ফেনী শহরের মহিপালে গত ০৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে অটোরিকশাচালক সবুজ নিহতের ঘটনায় সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীকে ১ নং আসামি করে ৬৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪০০ জনকে আসামি করে ফেনী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার নিহতের ভাই অটোরিকশাচালক মো. ইউসুফ বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রুহুল আমিন মামলা দায়েরের তথ্য জানান।
এ মামলায় ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট থেকে আটক হওয়া জেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক ফরিদ মানিক ওরফে পিএস মানিককে ৩৭ নং আসামি গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
নিহত মো. সবুজ লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার দক্ষিণ টুমচর গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। তিনি ফেনীর দক্ষিণ চাড়িপুর সার্কিট হাউজ রোড়ে ভাড়া থাকতেন এবং পেশায় একজন অটোরিকশাচালক ছিলেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ফেনী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, ফেনী পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, দাঁগনভূঞা উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগ সভাপতি দিদারুল কবির রতন, ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন মজুমদার, ছাগলনাইয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান করিম উল্যাহ বি.কম, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন, পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জায়লস্কর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মিলন, শর্শদী ইউপি চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঞা, ফাজিলপুর ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুল হক রিপন, পাঁচগাছিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক লিটন, ধলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার আহমেদ মুন্সী, লেমুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ উদ্দিন নাসিম, ধর্মপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সাকা, কাজিরবাগ ইউপি চেয়ারম্যান কাজী বুলবুল আহমেদ সোহাগ, কালিদহ ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ডালিম।
মোটবী ইউপি চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ, মাতুভূঞা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুন, সোনাগাজীর মঙ্গলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বাদল, পৌরসভার কাউন্সিলর জয়নাল আবদীন লিটন হাজারী, আশরাফুল আলম গীটার, লুৎফুর রহমান খোকন হাজারী, আমির হোসেন বাহার, কহিনুর আলম রানা, গোলাম মেহেদী আলম চৌধুরী রুবেল, হারুন উর রশিদ মজুমদার, বাহার উদ্দিন বাহার, আবুল কালাম, সাহাব উদ্দিন, সাবেক কাউন্সিলর মজিবুর রহমান ভূঞা, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল জলিল আদর, জেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জিয়াউল আলম মিষ্টার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফ উল্যাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল বাহার ফয়সাল, সহ-সম্পাদক হুমায়ুন কবীর, সদর উপজেলা সভাপতি নুরুল আবছারে আপন, পৌর যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পিটু, রেজাউল করিম নাদিম, সহ-সম্পাদক আবুল কালাম সোহেল।
পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম মোহন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি জিয়াউদ্দিন বাবলু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল আহমেদ তপু, সাধারণ সম্পাদক নুর করিম জাবেদ, যুগ্ম সম্পাদক রাকিব অর্ণব, পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত রাজু, সদর উপজেলার সাবেক সভাপতি ফখরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুস শুক্কুর মানিক, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল ফিরোজ, জেলা তাঁতী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর এলাহী সুমন, ধলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি নুরুল আলম বাদশা, পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ডালিম, স্থানীয় যুবলীগ নেতা সরোয়ার হোসেন রতন, হায়দার হোসেন পিংকু, শর্শদী ইউনিয়নের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম সম্রাট, মহিপালের ছাত্রলীগ নেতা নাহিয়ান চৌধুরীর নাম রয়েছে।
এজাহারে ইউসুফ উল্লেখ করেন, ০৪ অগাস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচিতে তার ভাই সবুজ অংশ নেয়। ওইদিন দুপুর ২টার দিকে ট্রাংক রোড থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গুলিবর্ষণ শুরু করলে সবুজ সার্কিট হাউজ রোডের দিকে চলে যায়। সেখানে স্বপন মিয়াজী, জানে আলম ও অর্নবের গুলিতে সবুজ লুটিয়ে পড়লে অপর আসামিরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে সবুজের মরদেহ ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে পুনরায় হামলার আশংকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার লাশ গ্রামের বাড়ি নিয়ে দাফন করা হয়।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রুহুল আমিন জানান, ইতিমধ্যে এই মামলায় পিএস মানিককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ০৪ অগাস্ট ফেনীর মহিপালে গুলিবর্ষণের ঘটনায় ১১ জন নিহত হয়। ওইদিনের ঘটনায় এটিই প্রথম মামলা।
-এটি/এমএ