সদ্য পলাতক আওয়ামী সরকারের পতনের পর নোয়াখালীর হাতিয়ায় ব্যাপকভাবে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী ও লুটতরাজকতা বেড়ে গেছে। এখানে বিএনপির রাজনীতির নাম ভাঙ্গিয়ে কতেক অর্বাচীন সেখানকার বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। ভাগিয়ে নিচ্ছেন নগদ সুযোগ, সুবিধা।
জানা যায়, সুদীর্ঘ সময় হাতিয়ায় প্রকৃতপক্ষে বিএনপি নামের প্রায় রাজনৈতিক শূণ্যতা থাকলেও হালে কতেক লুটেরাচক্র নিজেদের বড়মাপের বিএনপি সাজিয়ে দলের সুনাম ও সুখ্যাতি বিনষ্ট করছে। এ চক্র গত ক’দিন ধরে হাতিয়ার চরের হরনি ও চানন্দির বিভিন্ন সমাজের বিভিন্ন পরিবারকে জিম্মি করে চাঁদাবাজি করছে বলে জানান স্থানীয়রা। ইতোমধ্যে এ সন্ত্রাসীরা হরনীর এক ইউপি সদস্য সুজনের বসত বাড়িও জ্বালিয়ে দিয়েছে। একইভাবে, হাতিয়ার হরনি ও চানন্দির চরে চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন স্থানীয় হারুন, সাইফুল মাঝি, স্বপন মাঝি, অজু সর্দার, কবির, সাদ্দাম, ছাত্র তারেক, জহির ড্রাইবার, শামীম, ইব্রাহিম, আনাল হক মাঝি, আমজাদসহ প্রমূখ। এদিকে, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ থেকে রক্ষা পায়নি অনেকেরই বসত বাড়ি, ঘরও।
সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চানন্দিতেই সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বেশি হচ্ছে। এখানে শাহিন মেম্বারের বাড়ি, জাফর মাষ্টারের বাড়ি, মিলনের বাড়ি, নাজিম মেম্বারের দোকান, আমিরুল ইসলাম শামীমের ঘর, মুজিবের ঘর ছাড়াও শামীমের ৩টি গরু, ইরাকের ৬টি গরু লুট করে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা।
অপরদিকে, স্থানীয় বেলালের দোকান, চানন্দির আজহার চেয়ারম্যানের ট্রলারসহ অনেকের মালিকীয় ট্রলারও লুট করার অভিযোগ করেছেন তারা। অন্যদিকে, চরম নির্যাতন তথা ব্যাপক মারধোরের শিকার হয়েছেন এলাকার বেশ কিছু শান্তিপ্রিয় জনগণ।
এদের প্রত্যেকেই মোটা অংকের নগদ অর্থ দিয়ে প্রাণে রক্ষা পান বলে জানান ভুক্তভোগী মানুষগুলো। এ নিয়ে পুরো জনপদের সাধারণ মানুষই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
ওয়ার্ড বিএনপির নামেই এসব চাঁদাবাজরা চাঁদা আদায় করেছেন।
জানা যায়, চানন্দির জিয়াউল হক মাঝি, আলী, মামুন, হারুন মেম্বার, মাহমুদুল হক, ইব্রাহিম, মিরাজ ব্যাপারী, রিয়াজ, আবদুল মালেক, সোহেল, নিহাদ, ফারুক, মাসুম, সামছু মাঝি, জনি, রুবেল ড্রাইবার ও জহিরসহ অনেকই মারধোরের শিকার হয়েছেন।
এসব ঘটনায় চানন্দি ইউনিয়নের থানার হাট এলাকার সোহেল ও শাহজাহান, ভুমিহীন বাজার এলাকার মাহবুব, সারোয়ার, আলা উদ্দিন গফুর, বাদশা, কালাদুরের মান্নান মাষ্টার, আবুল হোসেন, শাহাদাত, সাইফুল, তৌহিদ, সেনাজ, চানন্দি বাজারের ইলিয়াছ তালুকদার, ইসমাইল, মোতালেব মাঝি, আলী বাজারের সামছু ও টমোটো বাহার, মান্নান, খেবা জহির, ইয়াছিন, দরবেশ বাজার এলাকার বোরহান সিকদার, বেলাল, ফখরুল, কামরু, নুর উদ্দিন প্রমুখ জড়িত বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
এছাড়াও অভিযোগ ওঠেছে, পুরো হাতিয়াজুড়ে অনেক জায়গায় বিএনপির কথিত নেতা, কর্মীদের হুমকি-ধমকির মুখে এলাকা ছেড়েছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, কর্মী ও সমর্থকেরা। এ নিয়ে স্থানীয় রাজনীতির সচেতনরা বলেছেন, অতীতে হাতিয়ায় রাজনৈতিকভাবে কোন হানাহানি হয়নি। এখানে ব্যক্তিগত শত্রুতা বশত. কিছু ঘটলেও রাজনৈতিকভাবে এ উপজেলায় বিএনপির কোন নেতা, কর্মী রাজনৈতিক মামলা হামলার শিকার হননি।
তাছাড়া, এখানে তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকা নেতার খুবই অভাব ছিল। তারা বলেন, এখানে যারাই আসেন সবাই অতিথি পাখির ন্যায়। বিএনপির সুসময় এলেই এদের দেখা পায়। তারা আরো জানান, ২০০৮ সালে প্রকৌশলী ফজলুল আজিম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জাতীয় নির্বাচন করার কারণে পরবর্তীতে বেশ কিছু বিএনপির নেতা, কর্মী ও সমর্থকেরা তার কাছ থেকে সরে যান।
২০১৮ সালের নির্র্বাচনে তিনি বিএনপির টিকেট নিয়ে মাঠে এলেও একপর্যায়ে ফের হাতিয়া ছেড়ে চলে যান। এরপর আর এতোগুলো ঈদ, চাঁদ পেরিয়ে গেছে কিন্তু তিনি হাতিয়ায় আর ফিরেননি। তারা বলেছেন, এসব রাজনীতির কুকিল সুসময়ে সরব, অসময়ে থাকেন চরম নীবর।
অবশ্য এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, হাতিয়ায় প্রকৃতপক্ষে জাতীয়বৃত্তিক রাজনীতি নেই বললেই চলে। এখানে একেকজন সুবিধার জন্যে একেক নেতার কাঁধে বন্ধুক রেখে ব্যক্তিগত শত্রুতা উদ্ধার করার নেশায় লিপ্ত থাকে সর্বদাই। অপরদিকে, এসব এলাকায় বেশ কিছু নারীও নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে জানান।
এমআর/এসআর