স্ত্রীর বাম পা ভেঙে দিলেন স্বামী, থানায় লিখিত অভিযোগ
Published : Wednesday, 4 September, 2024 at 10:11 PM Count : 159
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের কুর্শিবাড়ি গ্রামে মৎস্যজীবি স্বামী নূরুল হক (৩০) প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে আঘাত করে স্ত্রী রেশমা আক্তারের (২২) বাম পা ভেঙে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাপের বাড়ি থেকে স্বামীর কথামতো টাকা এনে দিতে স্ত্রী সম্মতি না দেওয়ায় মঙ্গলবার (৩সেপ্টেম্বর) সকালে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত রেশমা আক্তার বাদী হয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় স্বামী নূরুল হকসহ চারজনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। আহত ওই নারীকে ওইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ধর্মপাশা থানা পুলিশ,এলাকাবাসী ও আহত ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধর্মপাশা উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের কুর্শিবাড়ি গ্রামের নূরুল হকের সঙ্গে দুই বছর আগে পাশের মধ্যনগর উপজেলার চামরদানী ইউনিয়নের টেপিরকোনা গ্রামের রেশমা আক্তারের বিয়ে হয়। দাম্পত্যজীবনে তাঁদের নয়মাস বয়সী রুশান নামের নয় মাস বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। বিয়ের তিনমাস যেতে না যেতেই মোবাইল কেনাসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে নূরুল হক তাঁর স্ত্রী রেশমাকে বাপের বাড়ি থেকে টাকা এনে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করেন। বাবার বাড়ি থেকে মাঝে মধ্যে সাধ্যমতো টাকা এনে দিতেন রেশমা। গ্যাসের চুলো কেনার জন্য দুই সপ্তাহ আগেও পাঁচহাজার টাকা বাবার বাড়ি থেকে তিনি এনে দেন। মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে ব্যবসা করার জন্য শ্বশুড়ের কাছ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা আনার জন্য স্ত্রীর ওপর চাপ দেন সৃষ্টি করেন স্বামী নূরুল। এতে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন। এ সময় স্বামীর ছোট ভাই শাহ জাহান (২৫) তাঁর বড় ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে এতে সমর্থন দেন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি শুরু হলে রেশমাকে তাঁর স্বামী কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। এক পর্যায়ে নিজ বসতঘরের ভেতরে থাকা প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে স্ত্রীর বাম পায়ে আঘাত করেন স্বামী। পরে নয় মাসের ছেলে রুশান কে নিজের কাছে রেখে দিয়ে তিনি স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করে দেন।
প্রতিবেশি এক নারীর সহায়তায় ধর্মপাশা থানায় এসে ওইদিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করেন রেশমা। অভিযোগ পেয়ে রাত সাড়ে আটটার দিকে কুর্শিবাড়ি গ্রামে যায় পুলিশ। এ সময় রেশমার শ্বাশুড়ির কাছ থেকে নয় মাসের ছেলে সন্তান রুশান কে উদ্ধার করে রাত সাড়ে নয়টার দিকে ধর্মপাশা থানায় এনে শিশুটির মায়ের কাছে তাকে হস্তান্তর করে পুলিশ।
রেশমা আক্তার বলেন, আমার বাপ দিন মজুর। বাপের কাছ থাইক্যা টাকা আইনা না দিলেই স্বামী মাইরধর করে। মাঝে মধ্যে বাপের কাছ থাইক্যা টেহা আইনাও দিছি। স্বামী ব্যবসা করার লাইগা ৩০হাজার টেহা আমার বাপের কাছ থাইক্যা আইন্না দিতে কইছিল। আমি রাজি না হওয়ায় আমার স্বামী আমারে প্রথমে কিল ঘুষি ও চর লাত্তি মারছে। পরে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়া মাইরা আমার বাম পাউডা ভাইংগা হেলাইছে।
রেশমার মা মমিনা খাতুন (৪৫) বলেন, মাইয়াডার জামাই নূরুল হক উচ্ছৃঙ্খল স্বভাবের। বিয়ার আগে আমরা এই জানা আছিইন না। তাঁর কথামত টাকা না দিতে পারলেই আমার মাইয়াডারে মাইরধর করে বাড়িত থাইক্যা বাইর কইরা দেয়। ১৫/২০দিন রাইখ্যা সাধ্যমতো টেহা দিয়া মাইয়ারে হের জামাইড় বাড়ি পাঠাইতে অয়। এইতা লইয়া গেরামে অনেকবার দয় দরবারও অইছে। বার বার ঘটনা খালি ঘটাইয়াই যাইব এইডা আমরা মানতাম হারতাছি না। আমরা এইডার সুবিচার চাই।
স্বামী নূরুল হকের সঙ্গে এ নিয়ে যোগাযোগের চেষ্ঠা করলেও তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ধর্মপাশা থানার এসআই পঙ্কজ ঘোষ বলেন, এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। শিশুটিকে রাতেই উদ্ধার করা হয়েছে। রেশমার স্বামী নূরুল হকসহ আসামিরা সবাই পলাতক রয়েছেন। তদন্ত করে এ নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একে/ এসআর