লেবাননজুড়ে পেজার বিস্ফোরণে এক শিশুসহ নয় জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে দুই হাজার ৭৫০ জন। মঙ্গলবার লেবাননের রাজধানী বৈরুত এবং আরও বেশ কয়েকটি শহরে একযোগে এসব বিস্ফোরণ ঘটে।
আহতের অনেকেই হিজবুল্লাহ'র যোদ্ধা।
এ ঘটনার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে লেবানিজ সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। তারা বলেছে, এর জন্য ইসরায়েলকে ‘উপযুক্ত শাস্তি’ পেতে হবে।
কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে অন্তত ২০০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পেজার হলো এক ধরনের ছোট যন্ত্র, যা মোবাইল ফোনের বিকল্প হিসেবে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। মঙ্গলবার হঠাৎ লেবাননের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক পেজার বিস্ফোরিত হতে থাকে। সেগুলো হ্যাক করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কয়েক মাস আগে তাইওয়ানের একটি কোম্পানির কাছে কয়েক হাজার পেজার তৈরির অর্ডার দিয়েছিল লেবানিজ সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। কিন্তু ওই পেজারগুলোর মধ্যে গোপনে সামান্য পরিমাণে বিস্ফোরক বসিয়ে দেয় ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। একাধিক নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সূত্রগুলো রয়টার্সকে বলেছে, ইসরায়েল বহুদিন ধরেই এই ঘটনার পরিকল্পনা করেছিল।
এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, যে পেজারগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেগুলো হিজবুল্লাহ'র বিভিন্ন ইউনিট ও প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ব্যবহার করতেন। এসব বিস্ফোরণে তাদের অন্তত দুই যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।
তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একাধিক ছবি এবং ভিডিওতে দেখা গেছে, বৈরুতের রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছেন অনেকে। কারও হাতে আঘাত লেগেছে। কেউ কেউ প্যান্টের পকেটের কাছে হাত দিয়ে কাতরাচ্ছেন। হাসপাতালগুলোতে আহতদের ভিড় উপচে পড়ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, স্থানীয় সময় দুপুর ৩টা ৪৫ মিনিট নাগাদ বিস্ফোরণ ঘটতে শুরু করে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে বিস্ফোরণ।
লেবাননের একটি জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, তাইওয়ান-ভিত্তিক কোম্পানি গোল্ড অ্যাপোলোর কাছে পাঁচ হাজার বিপার বা পেজার তৈরির অর্ডার দিয়েছিল হিজবুল্লাহ। চলতি বছরের শুরুর দিকে সেগুলো লেবাননে পৌঁছায়।
নিরাপত্তা সূত্রটি ছবি দেখে পেজারের মডেল এপি৯২৪ বলে শনাক্ত করেছে। এটি অন্যান্য পেজারের মতোই লিখিত (টেক্সট) বার্তা গ্রহণ ও প্রদর্শন করে, কিন্তু ফোনকল করতে পারে না।
ইসরায়েল যেন অবস্থান শনাক্ত (লোকেশন ট্র্যাকিং) করতে না পারে, সে জন্য যোগাযোগের একটি নিম্ন প্রযুক্তির মাধ্যম হিসেবে এ ধরনের পেজার ব্যবহার করছিল হিজবুল্লাহ।
কিন্তু ডিভাইসগুলো একদম ‘উৎপাদন পর্যায়ে’ (প্রোডাকশন লেভেল) পরিবর্তন করে দিয়েছিল ইসরায়েলি গুপ্তচরেরা।
সূত্রের ভাষ্যমতে, মোসাদ পেজারগুলোর ভেতরে এমন একটি বোর্ড বসিয়ে দেয়, যাতে বিস্ফোরক উপাদান ছিল এবং সেটি একটি কোড গ্রহণ করতে পারতো। এটি শনাক্ত করা খুব কঠিন ছিল। এমনকি কোনো ডিভাইস বা স্ক্যানার দিয়েও তা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
সূত্রটি বলেছে, একটি কোডেড বার্তা পাওয়ার পরপরই প্রায় তিন হাজার পেজার বিস্ফোরিত হয়।
এই অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ইসরায়েল বা গোল্ড অ্যাপোলো কেউই রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
গত বছরের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ'র সঙ্গে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আন্তঃসীমান্ত যুদ্ধ চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হিজবুল্লাহ'র এক কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে প্রায় এক বছরের সংঘাতে পেজার বিস্ফোরণ সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা লঙ্ঘন।
-এমএ