For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

শ্রমিক আন্দোলনে বহিরাগত-ভাড়াটে টোকাই, কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত

Published : Wednesday, 4 September, 2024 at 7:07 PM Count : 72

গাজীপুরসাভারের শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন দাবিতে চলমান বিক্ষোভে অন্তত ৬০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণার খবর পাওয়া গেছে। গার্মেন্টস কারখানা ছাড়াও ওষুধ এবং সিরামিক খাতের শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে  উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অফিসকক্ষে কয়েকজন উপদেষ্টার বৈঠকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে প্রয়োজনে বিশৃঙ্খলকারীদের গ্রেফতার কিংবা আটক করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

উপদেষ্টারা বলছেন, এই অসন্তোষের কোনো ‘গতি প্রকৃতি বোঝা যাচ্ছে না’। ভাঙচুরের পেছনে ‘ভাড়াটে’ ও ‘টোকাইরা’ও দায়ী। ৫০ জন রাস্তায় বসে পড়লে পাঁচ লাখ মানুষের অসুবিধা হবে। কাজেই তাদের সরাতে যদি বলপ্রয়োগ করতে হয়, লাঠিপেটা করতে হয়, জলকামান ব্যবহার করতে হলে সরকার সেটা করবে।

শ্রমিক বিক্ষোভে একের পর এক শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়া, নিরাপত্তা চেয়ে ব্যবসায়ীদের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সচিবালয়ে বৈঠক করেন ৬ উপদেষ্টা। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এলজিআরডি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বৈঠক শেষে এলজিআরডি উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, শিল্পাঞ্চল এলাকায় শ্রমিক আন্দোলনের নামে যারা বিশৃঙ্খলা করছেন, তারা শ্রমিক নন, বহিরাগত। আমাদের কথা হচ্ছে প্রকৃত শ্রমিক যারা, তারা অন্তত নিজের বাড়ি পোড়াবে না। শ্রমিকরাই বলেছেন, প্রকৃত শ্রমিকরা এ ধরনের কোনও বিশৃঙ্খলা করছেন না। কারণ এটা তাদের জীবিকা। কারখানা, শ্রমিক ও দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে গেলে কিছু সংখ্যক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, স্থানীয় কারখানা নষ্ট হয়ে যাবে, তাহলে কার লাভ হবে? কাজেই শ্রমিকরা কোনো বিশৃঙ্খলা করছেন না। যারা করছেন, তাদের অধিকাংশই বহিরাগত। তাদের কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সে কারণে আমাদের একটু কঠিন হতে হবে। উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা মনে রেখেছি, সরকার কোনো সময় তার নাগরিকের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করবে না, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, কারখানা, শ্রমিক ও দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে গেলে কিছু সংখ্যকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সে ব্যাপারে আমাদের আলোচনা হয়েছে।’

বৈঠক শেষে শ্রম ও কর্মসংস্থার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, পোশাক শিল্পে ঝুট ব্যবসায় এখনও আওয়ামী লীগের ‘প্রভাবশালীরা’ রয়ে গেছেন এবং বিএনপির লোকেরাও এখানে দখল করতে আসছেন। তিনি বিএনপিকে তাদের দলের লোকদের ‘নিবৃত্ত করার’ অনুরোধ জানিয়ে আওয়ামী লীগের লোকদেরকে কঠোর হাতে দমন করার বার্তা দেন।

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, শ্রমিকদের কিছু দাবি আছে, যেগুলো দীর্ঘমেয়াদি। যেমন বেতন বাড়ানো, শ্রম আইন সংশোধন। এগুলোতো একদিনে বাস্তবায়ন করা যাবে না। তারপরও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, তারা তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।

তিনি বলেন, এ আন্দোলনে শ্রমিকদের দেখা যাচ্ছে না, টাকা দিয়ে যাদের এসব আন্দোলনে নিয়ে আসা হয়; সেসব টোকাইদের দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের লোকেরা যেসব সিন্ডিকেট চালাতো, তারা সেগুলো ছেড়ে চলে গেছে। এখন যারা দখলের চেষ্টা করছে এবং বহিরাগত যারা শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বলেন, শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে আজকে থেকে অ্যাকশন শুরু হবে। সেখানে ক্ষতি হয় এমন কোনো অ্যাকশন পুলিশ নেবে না। রাস্তাগুলো খালি করার জন্য যথাযথ অ্যাকশন নেওয়া হবে। যারা ইন্ধন দিচ্ছে তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে। একইসঙ্গে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিগুলো নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে আলোচনা করা হবে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে যে তথ্য রয়েছে, সেটার ভিত্তিতে ইন্ধনদাতাদের গ্রেফতার করা হবে। সেখানে যে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়েছে, সেটার জন্য পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।

তিনি বলেন, শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে আমরা মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষের সঙ্গে একাধিক সভা করেছি। শিল্প উপদেষ্টাও কথা বলছেন। শ্রমিক নেতাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, এখন যে আন্দোলনগুলো হচ্ছে, শ্রমিক নেতারা এই আন্দোলনের প্রকৃতিটা নিজেরাও বুঝে উঠতে পারছেন না। কারণ, এখানে কোনো নির্দিষ্ট দাবি উঠে আসছে না। কোনো নির্দিষ্ট দফা পাওয়া যাচ্ছে না।

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, যারা সাধারণত শ্রমিক আন্দোলনগুলো করে থাকেন, তারাও সেখানে সেভাবে সক্রিয় নেই। বহিরাগত লোকজনের আধিক্য দেখা যাচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় মালিকপক্ষ বেতন দিতে দেরি করছেন, এজন্য আন্দোলন হচ্ছে। কয়েকটি স্পেসিফিক ফ্যাক্টরি আছে সেখানে মালিকপক্ষ পালিয়ে গেছেন। সেখানে কিছুটা অসন্তোষ হয়েছে। সেগুলো আমরা অ্যাড্রেস করছি, সেগুলোর জন্য সরকার সফ্ট লোন ঘোষণা দিয়েছে। সেটার পরিধি আরও বৃদ্ধি করা হবে। বেকার যুব সংঘ নামে যারা কখনও শ্রম এরিয়ার মধ্যে আন্দোলন করেনি, এমন সব জায়গায় গাড়ি ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটেছে।

তিনি বলেন, শ্রমিকনেতারাই তাকে বললেন যে, তারা সেখানে হেঁটে এসেছেন এবং তারা দেখেছেন যে হেলমেট ও হাফপ্যান্ট পরা যারা টোকাই, বিভিন্ন প্রোগ্রামের জন্য টাকা দিয়ে যাদের ভাড়া করা হয়, তাদেরকে সেখানে দেখা গেছে। শ্রম উপদেষ্টা বলেন, স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগও আছে কিছু জায়গায়। কিছু স্থানীয় বিএনপি নেতাও রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হচ্ছে তারা যাতে তাদেরকে নিভৃত রাখেন।

এসআর

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,