শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ৬ শিক্ষকের পদত্যাগের আল্টিমেটাম
Published : Wednesday, 14 August, 2024 at 6:00 PM Count : 299
‘দেশপ্রেমের শপথ নিন, দুর্নীতিকে বিদায় দিন’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ঢাকার সাভারে দলীয় প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার মান ধ্বংশকারী ৬ শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
বুধবার দুপুরে সাভার মডেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ২১ দফা দাবি আদায়ের এই সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় তারা বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টার মধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষকদের পদত্যাগ দাবি করে গণস্বাক্ষর দিয়েছেন। পরে তারা বিষয়টি জানিয়ে কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে শিক্ষার্থীরা জানায়, আপনারা জানেন সাভারের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিক্ষিত ও সুনাগরিক তৈরিতে কলেজের সুনাম ছিল। কিন্তু বিগত পনেরো বছরে আওয়ামী দোসরদের প্রতিহিংসা ও লোভের কারনে সেই সুনাম মুখ থুবড়ে পড়েছে। শিক্ষকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, লাঞ্ছিতকরণ, চাকুরীত্যাগে বাধ্য করার মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করেছে আওয়ামী ছাত্র সন্ত্রাসী, তাদের দুশ্চরিত্র নেতা এবং এই কলেজের কিছু লোভী, স্বার্থান্বেষী শিক্ষক। তাদের প্রত্যক্ষ মদদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির নামে অপরাজনীতিসহ শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত করেছে। শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট দলের ট্যাগ দিয়ে নানানসময়ে নানান নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকি এখন কলেজ নিয়ে নানাবিধ ষড়যন্ত্র করছে। এই অবস্থায় ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সকল অন্যায় ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা ও কলেজের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে ২১ দফা লিখিত দাবি পেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
দাবিগুলো হলো- আওয়ামী দখলদার সন্ত্রাসীদের দোসর ও কলেজের ভাবমূর্তি নষ্টকারী সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হয়রানিকারী ও কলেজ নিয়ে দুষ্কৃতিকারীদের প্রধান আলী হোসেনের পদত্যাগ। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের কার্যক্রমের মদদদাতা হোসাইন মোহাম্মদ রানার পদত্যাগ। সমকামীতার অভিযোগে বরখাস্তকৃত রমজান আলীকে কলেজ থেকে আজীবন বহিষ্কার। আলী রানা ও রমজান গং এর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের সহযোগী পাদার্থবিজ্ঞান ল্যাব টিচার আবু সাঈদ, ক্রীড়া শিক্ষক ফিরোজ আলম, দিলারা খানম (প্রভাষক বাংলা বিভাগ), ইসলামের ইতিহাসের শিক্ষক মুস্তাফিজুর রহমান, হিসাব বিজ্ঞানের আমিনুল ইসলামকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে এবং কলেজ কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হবে। অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে এবং কলেজ কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা প্রহণ করতে হবে। কলেজ ক্যাম্পাসে সকল প্রকার লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র বাজনীতি নিষিদ্ধ। মিথ্যা মামলার স্বীকার পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক হাসান মাহমুদ স্যারের সাময়িক বরখাস্ত প্রত্যাহার। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা মিথ্যা মামলার শিকার সকল শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের মামলা প্রত্যাহার। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ কলেজের ২৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী তানজির খান মুন্নার স্মরণে কলেজ লাইব্রেরীর নামকরণ। কলেজের স্বাস্থ্যসম্মত ক্যান্টিনের ব্যবস্থা। সাবেক ছাত্রলীগ পদধারী শিক্ষার্থীদের কলেজ থেকে আবাঞ্ছিত ঘোষণা। সাভার মডেল কলেজের ছাত্র শিক্ষক কল্যাণ তহবিল গঠন। শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের ক্লাব গঠন। কলেজের ল্যাব এবং লাইব্রেরির সংস্কার ও সমৃদ্ধ করতে হবে। সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে এলামনাই এসোসিয়েশন তৈরি। কুইজ প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা। জেনারেটর বাবস্থা করা। ক্রীড়া শিক্ষক হিসেবে ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা শিক্ষকের ব্যবস্থা করা। বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা। সকল ক্লাসে সাউন্ড সিসেস্টেমের ব্যবস্থা করা। ল্যাব ক্লাসের জন্য প্রজেক্টেরের বাবস্থা করা। কলেজে সকল প্রকার শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।
আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কলেজটির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী ও অন্যান্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষকদের প্রতিনিধি রমজান আলী বলেন, একটি চক্র উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাদেরকে অপসারন করতে চায়। এটি একটি এমপিওভুক্ত কলেজ। এখানে সকল প্রকার বিধি মেনেই আমরা শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করেছি। এছাড়া আমাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো মিথ্যা, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যমূলক। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
ওএফ/এসআর