক্ষীরা শহরের সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ মাঠে রয়েছে এবং আন্তরিকতার সাথেই কাজ করছেন। কিন্তু ছোট বড় যানবাহনের চালকরা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেপরোয়া ভাবেই চলছেন এমন অভিযোগ আমার কাছেও আছে। তবে এ সমস্ত চালকদের বিরুদ্ধে অচিরেই যথাযথ আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর কার্যালয়ে এ বিষয়ে মিটিং করে বড় যানবাহন গুলোকে দিনে শহরে প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হলেও তারা আইন না মেনে শহরে প্রবেশ করায় যানজট বেড়েই চলেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট বাহনগুলো প্রতিদিন শহরে আসা এবং শহরে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বাহন থাকায় এই সমস্যা লাঘব হচ্ছে না। তবে যে কোন সময় শহরে ছোট বড় অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আসবে জেলা পুলিশ।
তিনি আরো বলেন, রাস্ট্রের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শুধু আইনী ব্যবস্থায় সমাধান হবেনা। শহরের মেইন জায়গা থেকে বাসটার্মিনাল অপসারন করে জিরো পয়েন্টে নেওয়ার বিষয়েও আমরা কাজ করছি। আশাকরি সেটির বাস্তবায়ন হলে শহরবাসী এতে উপকৃত হবেন।
এমজেডআর/এসআর