সাভার-আশুলিয়ায় সেনাবাহিনী-পুলিশের যৌথ অভিযান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক
Published : Tuesday, 3 September, 2024 at 7:18 PM Count : 100
শিল্পাঞ্চল সাভার-আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ ও অস্থিরতা ঠেকাতে যৌথ অভিযান শুরু করেছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। তবে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি এবং কোনো শ্রমিক অসন্তোষেরও খবর পাওয়া যায়নি। বেশ কয়েকটি কারখানায় পুনরায় কাজ শুরু হয়েছে এবং কিছু কারখানা নতুন করে বন্ধ ঘোষনা করায় শ্রমিকরা আসলেও আবার বাড়ি ফিরে গেছেন।
সরেজমিনে আশুলিয়ার শিমুলতলা এলাকার দি ড্রেস অ্যান্ড দি আইডিয়াস পোশাক কারখানার ফটকে বন্ধের নোটিশ টাঙানো দেখা গেছে। তবে সকাল থেকেই কারখানাটি খুলে দেয়ার দাবিতে অর্ধশতাধিক শ্রমিক কারখানার মূল ফটক ও বিপরীত পাশে একটি বিপণিবিতানের সামনে অবস্থান নেয়। এছাড়া ওই এলাকায় নাবা নিট কম্পোজিট লিমিটেড কারখানাটিও বন্ধ রয়েছে।
বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকেরা জানায়, গত শনিবার দি ড্রেস অ্যান্ড দি আইডিয়াস কারখানার চারজন নারী সুপারভাইজার ও একজন লাইনম্যানকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। পরদিন রবিবার থেকে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে সোমবার রাতে তারা জানতে পারেন, ট্রাকে করে কারখানা থেকে যন্ত্রপাতিসহ মালামাল সরিয়ে ফেলছে কর্তৃপক্ষ। তাই মঙ্গলবার ভোরেই তাঁরা কারখানার সামনে অবস্থান নেন। শ্রমিকেরা দাবি করেন কারখানা চালু হোক, আমাদের বেতন দেওয়ার সময় হয়েছে। কারখানা বন্ধ থাকলে বেতন কবে পাব জানি না।
এর আগে সকাল ৮ টার দিকে একদল শ্রমিক আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় একটি কারখানার সামনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। সে সময় সেনাবাহিনীর একটি টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের সাথে কথা বলে সড়ক ছেড়ে দিতে বলেন। পরে জন ভোগান্তি সৃষ্টি না করে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেয়ার পাশাপাশি শ্রমিকদের সড়কে অবস্থান না করা এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়, এমন কোনো কাজ না করতে অনুরোধ করেন।
এদিকে গত কয়েক দিনের অব্যাহত শ্রমিক আন্দোলনের কারনে পলাশবাড়ি এলাকার গিল্ডান বাংলাদেশ কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করায় আজকে কেউ কারখানায় আসেননি। জিরাবো এলাকার নাসা গ্রুপের কারখানায় শ্রমিকেরা উপস্থিত হলেও কাজ না করায় পরবর্তীতে কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে সোমবার ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) মূল ফটকে নবীনগর থেকে চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে চাকরি প্রার্থীরা দিনভর বিক্ষোভ করলেও মঙ্গলবার ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ডিইপিজেডের ভেতরের কারখানাগুলোতে কার্যক্রম চলছে নির্বিঘ্নে। ডিইপিজেডের পুরোনো ও নতুন জোনের সকল কারখানায় শান্তিপূর্ণভাবে কাজ চলছে।
আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, সাভার-আশুলিয়ায় প্রায় সকল কারখানার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। শ্রমিকেরা নির্দিষ্ট সময়ে কাজে যোগ দিয়েছেন। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকেরা কাজ না করায় ছুটি দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। বন্ধ থাকা এবং ছুটি দেওয়া কারখানার সংখ্যা আনুমানিক ৬০ টি হবে। তবে এর সঠিক তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া দি ড্রেস অ্যান্ড দি আইডিয়াস পোশাক কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে বিকেলে আলোচনা করে সমস্যা সমাধান করা হবে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া গত কয়েক দিনের বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ করে চলা বিক্ষোভের চিত্র দেখা যায়নি কোথাও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছেন সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা।
প্রসঙ্গতঃ গত কয়েকদিনের শ্রমিক আন্দোলনের কারণে তৈরি পোশাক শিল্প এবং অন্যান্য শিল্প খাতে অস্থিরতা দেখা দিলে সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নেতৃবৃন্দ বলেন, আমাদের শ্রমিকদের কোনো সমস্যা নেই। একটি স্বার্থান্বেষী মহল শিল্পাঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। শিল্প খাতে অস্থিরতার পেছনে একটি গোষ্ঠীর ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি করেন তারা।
ওএফ/এসআর