বিপ্লবের ফল যেন কেউ 'হাইজ্যাক' করতে না পারে: জামায়াতের আমীর
Published : Wednesday, 7 August, 2024 at 6:41 PM Count : 129
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, 'আগামী দিনে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যাতে কোন দুর্বৃত্তপনা, স্বৈরাচারী ও জুলুমবাজ কোন সরকার না আসতে পারে সেজন্য এ প্রজন্মের যুবকদের এবং দেশবাসীকে সোচ্চার থাকতে হবে। যাতে এই বিপ্লবের ফল কেউ 'হাইজ্যাক' করতে না পারে। কোন মতলববাজ সে রাজনৈতিক বা অন্য কোন অপশক্তি হোক আমরা কাউকে 'এলাউ' করব না। আমরা প্রত্যেকেই পাহারাদার হিসেবে জাতির অধিকার কে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করব।'
বুধবার দুপুরে রংপুরের পীরগঞ্জে কোটা আন্দোলনে নিহত শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত ও তার পরিবারের সাথে দেখা করতে এসে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
জামায়াতের আমির বলেন, 'দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধের মহানায়ক হলেন আবু সাঈদ। নৈতিক ঋণ পরিশোধ করতে আমরা এখানে এসেছি। এই এলাকায় আল্লাহ এমন একটি গোলাপ ফুল আমাদেরকে দিয়েছিলেন যে গোটা জাতির ঘুম ভেঙ্গে দিয়েছে। শুধু বাংলাদেশের নয় সে এখন দুনিয়াবাসীর সম্পদ। আবু সাঈদ নিজেই একটা ইতিহাস। তার ইতিহাসের সাথে আর অন্য কারো ইতিহাসের জুড়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই। তবে যারা শহীদ হয়েছেন জীবন দিয়েছেন তারা প্রত্যেকটা এক একটা ইতিহাস। এবং যারা লড়াই করে গাজী হিসেবে বেঁচে আছে তারা ইতিহাস।'
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মোহাম্মদ ইউনূসের ব্যাপারে তিনি বলেন, এই বিপ্লব আমরা করিনি, এ বিপ্লব করেছে আমাদের যুব সমাজ। এরা আমাদের সন্তান, এরা আমাদের বিপ্লবের এই আন্দোলনে ভুল করে নাই। আমরা বিশ্বাস করি এরা এখনো ভুল করবে না। বঙ্গভবনে বলেছিলাম যে এই বিপ্লবের ফার্স্ট এন্ড লাস্ট স্টেক হোল্ডার হচ্ছে আমাদের যুব সমাজ। সুতরাং তাদের সাথে কথা বলে আগামীর দিকনির্দেশনা নিতে হবে। আমরা ধন্যবাদ জানাই রাষ্ট্রপতি সেটা করেছেন।
এর আগে সকাল ১০ টায় হেলিকপ্টারযোগে পীরগঞ্জের জাফরপাড়া বহুমুখী কামিল মাদ্রাসা মাঠে আসেন তিনি। পরে সেখানে একটি সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষে আবু সাঈদের বাড়িতে যান তিনি। সেখানে আবু সাঈদের কবর জিয়ারত শেষে তার পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
এ সময় পরিবারের হাতে নগদ এক লক্ষ টাকা এবং আজীবন তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, রংপুর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, মহানগর জামায়াতের আমির এটিএম আজম খান, সেক্রেটারি আবু ওবায়দুল্লাহ সালাফি, মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি গোলাম জাকারিয়া, সেক্রেটারি নুরুল হুদা সহ জামায়াত ও ছাত্রশিবির নেতৃবৃন্দ।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বুধবার রাতে বঙ্গবন্ধু চত্ত্বরের নাম পাল্টে শহীদ আবু সাঈদ চত্ত্বর নাম রাখে। এসময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান তৌফিক বলেন, ‘এই আন্দোলনে যারা আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা যেন করা হয়। অনেকেই পা হারিয়ে পঙ্গু হয়েছে। তাদের চাকরির যেন ব্যবস্থা করা হয়। তারা সবাই মেধাবী শিক্ষার্থী। এছাড়া যারা নিহত হয়েছেন তাদের যেন পূণর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়।’
কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী নুরে আলম সিদ্দিক বলেন, ‘আ.লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের তৈরী সন্ত্রাসীবাহিনী ছাত্রলীগ। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক। এছাড়া আমরা কিছু পুলিশ কর্মকর্তা-সদস্যকে চিহ্নিত করেছি যারা হাসিনার গোলাম। তাদের আমরা রংপুরে দেখতে চাইনা। তাদের যেন দ্রুত রংপুর থেকে বদলি করা হয়।’
এছাড়াও বুধবার রাতে গংগাচড়া শেখ হাসিনা ব্রীজের নাম পরিবর্তন করে শিক্ষার্থীরা শহীদ আবু সাঈদ সেতু রেখে দেয়। ব্রীজ ঘুড়ে দেখা যায় ব্রীজের উত্তর দিকে শহীদ আবু সাঈদ সেতু নামে একটি ব্যানার টাঙানো হয়েছে। অপরপ্রান্তে সেতুর দক্ষিণ দিকে নির্মিত স্বারক লিপিতে দেখা যায় শহীদ আবু সাঈদ সেতু লেখা। ব্রীজের সামনের দোকানদার কাশেম বলেন, ‘গতরাতে একদল শিক্ষার্থী এসে এই সেতুর নাম শহীদ আবু সাঈদ সেতু রেখেছে। তারা বলেছে দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আবু সাঈদ ভাইয়ের যে ত্যাগ তার কোন বিনিময় হয় না। আজ থেকে এই সেতুর নাম শহীদ আবু সাঈদ সেতু।’
এলওয়াই/এসআর